কানাইঘাটে কিশোরীকে গণধর্ষনের পর হত্যা

Gang Rape Rapeসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ কানাইঘাটে এক মৎস্যজীবি পরিবারের কিশোরীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। গত রোববার রক্তাক্ত ও অর্ধঝুলন্ত অবস্থায় নারায়নপুরে গ্রামে নিজ বাড়ির পরিত্যক্ত বাথরুম থেকে কিশোরীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার এক সপ্তাহ পর কানইঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা মো. রিয়াজ আলী।
স্থানীয়রা জানান, মৎস্যজীবী মো. রিয়াজ আলীর চার সন্তানের মধ্যে ফরিদা বেগম সবার বড়। ফরিদার মামা মারা গেলে জানাজায় অংশ নিতে ২৪ জুলাই মা রেনু বেগম ও বাবা রিয়াজ জকিগঞ্জের শাহবাগে যান। বাড়িতে রেখে যান ফরিদাসহ তিন সন্তানকে।
ওই রাতে চাচাতো ভাই সম্পর্কীয় আজির উদ্দিন ফরিদাকে ডেকে নিয়ে যায়। তখন বাড়িতে ছিল ফরিদার ছোট দুই ভাই ও এক বোন। তারা ফরিদার জন্য অপেক্ষা করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে। ভোরে উঠে দেখে ফরিদা রাতে ফেরেনি। আত্মীয়স্বজন ও সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান মেলেনি। দু’দিন পর ২৬ জুলাই পাশের বাড়ির আনিছুল হক চৌধুরীর পরিত্যক্ত টয়লেটে ফরিদা বেগমের রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত লাশ অর্ধঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান স্থানীয়রা।
পরে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল আউয়াল চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে পাঠান। ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় ফরিদার লাশ দাফন করা হয়।
এদিকে ওই তরুণীকে যখন খোঁজাখুঁজি চলছিল তখন তার ওই সম্পর্কের চাচাতো ভাই পানিছড়া বড়খেওড় গ্রামের আজির উদ্দিন, তার বাবা মন্তাজ আলী মন্তাই ও দুলাভাই শরিফ উদ্দিন ঘরে তালা দিয়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। শুক্রবারও তাদের ঘরে তালা ঝুলছিল।
এদিকে ৩১ জুলাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিলেটের পুলিশ সুপার নুরে আলম মীনা। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ঝুলন্ত ছবি, স্বজনদের বক্তব্য, প্রাপ্ত তথ্যমতে অপহরণ, ধর্ষণের পর ফরিদাকে খুন করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফরিদার লাশের গোসল সম্পন্নকারী আমিনা বেগম, হাজিরা বেগম, আলছু বেগম জানান, লাশের বিভিন্ন স্থানে আঁচড় ও ক্ষত ছিল। এসব চিহ্ন জোরপূর্বক ধর্ষণ ও হত্যার আলামত মনে হয়েছে।
লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডা. ফয়াজ আহমদ বলেন, দরিদ্র ঘরের মেয়ে ফরিদাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এমন বর্বর ঘটনার জন্য দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
শুক্রবার রাতে কানাইঘাট থানার ওসি আবদুল আউয়াল চৌধুরী জানান, অপহরণ, গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহত ফরিদার বাবা মো. রিয়াজ আলী বাদী হয়ে দু’জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলা নং ২৬। এতে আসামি করা হয়েছে পানিছড়া বড়খেওড় গ্রামের মন্তাজ আলীর ছেলে আজির উদ্দিন ও আবদুস শুকুরের ছেলে শরিফ উদ্দিনকে। বর্তমানে তারা পরিবার-পরিজনসহ পলাতক রয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তবে ঘটনার এক সপ্তাহ পর মামলা নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় লোকজন। এতো মর্মান্তিক একটি ঘটনায় পুলিশের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।