‘পুলিশের তদন্তে মারাত্মক ত্রুটি’
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশের মারাত্মক ত্রুটি থাকে’ বলে অভিযোগ করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তের জন্য পুলিশ অফিসারদের ট্রেনিং দরকার। তাদের টেকনিক্যাল কিছু বিষয় শিখাতে হবে।’
রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে রবিবার সন্ধ্যায় ‘সাম্প্রতিক মানবপাচার পরিস্থিতি এবং সমস্যা উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত মর্মাহত হই, যখন দেখি কোনো ব্যক্তি উচ্চ আদালত থেকে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও সে শাস্তি ভোগ করে না।’
তিনি বলেন, ‘মানবপাচারের মামলায় দোষীদের শাস্তি না হওয়ার পেছনের কারণ হল- রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ত্রুটি।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এখানে অনেক সংসদ সদস্য আছেন, আপনারা নিজ জেলায় কেমন পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করেন, আপনারা দলীয় লোক নিয়োগ দেন, তারা সিআরপিসির সি ও জানে না।’
আইনজীবীরা টাকার দিকে ঝুঁকে যাওয়ায় আইনের দিকে লক্ষ্য করেন না বলেও অভিযোগ প্রধান বিচারপতির।
তিনি বলেন, ‘তদন্ত ও প্রসিকিউশনের সমস্যা থাকলে মামলা যতই ভাল হোক না কেন, তার কোনো ফলাফল আসবে না।’
‘আপনারা সবাই বলছেন, মানবপাচার প্রতিরোধ আইন খুবই ভাল আইন হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি আইনটি খুব খারাপ হয়েছে। কারণ এর কোনো বাস্তবায়ন হয় না’— যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এমপি ও মন্ত্রীদের উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা আইনগুলো খুব চিন্তা-চেতনা না করেই তৈরি করেন। ফলে আইন তৈরির ১-২ মাসের মধ্যেই সংশোধন করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘সংসদের তৈরি করা আইনের উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় কি তা কিছুই পাওয়া যায় না। আইন করতে হলে সচেতন থাকা দরকার। তা না হলে আইনে ত্রুটি ও ফাঁক থেকে যায়।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সরকারের কাছে দাবি উঠলেই আইন তৈরি করা হয়। আইনে স্পেশাল ট্র্রাইব্যুনাল গঠন করে কোন বিচারক বিচার করবেন তা ঠিক করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বিচারক আছে কি না তা দেখেন না।’
তিনি বলেন, ‘আইন করার সময় আদালত গঠনের বিষয়ে কমপক্ষে প্রধান বিচারপতির মতামত নেওয়া দরকার।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মানবপাচার রোধে সরকারের উদ্যোগগুলো প্রশংসনীয় কিন্তু তা বাস্তবায়নে সরকারের অবস্থান নিন্দনীয়।’
তিনি বলেন, ‘মানববাজার রাজনৈতিক গুটিকয়েক সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে। ফলে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
মিজানুর রহমান দাবি করেন, ‘মানবপাচারের সঙ্গে যে সব সরকারি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রদূত জড়িত আছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া যায়, তাদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘মানবপাচারের অভিযোগ সম্বলিত গত ১০ বছরে ৫৬৮টি মামলা হয়েছে। পাচার বন্ধে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।’
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমদ বলেন, ‘বিচারকের স্বল্পতার কারণে মানবপাচার মামলার বিচার করা সম্ভব হচ্ছে না। বিচারক বাড়িয়ে পুরানো মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং নতুন মামলাগুলো বিচারের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, ডা. দীপু মনি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়াসহ বিভিন্ন সংসদ সদস্য ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।