আল্লাহর ৯৯ নাম কাফেরদের দেবতাদের নাম ছিলো : আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী

বক্তব্য রাখছেন আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। পাশে রাষ্ট্রদূত ড. এ কে মোমেন। ছবি- এনা।
বক্তব্য রাখছেন আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। পাশে রাষ্ট্রদূত ড. এ কে মোমেন। ছবি- এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা: আল্লাহর ৯৯ নাম কাফেরদের দেবতাদের নাম ছিলো। গত ৩ জুলাই বিকেলে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত বাংলাদেশ: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত শীর্ষক এক আলোচনা সভায় একুশের গানের রচয়িতা এবং বিশিষ্ট কলামিস্ট আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী এ কথা বলেন। বাংলাদেশ মিশনের প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেনের পরিচালনায় এই অনুষ্ঠানে একমাত্র আলেচক ছিলেন আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের অতীত এবং ভাষার বিকর্তনের কথা বলতে গিয়ে বলেন, আল্লাহর ৯৯ নাম কাফেরদের দেবতাদের নাম ছিলো। এগুলো আমার বাংলা ভাষায় এডপ্ট করেছি। যেমন আবু হুয়রায়রা নামে অর্থ হচ্ছে বিড়ালের বাবা, আবু বকর নামের অর্থ হচ্ছে ছাগলের বাবা। এভাবে আমরা অনেক নাম রাখি। কাফেরদের মধ্যে যারা মুসলমান হয়েছিলো তাদের নাম পরিবর্তন করা হয়নি।
বোরখা এবং হেজাব সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা হচ্ছে ওয়হাবিদের সর্বশেষ মতবাদ। তিনি আরো বলেন, যত দিন আমাদের ভাষা থাকবে, রবীন্দ্র নাথ থাকবে, বঙ্গবন্ধু থাকবে ততদিন বাংলাদেশকে তালেবানরা ধ্বংস করতে পারবে না। তিনি বলেন, আমি বেঁচে থাকবো কি না জানি না, তবে আজকে একটা কথা বলতে পারি আগামী ১৫/২০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে দুটো রাষ্ট্রে বিলুপ্তি হবে। এ দুটো রাষ্ট্র হচ্ছে পাকিস্তান ও ইসরাইল। একটি দেশ দক্ষিণ এশিয়াকে অশান্ত করে রেখেছে, আরেকটি দেশ মধ্যপাচ্যকে অশান্তির মধ্যে রেখেছে। আমেরিকার পতনের সাথে সাথেই এদের পতন হবে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের অনেক ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে তারপরেও বাংলাদেশ শেখ হাসিনার মত ইস্পাতরূপী নেত্রী পেয়েছে। যিনি কিনা মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে তাকে ৯ বার হত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিলো। আমি হলে ভয়ে চলেই যেতাম কিন্তু তিসি সাহসের সাথে লড়াই করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন যে বিরোধী দল রয়েছে এটাকে গণতান্ত্রিক বিরোধী দল বলা যায় না, এটা হচ্ছে প্রয়োজনের বিরোধী দল। তিনি আরো বলেন, পাকিস্তান থেকে বিভক্ত হয়ে আমাদের ভালই হয়েছে। তা নাহলে এতদিন আমাদের দেশে ড্রোন হামলা হতো। মাদ্রাসা এবং মসজিদগুলো তালেবানরা দখল করে নিতো। আমাদের সৌভাগ্য হচ্ছে আমরা আগে বাঙালি তারপরে মুসলমান। যে কারণেই বাংলাদেশ ধ্বংস হবে না, বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, আমি এবার অনেক দিন পরে আমেরিকায় এসেছি। আমি যতবার এসেছে ততবার আমার সাথে আমার চেয়ে ১০ বছরের ছোট আমিনুল হক বাদশা ছিলেন। তার সাথেই আমি এসেছি। তাকে নিয়ে মূলত: আমি বাইরে যেতাম। তার কাঁদে হাত রেখে আমি হজ্বও করেছি। সেই বাদশাহ আমাদের মাঝে নেই। তাকে ছাড়া আমি প্রথম আসলাম। তিনি বলেন, আমার হয়ত ভুল হতে পারে। কিন্তু আমার একটি বিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই আমি লিখছি। আমি বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, মৌলবাদী রাষ্ট্র আমরা চাই না, আমরা ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একবার স্বৈরাচার আইয়ুব এসে বলেছিলেন বাঙালিরা হচ্ছে দাসের জাতি, বুটের তালায়পৃষ্ঠ জাতি। সেই সময় এই স্বৈরশাসকের কেউ বিরোধিতা করেনি। একজন বিরোধিতা করে বলেছিলেন বাঙালি সংগ্রামের জাতি আর পাঞ্জাবীরা হচ্ছে দাসের জাতি। এই কথাটি বলেছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি জটিল হলেও বাংলাদেশের ভবিষ্যত ভাল। বাঙালি জাতি মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখবে। তিনি বলেন, বাংলা ভাষার বিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে বলেন, আল্লাহর ৯৯ নাম কাফেরদের দেবতাদের নাম ছিলো। আমরা নামগুলোকে এডফপ্ট করে নিয়েছি। যেমন আবু হুরায়রা নামের অর্থ হচ্ছে বিড়ালের বাবা, আবু বকরের নামের অর্থ হচ্ছে ছাগলের বাবা। আমরা কী সেই নামগুলো পরিবর্তন করছি? কাফেরদের মধ্যে যারা মুসলামান হয়েছিলো তাদের নামগুলো কী পরিবর্তন করা হয়েছে? তিনি বলেন, বাংলাদেশে বাংলা ভাষার সাথে রাজনীতি জড়িত। তিনি আরো বলেন, আমেরিকানরা তালেবান সৃষ্টি করে এখন বিপদে পড়েছে। আর বাংলাদেশের জামাত দ্বীনে মোহাম্মদী নয়, তারা হচ্ছে দ্বীনে মওদুদী। হিজাব এবং বোরখা হচ্ছে মওদুদীর শেষ মতবাদ। আর জামাত এক সময় কোরবানীর গোস্তের চালে (চামড়ার পয়সায়) চলতো। বাংলাদেশ যদি পাকিস্তান থেকে বিভক্ত না হতো তাহলে এতদিন বাংলাদেশে ড্রোন হামলা চলতো। আমি বেঁচে নাও থাকতে পারি তবে একটি কথা বলতে পারি পৃথিবী থেকে দুটো রাষ্ট্র বিলুপ্ত হয়ে যাবে। একটি হচ্ছে পাকিস্তান অন্যটি হচ্ছে ইসরাইল। একটি দেশ দক্ষিণ এশিয়া অশান্ত করছে, অন্য দেশটি মধ্যপাচ্য অশান্ত করছে। আমেরিকার পতনের সাথে সাথে এদেরও পতন হবে। শুধু শুধু সাদ্দাম এবং গাদ্দাফিকে হত্যা করা হলো ইসরাইলকে নিরাপদ করার জন্য। তিনি বলেন, যত দিন আমাদের বাংলা ভাষা, রবীন্দ্র নাথ ও বঙ্গবন্ধু থাকবে ততদিন তালেবানরা বাংলাদেশকে দখল বা ধ্বংস করতে পারবে না। তিনি আরো বলেন, আমি জিয়াউর রহমান ঘৃণা করি। কারণ তাকে আমি দেখেছি যুদ্ধের সময়। সাবুরা সেক্টরে আমি তার সাথে ছিলাম। সে সারাক্ষণ মাথার চুল চিরুনী দিয়ে আচরাতো আর খবর নিতো কোন রাষ্ট্রদূত আসছে কি না? এখন কী না তাকেই বলা হচ্ছে স্বাধীনতার ঘোষক। অথচ সে একটি মাত্র বাণী পাঠ করেছিলো। তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বেগম জিয়া আওয়ামী লীগের সমালোচনা করতে পারেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করেন কীভাবে? তিনি বঙ্গবন্ধুকে ধর্মের বাবা ডেকেছিলেন। তিনিই তার সংসার রক্ষা করেছিলেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি ও মৌলবাদ। মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী একটি মন্তব্য করে কি না বিপদে পড়েছেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের বিচারালয় থেকে শুরু করে সর্বত্রই দুর্নীতিবাজরা গড়ফাদারে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমাদের গণসচেতনা গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে দুর্নীতিবাজদের ফাঁসি দিতে হবে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বর্তমান সরকার ও আগের সরকারগুলোর মধ্যে প্রার্থক্য হচ্ছে বর্তমান হচ্ছে মানুষ, আর আগের সরকারগুলো ছিলো রবোট। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে যে বিরোধী দল আছে সেটা সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক বিরোধী দল নয়, এটা হচ্ছে প্রয়োজনের বিরোধী দল।