দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের জের : বালাগঞ্জের সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ঢাকায় মামলা

Police Transferসুরমা টাইমস ডেস্কঃ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক যুগান্তরের বালাগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি, বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সাংবাদিক শামীম আহমদকে মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। বালাগঞ্জ থানার সাবেক দুর্নীতিবাজ ওসি (বর্তমানে মৌলবীবাজার সদর মডেল থানায় কর্মরত) আব্দুস ছালেকের প্রত্যক্ষ মদদে ঢাকার চক বাজার থানার তিনটি রাজনৈতিক মামলায় সাংবাদিক শামীম আহমদের নাম জড়ানো হয়েছে। আর এসব মামলার বাদী হিসেবে রয়েছে পুলিশ বিভাগেরই কয়েকজন কর্মকর্তা । ২০১৩ সালের শেষের দিকে বিষ্ফোরক আইনে এই মামলা গুলো রুজু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ওসি ছালেক বিগত দিনে বালাগঞ্জে থাকাকালীন সময়ে সাংবাদিক শামীম আহমদকে জড়িয়ে বালাগঞ্জ থানায় দু’টি মামলা দিলেও এসব মামলা থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হন তিনি।
পরবর্তীতে ওসি সহকর্মীদের (ব্যাচ ম্যান) সহযোগীতায় রাজধানীর চক বাজার থানার রাজনৈতিক মামলায় সাংবাদিক শামীম আহমদের নাম জড়িয়ে দেন । হয়রানীমুলক মামলার স্বীকার সাংবাদিক শামীম আহমদ এখন চরম নিরাপত্তহীনতায় বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পুলিশ বিভাগের এই গুনধর কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সাংবাদিক শামীম এখন ওসি ছালেকের ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকারে পরিনত হয়েছেন।
বার-বার মিথ্যে হয়রানীমুলক মামলা দায়ের করে পুলিশ প্রশাসনে এক অনন্য নজির স্থাপন করছেন ওসি ছালেক। দুর্ণীতির বিরুদ্ধে লেখনীর কারণে একজন নিরীহ সাংবাদিককে বার-বার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করায় সাংবাদিক মহলসহ সর্বস্তরের সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে ওসি ছালেককে অনতিবিলম্বে চাকরিচ্যুত করার দাবী উঠেছে।
সাংবাদিক শামীম আহমদ বলেন, ২০১৩ সালে বালাগঞ্জ থানার বেপরোয়া ওসি ছালেকের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী মানুষদের অভিযোগের অন্ত ছিলনা। তাই ভুক্তভোগীদের সু-নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন ঘটনার ফিরিস্থি উল্লেখ করে আমি সংবাদ পরিবেশন করেছিলাম। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর ওসি ফোনে আমাকে জেল খাটানোর হুমকী দিয়ে বলেছিলেন, “দেশের বিভিন্ন থানায় আমার নামে বিভিন্ন ধরনের মামলা দিয়ে আমাকে জেল খাটাবেন”। ওসি আমাকে আরও বলেছিলেন “তুমি কত বড় সাংবাদিক হয়েছে, আমি তোমাকে  দেখে নেব”।
বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক এসএম সুহেল বলেন, পত্রিকা কর্তৃপক্ষের এসাইনমেন্ট অনুযায়ী বালাগঞ্জ থানায় আগত ভূক্তভোগী সেবা প্রার্থীদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিক শামীম আহমদ সংবাদ তৈরী করে পত্রিকায় পাঠান।  ২০১৩ সালের ১০-১১ জুলাই ‘দৈনিক সিলেট সুরমা’ পত্রিকায় “বালাগঞ্জ থানায় চলছে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি, অফিসার থেকে ঝাড়–দার ইচ্ছেমত আদায় করছেন টাকা” শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ধারাবাহিক প্রকাশিত হয়। একই বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক সহ ‘সাপ্তাহিক সিলেট প্রান্ত’ প্রত্রিকার জুলাই-আগষ্ট সংখ্যায় সংবাদ পরিবেশন করা হয়। ১০ জুলাই পত্রিকায় ১ম পর্ব সংবাদ প্রকাশের পর বালাগঞ্জ থানার ওসি আব্দুছ ছালেক থানার ঝাড়–দার করিমকে দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সাংবাদিক শামীম আহমদকে বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর হুমকী দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ১২ জুলাই ওসি থানার ঝাড়–দার করিমকে দিয়ে সাংবাদিক শামীমের  বিরুদ্ধে থানায় একটি জিডি করেন। যার ফলশ্রæতিতে এই ওসি সাংবাদিক শামীমকে মিথ্যে মামলায় জড়ানোর নানা অপচেষ্টায় ব্যস্ত থাকেন। পরবর্তীতে ওসির ইন্ধনে শামীমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের  হয়রানীমুলক মামলা করা হয়, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক শামীম আহমদ সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথেও সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বালাগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি ও বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া তিনি একজন নাট্য কর্মী ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। সত্য