ঢাকা-সিলেট-গোহাটি-শিলং রুটে পরীক্ষামূলক বাস সার্ভিস

দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন

Busসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য বাংলাদেশের সম্ভাব্য ১৬ অঞ্চলের একটি তালিকা ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে পরমানু শক্তি ও মহাকাশ নিয়ে সহযোগিতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা-সিলেট-গোহাটি-শিলং বাস সার্ভিস চালুর লক্ষ্যে চলতি বছর শেষে একটি ট্রায়াল রান করতে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে।
শনিবার দিল্লিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন একথা জানান। তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ চৌধুরী ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মধ্যে অনুষ্ঠিত যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকের ওপর আলোকপাত করছিলেন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বিষয়ক যুগ্মসচিব প্রিয়া রঙ্গনাথন।
আকবর উদ্দিন বলেন, জেসিসিতে তিনটি বিষয়ের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি ও উন্নয়ন সহযোগিতা। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ। দুই দেশের বাণিজ্য প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। বেশ কিছুদিন ধরে আমরা ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) প্রতিষ্ঠার কথা বলে আসছি। জেসিসি বৈঠকে বাংলাদেশ ১৬ অঞ্চলের তালিকা দিয়েছে। এটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ভারত তার মতামত দেবে। এটি দুই দেশের বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের ব্যাপারে ভারত সচেতন রয়েছে। ২৫টি বাদে বাকি সব বাংলাদেশী পণ্য ভারতের বাজারে বিনাশুল্কে প্রবেশ করতে পারে। বৈঠকে বাংলাদেশ কিছু অশুল্ক বাধার তালিকা দিয়েছে। ভারত তা খতিয়ে দেখবে। ভারত মনে করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে সীমান্তের শুল্ক স্টেশনগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন।
মুখপাত্র বলেন, কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে তিনটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে মৈত্রী ট্রেনে একটি অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে। বর্তমানে সপ্তাহে দুইদিনের স্থলে তিনদিন এ ট্রেনটি চালানো যায় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ঢাকা-গোহাটি-শিলং বাস সার্ভিস চালুর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চলতি বছর শেষে একটি ট্রায়াল রান হওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। উপকূলীয় জাহাজ চলাচল শুরু করার জন্য উভয় দেশ শিগগির চুক্তি সম্পাদনে সম্মত হয়েছে।
তিনি বলেন, উভয় দেশ নতুন নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র বের করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ বৈঠকে আনবিক শক্তি ও মহাকাশ নিয়ে সহযোগিতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দুটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে সুনির্দিষ্ট অনুরোধ পাওয়া গেলে ভারত তার অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে সম্মত রয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার ব্যাপারে দুই দেশের সীমান্ত অঞ্চলের সব জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উর্ধ্বতন শুল্ক কর্মকর্তাদের ৯টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আগামী অক্টোবরে প্রথম একটি বৈঠক হবে। আর আগামী বছর ভারতে সবাইকে নিয়ে বৈঠক হবে।
বৈঠকে পর দুই দেশ নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত সহযোগিতা নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে কি অগ্রগতি হয়েছে জানতে চাওয়া হলে মুখপাত্র বলেন, পানি একটি স্পর্শকাতর ইস্যু। এর সাথে নদী অববাহিকার মানুষদের জীবন-জীবিকা সম্পর্কিত। তাই কোনো পক্ষের স্বার্থে যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় – এমনভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হবে। ভারত সচেতন যে এটা বাংলাদেশের অগ্রাধিকার ইস্যু। এজন্য ভারত এতে যথাযথ মনোযোগ দেবে। চুক্তির জন্য ভারতে একটি রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ প্রক্রিয়া চলাকালীন তিস্তার পানি বাধাহীনভাবে গড়াবে।
সীমান্ত চুক্তির অগ্রগতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত বিল রাজ্যসভায় উত্থাপন করা হয়েছে। সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন যে, এটি এখন পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কমিটির বিবেচনাধীন রয়েছে। এতে ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ-লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্যরা রয়েছেন। সম্প্রতি লোকসভার নির্বাচনের পর কমিটিতে নতুন সদস্য অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। এখন তার পুনর্গঠন চলছে। বিলটি নিয়ে রাজনৈতিকভাবে আলোচনার প্রক্রিয়াও চলছে। স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদন পেলে তা পার্লামেন্টের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে।
বাংলাদেশীদের ভিসামুক্ত সুবিধা দেয়ার কোনো প্রস্তাব ভারত সরকারের বিবেচনায় নেই বলে জানান প্রিয়া রঙ্গনাথন।
সারদা চিট ফান্ডের অর্থ বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলকে দেয়া হয়েছে কি-না জানতে চাওয়া হলে মুখপাত্র বলেন, ইস্যুটি আমরা কেবল মিডিয়াতে দেখেছি। সরকারি বা কূটনৈতিক পর্যায়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আর জেসিসি বৈঠকেও বিষয়টি আসেনি।
যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠকের কোনো দিনক্ষণ এখনো নির্ধারন হয়নি বলে জানান রঙ্গনাথন। টিপাইমুখ নিয়ে জেসিসি বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান তিনি। রঙ্গনাথন বলেন, বিষয়টি জেআরসির অধীনে একটি সাব-গ্রুপে আলোচনা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা রয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে মুখপাত্র বলেন, এ জন্য তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকেও ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারন অধিবেশনের সাইডলাইনে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হবে।
বাংলাদেশীদের অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ ইস্যুটি আলোচনায় এসেছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে রঙ্গনাথন বলেন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বৃহত্তর প্রেক্ষাপট নিয়ে আলাপ হয়েছে যাতে চোরাচালান, জালনোট ইত্যাদি রয়েছে।
আকবর উদ্দিন বলেন, কয়েক বছর আগে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেয়া হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে যার মধ্যে ২০ কোটি ডলার অনুদানে রুপান্তর করা হয়েছে। ঋণের অর্থে ৭৫ কোটি ডলারের ১৫টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে সাতটি প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে।