চরম জ্ঞানপাপীর প্রতিকৃতি

বক্তব্য রাখছেন আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। পাশে রাষ্ট্রদূত ড. এ কে মোমেন। ছবি- এনা।
বক্তব্য রাখছেন আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। পাশে রাষ্ট্রদূত ড. এ কে মোমেন। ছবি- এনা।

মানুষ স্ব-বৈশিষ্ট্যকে আড়াল রাখতে যত নিঁখুত অভিনয় করুক না কেন তার আসল চরিত্র একদিন প্রকাশ পাবেই । মূলত কৃত্রিম চেষ্টায় কোন ব্যক্তি তার ভেতরের রূপকে গোপন রাখতে পারে না । অনেক চেষ্টা করেও যেমন পারেনি আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী তেমনি ত্রুটিপূর্ণ অভিনয় করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে আব্দুল গাফফার চৌধুরীও । স্রষ্টা নিজেই প্রকাশ করে দিয়েছেন আসল সত্য । সাধু সেজে মানুষ ও সমাজের সাথে প্রতারণা করতে করতে যখন সীমা অতিক্রম হয়ে যায় তখন আপনা আপনিই ঘৃণিত রুপ প্রকাশ পেয়ে বসে । এমনটাই হয়েছে সময়ের সবচেয়ে সমালোচিত ও ঘৃণিত আব্দুল গাফফার চৌধুরীর ক্ষেত্রে । মাত্র সপ্তাহকাল পূর্বেও যে লোকটি গোটা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে গ্রহনযোগ্য ও জনপ্রিয় ছিল আজ তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে বিকৃত ভাবে এবং ঘৃণার সবটুকু শক্তি দিয়ে । আবারও নতুনভাবে প্রমাণিত হলো মুখোশের সাহায্যে চিরকাল আসল চরিত্র লুকিয়ে রেখে মানুষকে ঠকানো যায়না । যে আমেরিকান মুসলিম জনগোষ্ঠী তাকে শ্রদ্ধা-ভাক্তিপূর্ণসহকারে আমন্ত্রন করে তাদের দেশে আলোচক হিসেবে নিয়েছিলো সেই তারাই তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে প্রতিহতের পতিজ্ঞা করেছে । সময়ের ব্যবধান মাত্র একটি সন্ধ্যার । অবশ্য সে সন্ধ্যাটিতেও তিনি সমালোচনা মুক্ত থাকতে পারেন নি । গত ৩রা জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত’ শীর্ষক সেমিনারে প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে আল্লাহর গুনবাচক নামসমূহ, নবী মুহাম্মদ (সাঃ), আরবী ভাষা ও পর্দাপ্রথা নিয়ে জঘন্য মিথ্যাচার ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত বক্তৃতা প্রদানের ক্ষনকাল পরেই তার উপস্থিতিতে পরবর্তী বক্তারা আব্দুল গাফফার চোধুরীর বক্তৃতাকে চরম দুঃখজনক অভিহিত করেছেন । আল্লাহর গুনবাচক নাম ও ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয়বালী সম্পর্কে তিনি যে মিথ্যাচারীতা করেছেন তা চরম মূর্খতার শামিল এবং জ্ঞানপাপীতার পরিণতি । সময়ের আরেকজন সমালোচিত আব্দুল লতিফ সিদ্দীকির পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে তিনিও আব্দুল লতিফ সিদ্দীকির সহযাত্রী হলেন । কেউ যখন স্রষ্টার গুনকীর্তন ত্যাগ করে মানুষের গুনকীর্তন শুরু করে তখন তাদের পরিণতি কি হয় তার উজ্বাল দৃষ্টান্ত আব্দুল কলামিষ্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী । তার মতে, রবীন্দ্রনাথ ছিলো বলেই বাঙালীর অস্তিত্ব টিকে আছে । আমি বলব, এমনটা ভাবা চরম মূর্খতার শামিল কেননা বাঙালী আছে বলেই রবীন্দ্রনাথের মূল্য আছে । একজন নামধারী মুসলাম হিসেবে ইসলাম সম্পর্কে তিনি যে মিথ্যাচার করেছেন এমন মিথ্যাচার অতীতে কোন কাফেরও করেছে কিনা সন্দেহ । ইসলাম সম্পর্কে আব্দুল লতিফ সিদ্দীকির মনগড়া পূর্বোক্তি সমর্থন করতে গত শুক্রবার বিকেলে নিউ শহরে বসে আব্দুল গাফফার চৌধুরী যেমন এগিয়ে এসেছিলেন তেমনি তাকে সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন আরেক জ্ঞানপাপী তসলিমা নাসরিণ । অবস্থা দেখে মনে হয়, ‘চোরের স্বাক্ষী মাতাল’
বাংলাদেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আব্দুল গাফফার চৌধুরী কেন আল্লাহর গুনবাচক নামের মধ্যে ঢুকে পড়লেন তা নিয়েও রয়েছে রহস্য । তার মতে, আল্লাহর যে ৯৯টি গুনবাচক নাম রয়েছে তা নাকি কাফেরদের অবতারের নাম । মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার পূর্বে তার নামটিকে একটি ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন । তার নাম আব্দুল গাফফার চৌধুরী যার অর্থ পরম ক্ষমাশীলের ভৃত্য বা গোলাম । হয়তো তার ছোটবেলায় তাকে ভালোবেসে তার অভিভাবকরা এ নাম উপহার দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি বড় হয়ে যখন বুঝতে পারলেন তার নামটিও ইসলাম পূর্ব যুগের কাফেরদের অবতারের নাম থেকে সংকলিত তখন তিনি কেন তার নামটিকে পরিবর্তন করলেন না ? তবে কি তিনিও কাফেরদের অবতারের(তার মতে) নামে নাম রাখাকেই শ্রেয় বলে মনে করেছেন ? আল্লাহর ৯৯টি গুনবাচক নাম কাফেরদের অবতারের নাম থেকে আসেনি বরং এগুলো একান্তভাবেই আল্লহর বিশেষায়িত । অন্যদিকে আল্লাহর গুনবাচক নাম কাফেরদের অবতারের নাম থেকে ধার করা তো পরের কথা বরং ইতিহাস স্বাক্ষী দেয় কাফেররা আল্লাহ গুনবাচক নামকে বিকৃত করে তাদের দেবতাদের নাম রেখেছিল । কাফেররা আল্লাহর গুনবাচক আযীযুন নামকে বিকৃত করে ওজ্জা এবং আল্লাহ শব্দকে বিকৃত করে লাত রেখেছিলো । এ সম্পর্কে আব্দুল গাফফার চৌধুর তার বক্তৃতায় উদ্ধৃত কথাগুলোর সূত্র কোথায় পেলেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন কিন্তু মনে রাখা উচিত, ইতিহাস বানিয়ে বানিয়ে বলার বিষয় নয় বরং এটা অতীত থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে আহরণ করতে হয় । তার মতে, সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হোরায়রা এর নামের অর্থ যদি বিড়ালের বাপ হয় তবে আবু বকরের নামের অর্থ হবে বকরীর বাপ । ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে যাদের অতি সামান্যও জ্ঞান আছে তারাও এমন কথা বলতে পারে না । কেননা আবু হোরায়রা তার প্রকৃত নাম নয় বরং তার প্রকৃত নাম ছিলো আব্দুস শামস বা আবদে ওমর । পরবর্তীকালে ইসলাম গ্রহনের পর তার নাম রাখা হয় আব্দুল্লাহ বা আব্দুর রহমান । আবু হোরায়রা তার উপাধি মাত্র । রাসূলের প্রিয় এ সাহাবী বিড়াল ছানাকে খুব ভালোবাসতেন এমনকি জামার আস্তিনের নিচে বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে ঘুরতেন । একদিন রাসূল (সাঃ) এর সামনে তার জামার মধ্য থেকে একটি বিড়াল ছানা বেড়িয়ে পড়লে রাসূল (সাঃ) হেসে হেসে তাকে আবু হোরায়রা বলে সম্বোধন করেন । রাসূলের পবিত্র মূখ নিঃসৃত শব্দকে বরকতময় মনে করে তিনি আবু হোরায়রা নামেই নিজেকে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছ্ন্দবোধ করতেন এবং পরবর্তীতে এ নামেই প্রসিদ্ধিলাভ করেন । রাসূল (সাঃ) তার অনুচরদেরকে আদেশ দিয়েছেন সন্তানের জন্য ভালো ভালো নাম রাখতে । সুতরাং কোন উক্তি করার পূর্বে সে উক্তির উৎসের যথার্থতা ও সত্যতা যাচাই করে নেয়া বুদ্ধিমানদের কাজ । এক্ষেত্রে আব্দুল গাফফার চৌধুরী চরম মূর্খতার পরিচয় দিয়েছেন ।
নারীদের হিজাব নিয়েও তিনি চরম মিথ্যাচার করেছেন । তার মতে, ইসলামের মধ্যে হিজাব ওহাবীদের সর্বশেষ সংযোজন । অথচ সূরা নুরের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট ঘোষণায় মূসলিম নারীদেরকে পর্দাকরার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সে পর্দা পালন কিভাবে হবে তার বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন । পর্দার সাথে ওহাবীদের সংযোগ তিনি কোথায় এবং কিভাবে খুঁজে পেলেন তা তিনিই জানেন । আরবি ভাষা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, এটা কাফেরদের থেকে ইসলামে প্রবেশ করেছে এবং পরবর্তীতে ইসলামের সাথে খাপ খাওয়ানো হয়েছে । কোথায় পেলেন তিনি এই আজগুবি তথ্য ? তার জানা উচিত ছিলো, মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং তার পুত্র হযরত ইসলাইল (আঃ) এর মুখের ভাষাও ছিলো আরবি । শুধু মক্কা ও মদীনাবাসীই নয় বরং ইরাক, ইরান কিংবা মিশরের লোকেরাও