সম্মেলন ছাত্রলীগের, পদ-পদবি দখলে মরিয়া আওয়ামী লীগ নেতারা

Chhatroleageসুরমা টাইমস ডেস্কঃ আগামী শনিবার (৪ জুলাই) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। পদপ্রত্যাশী নেতারাও তৎপর হয়ে উঠেছেন। গ্রুপিং-লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সভাপতি-সম্পাদক হতে ইতোমধ্যে ৫৯ জন প্রার্থী নিজেদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
অপরদিকে, সম্মেলন ছাত্রলীগের হলেও ঘুম হারাম আওয়ামী লীগ নেতাদের। নিজেদের অনুসারী নেতাদের পছন্দের পদে বসাতে মরিয়া হয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। ফলে ছাত্রলীগের সম্মেলন ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বের লড়াইয়ের চাইতে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাদের লড়াই হয়ে উঠেছে।
মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিতে নিজ অনুসারীদের পছন্দের পদে বসাতে সবচেয়ে তৎপর রয়েছেন আওয়ামী লীগের ৬ নেতা। সিলেট ছাত্রলীগকে নেতত্বদানকারী ৪ গ্রুপের ৫ নেতার পাশাপাশি এবার ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ।
সিলেটের ছাত্রলীগের রাজনীতি মূলত নিয়ন্ত্রণ করে আসছে চারটি গ্রুপ। এই চার গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন ৫ আওয়ামী লীগ নেতা।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের নেতৃত্বাধিন তেলিহাওর গ্রুপ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের নেতৃত্বাধিন দর্শন দেউড়ি গ্রুপ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ এবং যুব ও ক্রড়া সম্পাদক রনজিত সরকারের নেতৃত্বাধিন টিলাগড় গ্রুপ ও উপ দপ্তর সম্পাদক বিধান কুমার সাহার নেতৃত্বাধিন কাশ্মির গ্রুপই এতোদিন নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলো ছাত্রলীগ।
জেলা ও মহানগর কমিটির পদ-পদবিও এই চারগ্রুপের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করা দেওয়া হয়। এবার এই চার গ্রুপের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে নিজ অনুসারীদের বসাতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন তিনি। ছাত্রলীগের কমিটিতে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ নেতাদের এই মরিয়া প্রচেষ্টার কারণে যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতারা বঞ্চিত হতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ছাত্রলীগের অনেক তৃণমূল নেতাকর্মী। এই গ্রুপিংয়ের কারণে সিলেটে ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক পিযুষ কান্তি দে’ও মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষ্যে নিজস্ব প্যানেল ঘেষণা করেছেন। কাশ্মীর গ্রুপের সাবেক এই নেতা এবার নিজেই গ্রুপ প্রধান সেজে অনুসারীদের পদায়নে তৎপর হয়ে উঠেছেন।
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, মহানগর ছাত্রলীগের শীর্ষ পদগুলো দখলে শতাধিক প্রার্থী তৎপরতা চলাচ্ছেন। এরমধ্যে কেবল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ৫৯ জন নেতা নিজেদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
মহানগর ছাত্রলীগ নেতারা জানান, আগামী ৪ জুলাই সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকি নাজমুল আলম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এমরুল হাসান বলেন, ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে ৫৯ জন প্রার্থী জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। আমরা এগুলো ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি।
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদার বলেন, সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, প্রকৃত ছাত্র, অবিবাহিত এবং যোগ্য, মেধাবী ও পরীক্ষিত নেতারাই ছাত্রলীগের কমিটিতে ঠাঁই পাবে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৯ জুলাই সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন পায়। ১০১ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিকে অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি। ১০১ সদস্যের কমিটি পরবর্তীতে বর্ধিত করে ১৬৩ সদস্য গিয়ে ঠেকে।