এবং ন্যায়ের পক্ষে আপোষহীন এই সাংবাদিককে বার-বার মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানী করা হবে, তা মেনে নেয়া যায় না। অনতিবিলম্বে এই হয়রানীমুলক মামলা গুলো প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি বালাগঞ্জ বাসীর পক্ষ থেকে দুর্নীতিবাজ ওসি ছালেককে চাকরীচ্যুৎ করারও দাবী জানান। বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান লেচু বলেন, সাংবাদিক শামীম বিগত দিনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে এখনও তার দায়িত্বশীল পদ-পদবী বহাল রয়েছে”। তাকে রাজনৈতিক হয়রানীমুলক মামলায় জড়ানোর বিষয়টি দু:খজনক। উল্লেখ্য, ওসি ছালেক (বিপিনং-৭৫০০০৯৪৮৮৩) ২০১১ সালের শেষের দিকে তদন্ত ওসি হিসেবে বালাগঞ্জ থানায় যোগদান করেন। ২০১২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে জেষ্টতা লঙ্গনের  মাধ্যমে তাকে ওসির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। বিগত দিনে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট ওসির বিরুদ্ধে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাব সহ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারনে এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই কিংবা কোন ধরনের তদন্ত করা হয়নী। ওসিকে বালাগঞ্জ থেকে অন্যত্র বদলী করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নী।
এদিকে সাংবাদিক শামীম আহমদকে একাধিক মামলায় জড়ানোর কারণে সর্বস্তরের সাংবাদিক মহল গভীর উদ্দেগ প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকরা দেশ-বিদেশের গুরুত্বপুর্ন ও ইতিবাচক ও নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করে থাকেন। সর্বোপরি বিভিন্ন ব্যক্তি গোষ্টি ও দলের অন্যায়-অবিচারের সচিত্র বিবরন প্রকাশ করে দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রায় অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছেন। গনতন্ত্রের পক্ষের একটি মজবুত হাতিয়ার হলো সংবাদপত্র বা সংবাদ মাধ্যম। আর এসব সংবাদ মাধ্যমে পেশাদার সৎ ও যোগ্য সাংবাদিকরা জীবনের ঝুকি নিয়ে নি:স্বার্থ ভাবে শক্ত হাতে কলম চালাতে গিয়ে অনেকেই স্বার্থন্বেসী মহলের রোষানলে পড়ে এভাবে মামলা-হামলার স্বীকার হবেন তা কোন অবস্থাই মেনে নেয়া যায় না। সাংবাদিক মহল এবং এলাকাবাসীর  আন্দোলনের চাপে ওসিকে ২০১৪ সালের প্রথম দিকে মোলবীবাজার সদর মডেল থানায় বদলী করা হয়।
পুর্ব কথা: ২০১৩ সাল। বালাগঞ্জে তখন আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি। থানায় ওসির দায়িত্বে ছিলেন আব্দুছ ছালেক। ওসির লাগামহীন ঘুস-দুর্নীতি, চাদাবাজি, অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতায় সাধারন মানুষ ছিল অতিষ্ট। তখন বালাগঞ্জ পুলিশ প্রসাশনকে নিয়ে সাংবাদিক শামীম আহমদ ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এই সাংবাদে উঠে আসে ওসি আব্দুছ ছালেকের সাধারণ মানুষকে হয়রানী করার লোমহর্ষক কাহিনী। ঘুষ বানিজ্যের অভিনব এবং নজির বিহীন সকল পন্থা। উম্মুক্ত হয়ে যায় ওসি ছালেকের ‘মুখোশ’। সিলেটে পোষ্টিং পাওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় তদবির বানিজ্যসহ নানা কাহিনী প্রকাশ পাওয়ায় পুলিশ প্রশাসনের ভিতকে নাড়িয়ে দেয়। এতে করে ওসি ছালেক প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন। এরই ধারাবাহিকতায় সাংবাদিক শামীমের বিরুদ্ধে তার থানার চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীকে দিয়ে (ঝাড়–দার) ভিত্তিহীন একটি জিডি এন্টি করেন। এরপর ওসি ছালেক নামেন তার মূল মিশনে। থানার ঝাড়–দারের এক আত্মীয়কে দিয়ে ৩০৭ ও ৩২৬ ধারাসহ মোট নয়টি ধারা অর্ন্তভূক্ত করে সম্পুর্ন সাজানো ঘটনা দিয়ে একটি মিথ্যে মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলায় সাংবাদিক শামীম আহমদকে প্রধান আসামী করে তার পরিবারের আরো ৫ সদস্যকে জড়ানো হয়েছিল। ঝাড়–দার দিয়ে করানো জিডি (পরবর্তীতে পুর্নাঙ্গ মামলা হিসেবে অগ্রগতি) এবং ঝাড়–দারের আত্মীয়কে দিয়ে করানো মামলা দুটোই সাংবাদিক শামীম আহমদের পক্ষে রায় হয়েছিল। বিগত দিনে বালাগঞ্জ থানায় ওসি আব্দুছ ছালেক যোগদান করার পর থানাকে তিনি অনিয়মের “স্বর্গরাজ্য” হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। থানার অন্যান্য সকল পুলিশ অফিসারদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘোষ বানিজ্যে করতে সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সাংবাদিক শামীমের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে মামলা করায় ওসির শাস্তির দাবীতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল পুরো বালাগঞ্জ।