আরবী ভাষায় কথা বলত । মেয়েদের প্রাকৃতিক রীতির শিক্ষাকে উপেক্ষা করে তিনি বলেছেন তার মাথায় ধরে না যে এ শিক্ষা কেন দরকার ? মূল কথা হলো, সবার মাথায় সবকিছুটা ধরবে এমন ধারনা করাও বোকামী । উপহাস করে বলেছেন তার শিক্ষা জীবনের শুরুও হয়েছে মাদ্রাসায় এবং এখানে কিছুদিন পড়েছেন । ভুলে যাওয়া উচিত নয়, মাদ্রাসায় অধ্যয়ণ করে সম্পূর্ণ ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করার সৌভাগ্য সবার হয়না । আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন কেবল তারা দ্বারাই মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন সম্ভব । কোন বিষয়ে যদি কারো কিঞ্চিত জ্ঞান অর্জিত হয় এবং জ্ঞানের এ বহর নিয়ে সে পান্ডিত্য দেখাতে চেষ্টা করে তবে লোক সমাজের সামনে সে মূর্খ হিসেবে উপস্থাপিত হয় যেমনটা হয়েছে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর ক্ষেত্রে । বিষয়ভিত্তিক গভীর জ্ঞানীরা মানুষের কাছে সম্মানের সাথে শ্রদ্ধাভাজন হয় । জ্ঞানের সংস্পর্শে এরা নিজেরাও যেমনি আলোকিত হয় তেমনি সমাজবদ্ধ মুনষকেও আলোর পথ দেখায় ।
কেউ মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিয়ে ইসলাম সম্পর্কে মিথ্যাচার কিংবা কটুক্তি করবে তার ণ্যূনতম সুযোগ নাই । আব্দুল গাফফার চৌধুরী যে অপরাধ করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য এবং এর জন্য অবশ্যই তাকে শাস্তির মূখোমূখি হতে হবে । ইসলাম সম্পর্কে মিথ্যাচার করে কিংবা ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে উপহাস করে কেউ কখনো পার পায়নি কিংবা পাবেও না কোনদিন । আমেরিকায় গেলেই কোন মায়ার লোভে কতিপয় বুদ্ধিজীবি দাবীদার দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে তার রহস্য উম্মোচন করা আবশ্যক । আব্দুল লতিফ সিদ্দীকির পদানুসরণ করে আব্দুল গাফফার চৌধুরীও একই পথে হাঁটলেন । মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট জনপদ তথা বাংলাদেশ সরকারকে বুঝতে হবে ধর্মীয় কোন মিথ্যাচারের স্থান এ মাটিতে কোনদিন ঠাঁই পাবেনা । সুতরাং সরকার যাতে তাদের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি বজায় রাখেতে চেষ্টা করে তার অনুরোধ রইলো । ইসলামী মূল্যবোধ সম্পর্কে গণমানুষের মন ও মূখের ভাষা বুঝতে পারার ক্ষমতা অর্জন করা সরকারের জন্য অত্যাবশ্যক । এ ভূমিতে নাস্তিকদের ঠাঁই হতে পারে কিন্তু মুসলিম নামদারী কোন মুরতাদের ঠাঁই এখানে হবে না । সুতরাং রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পূর্বেই মুরতাদদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহন আবশ্যক । ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলী সম্পর্কে আব্দুল গাফফার চৌধুরী অতীতেও মনগড়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু উক্তি করেছে যে অধিকার তার ছিলো না । কারো ইসলাম ভালো না লাগলে জোর করে ভালো লাগাতে হবে এমন দাবী ইসলাম করেনা কিন্তু ইসলামের ছায়াতলে থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে মনগড়া দর্শন ছড়ানোর কোন সুযোগ নাই । সবাইকে বিষয়টি দিবালোকের মত স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে । যারা এর বিপরীতমূখী হবে তাদেরকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর‌্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে । এক্ষেত্রে ব্যারিষ্টার আন্দালিব রহমান পার্থের উক্তিটি স্মরণযোগ্য, ‘মিনায় শয়তানকে উদ্দেশ্য করে পাথর নিক্ষেপে যতোটা সওয়াব হয় আব্দুল লতিফ সিদ্দীকি কিংবা আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে জুতা নিক্ষেপ করলে ততোটা সওয়াব হবে না ঠিক কিন্তু কিছু সওয়াব তো অবশ্যই হবে’ ।

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
[email protected]