রাজাকার সিরাজ-লতিফ-আকরামের যুদ্ধাপরাধের রায় যেকোনো দিন

5799সুরমা টাইমস ডেস্কঃ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বাগেরহাটের রাজাকার কসাই শেখ সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরাজ মাস্টার, আকরাম হোসেন খান ও আব্দুল লতিফ তালুকদারের মামলায় যেকোনো দিন রায় ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটিতে যেকোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে বলে জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
১৫, ১৭ ও ২৩ জুন রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও প্রসিকিউটর মোশফেক কবির। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ১৭ ও ২১ জুন সিরাজ মাস্টারের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল আহসান এবং খান আকরাম হোসেন ও লতিফ তালুকদারের পক্ষে ব্যারিস্টার এম সারওয়ার হোসেন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
এর মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় রায় ঘোষণা অপেক্ষমান রাখেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
গত ৬, ৭ ও ২১ এপ্রিল আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন পাঁচজন সাফাই সাক্ষী। তারা হচ্ছেন মো. আমজাদ শেখ, সরদার আব্দুল মান্নান, আব্দুর রশিদ মল্লিক, ইউসুফ আলী ডিহিদার এবং মো. ফেরদৌস খান।
গত বছরের ২ ডিসেম্বর থেকে গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত এই তিন আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) হেলাল উদ্দিনসহ ৩২ জন সাক্ষী। তাদের মধ্যে ঘটনার ৩০ জন সাক্ষী হচ্ছেন দিলীপ দাস, শৈলেন্দ্রনাথ দাস, কমলা রানী চক্রবর্তী, তপন কুমার দাস, অরুণ দাস, নন্দলাল দাস, নিমাই চন্দ্র দাস, আনন্দ লাল দাস, আব্দুল আজিজ, মো. আলতাফ হোসেন কোটাল, জাহিদুল ইসলাম, শেখ ফজর আহমেদ, সোবহান শেখ, সোহরাব নকিব, সোলায়মান সরদার, প্রেমানন্দ মজুমদার, প্রাণকৃষ্ণ হালদার, শিশির বিশ্বাস, শেখ মোস্তাফিজুর রহমান বাদশা, আহমেদ আলী শেখ, সোলেমান হালদার, মীর আব্দুর রাজ্জাক, মল্লিক খলিলুর রহমান, সুকুমার দাস এবং মনিরুল ইসলাম। এর আগে ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর তিন আসামির বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সাইয়্যেদুল হক।
গত বছরের ৫ নভেম্বর রাজাকার কমান্ডার ‘বাগেরহাটের কসাই’ বলে কুখ্যাত সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার এবং তার দুই সহযোগী আব্দুল লতিফ তালুকদার ও আকরাম হোসেন খাঁনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোট সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
অভিযোগের মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের শাঁখারিকাঠি বাজার, রনজিৎপুর, ডাকরা ও কান্দাপাড়া গণহত্যাসহ ৮ শতাধিক মানুষকে হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন এবং শতাধিক বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাগেরহাটের কচুয়ার শাঁখারীকাঠি বাজারে ৪২ জনকে গণহত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িতে অগ্নিসংযোসহ ছয়টি অভিযোগে ২০০৯ সালে সিরাজ মাস্টারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়।
ওই গণহত্যায় নিহত রঘুদত্তকাঠি গ্রামের শহীদ জিতেন্দ্র নাথ দাসের ছেলে নিমাই চন্দ্র দাস কচুয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি পরে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
২০১৪ সালের ২৫ আগস্ট এ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন বরাবর দাখিল করে তদন্ত সংস্থা।এদের বিরুদ্ধে ৯টি খণ্ডে মোট ৮৪৪ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সাইয়্যেদুল হক আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর দিনই এ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১।
ট্রাইব্যুনাল-১ গত বছরের ১০ জুন এ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ১১ জুন আব্দুল লতিফ তালুকদার, ১৯ জুন আকরাম হোসেন খাঁন ও ২১ জুলাই সিরাজ মাস্টারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাগেরহাটের তিন রাজাকার সিরাজ-লতিফ-আকরামের বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ:
অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালের ১৩ মে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাগেরহাট জেলার রঞ্জিতপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর লুট এবং অগ্নিসংযোগ। এসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪০-৫০ জন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ২: বাগেরহাট জেলার রামপাল থানার ডাকরার কালীমন্দিরে ভারতের শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই-তিন হাজার লোক। ১৯৭১ সালের ২১ মে বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ৬০০-৭০০ জনকে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ৩: ১৯৭১ সালের ১৮ জুন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদর থানার বেসরগাতী, কান্দাপাড়া এলাকায় ১৯ জন নিরীহ নিরস্ত্র লোককে আটক, নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ৪: ১৯৭১ সালের ১৪ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সদর থানার চূলকাঠিতে হামলা চালিয়ে ৫০টি বাড়ি লুট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসময় সাতজন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ৫: ১৯৭১ সালের ৫ নভেম্বর দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কচুয়া থানার শাখারিকাঠি হাটে হামলা চালিয়ে ৪২ জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। এসময় অনেক বাড়ির মালামাল লুট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
অভিযোগ ৬: ১৯৭১ সালের ২২ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে বিকাল আনুমানিক ৫টা পর্যন্ত কচুয়া থানা সদরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে নিরস্ত্র পাঁচজনকে আটক, নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ৭: ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টায় জেলার মোড়েলগঞ্জ থানার তেলিগাতীতে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান শিকদারকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।