নিউইয়র্কে প্রতিরোধের মুখে গাফ্ফার চৌধুরীর সভা পন্ড : জুতা হাতে বিক্ষোভ

জুতা হাতে বিক্ষোভরত মুসল্লীরা। ছবি- এনা।
জুতা হাতে বিক্ষোভরত মুসল্লীরা। ছবি- এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা : পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ি ৫ জুলাই রবিবার জ্যামাইকার তাজমহল পার্টি হলে গাফ্ফার চৌধুরীকে সংবর্ধনা দেয়ার আয়োজন করে ‘যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবার’ নামের একটি সংগঠন। আব্দুল গাফফার চৌধুরীর একটি বক্তব্যকে ‘ইসলাম বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করে আলোচনা সভা হতে দেয়া হয়নি। ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ড এলাকার একটি ভ্যানুতে গত ৫ জুলাই বিকেলে একটি আলোচনা সভা হবার প্রস্তুতি চলাকালে মুসল্লীরা এসে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এদিন এই আলোচনা সভায় কলামিষ্ট আব্দুর গাফফার চৌধুরীর বক্তব্য রাখার কথা ছিল। পূর্ব ঘোষিত অনুষ্ঠানটি প্রথমে হবার কথা ছিল জ্যামাইকার তাজমহল রেষ্টুরেন্টে। গত ৩ জুলাই বাংলাদেশ মিশনে দেয়া আব্দুর গাফফার চৌধুরীর বক্তব্য আল্লাহর ৯৯ নাম কাফেরদের দেবতাদের নাম ছিলো নিয়ে বিতর্ক ও তোলপাড় শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে জামাইকার তাজমহল রেষ্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ সেখানে আলোচনা সভা করতে দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এতে আওয়ামী পরিবারের নেতারা ব্রুকলিন এলাকায় সভা করার প্রস্তুতি নেন। এদিন বিকেলে সভা স্থলে যখন আয়োজকরা প্রবেশ করেন, তখন মুসল্লীরা সভা স্থলের সামনে এসে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা এ সময় আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে মুরদাত ঘোষণা করে সভা করতে দেয়া হবে না বলে taz4স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধরা জুতো হাতে নিয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন। তারা সভা স্থলের প্রবেশ পথে তালাও লাগিয়ে দেন। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে প্রায় ৩০ মিনিট পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তালাবন্দি অবস্থা থেকে নিরাপত্তা কর্মীসহ আয়োজকদের উদ্ধার করেন। ৫ জুলাই রোবাবর সকাল থেকেই জ্যামাইকার তাজমহল পার্টিহলের সামনে গাফ্ফার চৌধুরীকে প্রতিহত করতে অবস্থান নেয় প্রবাসী আলেম সমাজ ও সাধারণ মানুষ।
দুপুরের পর থেকেই জ্যামাইকার তাজমহল পার্টি সেন্টারের সামনে গাফ্ফার চৌধুরী বিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করে ধর্মভীরু প্রবাসীরা। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। এরপরই স্থান পরিবর্তন করে আয়োজকরা। যদিও তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ‘গাফ্ফার চৌধুরী অসুস্থ্য হওয়ায় তিনি তাজমহলের এখানে আসছেন না। ব্রকলীনের সভায় অংশ নিবেন।’ বস্তুত ধর্মভীরু প্রবাসীদের প্রতিবাদি কর্মসূচির মুখে অনেকটা বাধ্য হয়েই জায়গা বদল করে আয়োজকরা। বাংলাদেশী অধ্যষিত কুইন্সের জ্যামাইকার পার্টি হল ছেড়ে আরেক বাংলাদেশী অধ্যুষিত ব্রুকলীনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ডসের ৪৯০ নম্বর ভবনে অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়। অবশেষে সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে যায়।
আন্দোলনকারিদের পক্ষে বলা হয়, ‘পুলিশ ও তাজমহল কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করেছে কেউ এখানে সভা করতে পারবে না। তাই আমরাও চলে যাচ্ছি। তবে যেখানেই গাফ্ফার চৌধুরীকে পাবো সেখানেই তাকে প্রতিহত করা হবে।’
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গাফ্ফার চৌধুরীকে নিয়ে আয়োজকরা ব্রুকলীনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ডসে সভা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এবং প্রতিবাদকারীরা সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয় এবং গাফ্ফার চৌধুরী বিরোধী শ্লোগান ও জুতা উঠিয়ে প্রতিরোধ করায় পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদকারীদের অনেককেই জুতাও প্রদর্শন করতে দেখা যায়। এ অবস্থায় আয়োজকদের সবাই ছিল নির্বাক। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারের ব্যানারে অনুষ্ঠান করার উদ্যোগ নিয়েও নিজ দল ও কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন আয়োজনকারিরা। আয়োজকদের নেতৃত্বে ছিলেন নিউইয়র্ক, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কমান্ডার নুরুন নবী। ঘটনাকে ঘিরে উদ্ভুত পরিস্থিতে আওয়ামী সমর্থকরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার সৃষ্টি করলে স্থানীয় ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউতে ‘মারমুখী’ অবস্থার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও অবস্থান নেয় স্থানটিতে। পুলিশী হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। শেষ পর্যন্ত কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে ব্রুকলীনেও ‘আওয়ামী পরিবারের’ আলোচনা সভা পন্ড হয়ে যায়। পুরো এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ভিক্ষোভকারিদের পুলিশ জানায় কেউ কোন সভা-সমাবেশ করতে পারবে না। তখনই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।’
প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সম্পাদক বায়তুল জান্নাহ মসজিদ পরিচালনা কমিটি সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন ও সেক্রেটারী আব্দুর রহিম, প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ইউএসএ’র সভাপতি অধ্যাপক নূরুল ইসলাম ও সেক্রেটারী মাহবুবুল রহমান, মওলানা ইব্রাহীম’সহ কমিউনিটির মসজিদ, মুসলিম তথা ইসলামিক সেন্টারের নেতারা অংশ নেন। এ ঘটনার ফলে দ্বিতীয় দফায় উদ্যোগ নিয়েও ধর্মপ্রাণ প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে ব্রুকলীনে আয়োজিত কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরীর অনুষ্ঠান শেষ পর্যন্ত হলো না। ফিরে যেতে হলো তাকে।
———-
এনা পিক: