বিশ্বনাথে প্রবাসীর স্ত্রী সুজিনা হত্যা : সন্দেহের তীর প্রথম স্ত্রীর দিকে
৪ জনকে আসামী করে মামলা দৌলতপুর গ্রামবাসির ৪ সদস্য কমিটি গঠন
তজম্মুল আলী রাজু, বিশ্বনাথঃ সিলেটের বিশ্বনাথে গত রোববার যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুরাদ আহমদের স্ত্রী সুজিনা বেগম কে হত্যা করা হয়। হত্যার কু-এখনও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। দুই দিন পেরিয়ে গেলেও কোন হদিস পাওয়া যায়নি। হত্যার সঙ্গে জড়িত কারা। এনিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্ঠি হয়েছে। যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুরাদ আহমদের প্রথম স্ত্রী সাবিনাকে না জানিয়ে সুজিনাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন মুরাদ আহমদ। ফলে সন্ধ্যের তীর প্রথম স্ত্রী সাবিনা বেগমের দিকেই রয়েছে অনেকের। সাবিনা বর্তমানে যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। কিছুদিন পূর্বে তিনি দেশে এসেছিলেন। সুজিনা হত্যার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার নিহতের মামা আব্দুন নূর বাদি হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরো ৪ জনকে ৪/৫ জন অজ্ঞাতনামা রেখে হত্যা মামলা করেন। যার নং ১৪। তারিখ ২১ জুলাই।
এদিকে সুজিনার গ্রামের বাড়ি দৌলতপুরে সুষ্ট তদন্ত করার জন্য গতকাল মঙ্গলবার দৌলতপুর গ্রামবাসির উদ্যোগে জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকের পূর্বে এলাকাবাসীকে মাইকিং করে বৈঠকের দাওয়াত দেয়া হয়। বৈঠকে পুলিশকে সহযোহিতা করার জন্য ৪ সদস্য বিশিষ্ঠ একটি কমিটি হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন মো. দিলাওর হোসেন, মো. তাহির আলী, আজম আলী, তাহিদ মিয়া।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দৌলতপুর গ্রামের প্রবীণ মুরব্বী আবুল খয়ের চৌধুরী, মখলিছ মিয়া, নূরুজ খান, জমির আলী, ফিরোজ খান, সিতাব আলী, আহমদ খান, আকবর আলী মিলন, জিতু মিয়া, হাফিজ রফিক মিয়া, মফজ্জুল খান, মানিক মিয়া, আরিফ উল্লাহ সিতাব, মতছির আলী, রুহেল মিয়া কালু, রাসেল আহমদ, শানুর আলী, রজব আলী, আকবর আলী, জবর আলী, আফতাব আলী, মনাফ মিয়া, রব্বনী, পংকি মিয়া, জামাল উদ্দিন, শুকুর আলী, আবুল কালাম নিহতের বড় ভাই নুরউদ্দিনসহ এলাকার বিপুল সংখ্যক গ্রামের লোকজন।
এ ব্যাপারে মুরাদের ভাই নূরুল আমিন সুজা সাংবাদিকদের বলেন, ১৪ বছর আগে মুরাদ বিয়ে করেন সাবিনাকে। এরপর তাদের ঘরে তিনটি সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনমালিন্য সৃষ্ঠি হলে প্রায় ৫ বছর ধরে তারা পৃথকভাবে বসবাস করে আসছেন। প্রায় সাড়ে তিন মাস পূর্বে আমার ভাই দেশে এসে সুজিনাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ভাই লন্ডন চলে যাওয়ার পর দেশে আসেন তার আগের স্ত্রী সাবিনা। দেশে এসে সাবিনা, সুজিনার সাথে বিবাহ ভেঙ্গে দিতে আমাদেরকে চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু আমরা এতে রাজি হয়নি। তিনি বলেন, প্রায় ৫বছর ধরে সাবিনার সাথে আমার ভাই (মুরাদের) কোন যোগাযোগ নেই। আমার ভাবীর হত্যাকারীদের চিহিৃত করে সুষ্ট বিচারের জন্য জোরদাবী জানান।
জানা গেছে, গত ৩ মাস পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের সিরামিশি (সাতাল) গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসীর মুরাদ আহমদের সঙ্গে সুজিনা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সুজিনা পিত্রালয়ে মায়ের সঙ্গে বসবাস করে আসছেন। গত রোববার রাত আনুমানিক ৮টায় অজ্ঞাতনামা ৪জন লোক আত্মীয় পরিচয়ে দিয়ে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। এসময় অতিথিদের হাতে ছিল একটি মিষ্টির বক্স। সুজিনার মা রেজিয়া বেগম এসময় তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা জানান তারা (সুজিনা) স্বামীর পূর্ব পরিচিত। এরপর তারা ঘরে প্রবেশ করে এবং রেজিয়া বেগম তাদের জন্য নাস্তা তৈরি করছিলেন। ওই সময় দুস্কৃতিকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রাজিয়া বেগম ও তার মেয়ে সুজিনা বেগমকে কুপিয়ে আহত করে পালিয়ে যায়। এসময় সুজিনার ভাই জহিরউদ্দিন (১২) ঘর থেকে বের হয়ে চিৎকার শুরু করলে আশপাশ বাড়ির লোকজন ছুটে এসে তাদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই সুজিনা বেগমের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ওই রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে থানা পুলিশ।
পুলিশ এখনও ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে হর্ন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশের বিশেষ টিম। সুজিনা হত্যার পর ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার রাতে সুজিনা বেগমকে মামার বাড়ি বাহাড়া দুভাগ গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ মো. রফিকুল হোসেন বলেন, সুজিনা হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামী গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গত রোববার আত্বীয় সেজে প্রবাসীর স্ত্রী সুজিনা বেগমের বাপের বাড়ি দৌলতপুর গ্রামের বাড়ির বসতঘরে এসে দারালো অস্ত্র দিয়ে কুপায় সুজিনা ও মা রেজিয়া বেগম কে। হাসপাতালে নেয়ার পর সুজিনা মারা যায়। সুজিনা বেগমের বিয়ে হয় জগন্নাথপুর গ্রামের শ্রীরামসি সাতাল গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুরাদ আহমদের সাথে।