‘আমার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু আমার আম্মা’
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ অডিও জগতের বরপুত্র খ্যাত কণ্ঠশিল্পী আসিফ বন্ধু দিবস উপলক্ষে তাঁর ফেসবুক ও ফ্যানপেজে একটি স্ট্যাটাস দেন। পাঠকদের সুবিধার্থে আসিফের দেওয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো…
আমি ছোটবেলা থেকেই একটু পেটুক প্রকৃতির। সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে সবাই দুটো পাউরুটির পিসের সঙ্গে জেলী, ডিম অথবা সবজি প্রাথমিক বরাদ্দ পেতাম। ভোরে উঠে স্কুল যাওয়ার চিন্তায় আমার অটোমেটিক ক্ষুধা বেড়ে যেতো। ভাই বোনরা রেশনিংয়ে থাকলেও আমি এর আওতা মুক্ত ছিলাম। অন্তত এক পিস পাউরুটি হলেও বেশী বরাদ্দ থাকতো আমার জন্য।
বাসায় রুটিন সিষ্টেমে সব চলতো। আব্বা আমার মত বাউন্ডুলে ছিলেন। আম্মা আর বড় আপা পুরো ম্যানেজমেন্ট সুচারু ভাবে পরিচালনা করতেন। আমি কখনোই রেশনিংয়ের ধার ধারতাম না। আম্মা সবসময় আমাকে ফেভার করতেন। সাত ভাইবোনের মধ্যে আমি ষষ্ঠ। পারিবারের সব নিয়ম,পরম্পরা আমার কারনেই ভেঙ্গেছে। ক্ষুধা লাগলে আইন কি !!! এটাই ছিলো আমার আদর্শের মূল প্রতিপাদ্য । এখনো আমি ব্যাপক খাই। আগে পেটুক হিসেবে খেতাম,এখন নিয়ম মেনে আমার সময় মত খওয়া-দাওয়া চলে।
আম্মা কঠিন নিয়মের মধ্যে আমাদের বড় করেছেন। ওনার রুটিনটাই ছিলো পরিবারের সংবিধান। সবাই মেনে চলতে বাধ্য,কিন্তু আম্মা নিজের রুটিন ভাঙ্গতে বাধ্য হতেন আমার জন্য। খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকলে পেট খারাপ হয়-এই ফর্মূলায় আমি সব খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকতাম । পরিবারের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হলেও আমাকে এক্সট্রা খাবার দিতেই হত।
বড় হয়েছি,মাঝে মধ্যে দুপুরে রাতে বাসায় খেতাম না। আম্মা ঠিকই বসে থাকতেন খাবার নিয়ে । গায়ক হয়েছি,আড্ডা বেড়েছে, চারদিকের মানুষজন কিংবা বন্ধুরা আমার খাবার ব্যবস্থাপনা নিয়ে এখনো ব্যস্ত। কুমিল্লা গেলে বাইরের খাবার- বিশেষ করে ডায়নার কলিজা ভুনা, পরোটা কিংবা আল আমীন বারবী’র গরু পরোটা খেয়েই চলে। অমৃত সব খাবার। আর নিজের হোটেলের থাই স্যূপ ভেজিটেবল তো রয়েছেই।
এতো আনন্দের মধ্যেও আম্মা বসে থাকতেন খাবার নিয়ে। হৈ চৈ ছিলোনা,কিন্তু অভিমান করতেন । আড্ডা এবং আম্মা দুটো একসাথে ম্যানেজ করা হয়ে উঠতোনা। পেটুক ছেলের জন্য তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খাবার নিয়েই অপেক্ষা করেছেন। কোন একবেলা বাসায় খেলেই আম্মা খুশী হতেন। আমার আর কোন ভাই বোন এতো সুবিধা ভোগ করেনি।
আজ বিশ্ব অফিসিয়াল বন্ধু দিবস । আমার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু আমার আম্মা । মর্ত্য থেকে স্বর্গে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা পাঠালাম আমার মেয়েটাকে- Happy Friendship Day রুকি ( হুসনে আরা রোকেয়া সিদ্দিকী- বিবাহের পর-রোকেয়া আকবর )। এখন কুমিল্লা গেলে নিয়মিত বাসায়ই খাই। কালের পরিক্রমায় সেজো ভাবী বসে থাকেন,তারপরও কেমন যেনো- একা একা লাগে।