বাংলাদেশের ম্যাগিতেও সীসা শনাক্ত!
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বাংলাদেশের ম্যাগিতেও রয়েছে ক্ষতিকর সীসা। আর তা শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের(বিসিএসআইআর) খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরীক্ষাগারে। তবে সীসা শনাক্ত হওয়ার পর এ সংক্রান্ত রিপোর্ট নিয়ে শুরু হয়েছে টালবাহানা। তারা বলছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এই পরীক্ষা করিয়েছে, এই রিপোর্টে যা রয়েছে তা কেবল তাদেরই সম্পত্তি। সিলগালা করে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারাই এর তথ্য জানাবেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে খোঁজ নিতে গেলে সেখান থেকে জানানো হয়, সিলগালা রিপোর্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গত ১০ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর ওই রিপোর্টটি পাঠানো হয়। কিন্তু এরপর সাত দিন পার হয়ে গেলেও রিপোর্টে কি রয়েছে তা জানায়নি মন্ত্রণালয়।
এদিকে বিসিএসআইআর সূত্র জানিয়েছে ওই রিপোর্টে ম্যাগিতে সীসা শনাক্ত হওয়ার কথাই উল্লেখ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে লুকোছাপা কেনো তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষই।
প্রতিবেশি দেশ ভারতে বহুজাতিক কোম্পানি নেসলের তৈরি ম্যাগিতে ক্ষতিকর মাত্রায় সীসা পাওয়ার পর দেশটিতে এই খাদ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চাপের মুখে এরই মধ্যে চারশ’ কোটি টাকা মূল্যের ম্যাগি নুডলস বাজার থেকে তুলে এনে ধ্বংস করারও ঘোষণা দিয়েছে নেসলে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এ নিয়ে টালবাহানা অব্যাহত রয়েছে।
তবে সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ম্যাগিতে সীসার মাত্রা পরীক্ষা করাতে বিসিএসআইআর-এর শরণাপন্ন হয়।
বিসিএসআরআই সূত্র জানায়, ম্যাগিতে সীসা পাওয়া গেছে। তবে সে মাত্রা ক্ষতিকর কি না সে বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. জহিরুল হক জানান, পরীক্ষায় ম্যাগিতে সীসা পাওয়া গেছে। তবে এর মাত্রা সহনশীলতার মধ্যে রয়েছে কি না সে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অধিকতর পরীক্ষা প্রয়োজন। যা অব্যাহত রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দুই একদিনের মধ্যে সেই রিপোর্ট আমাদের হাতে এসে পৌঁছাবে।
ম্যাগি নুডুলসের সমস্ত কিছু পরীক্ষা কাজ দেখভাল করছেন বিসিএসআইআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনজুর মোর্শেদ আহমেদ। তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত একটি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আরও পরীক্ষা প্রয়োজন।
একটি পরীক্ষায় কী ফল পাওয়া গেছে তা প্রকাশে অনাগ্রহ প্রকাশ করে এই কর্মকর্তা বলেন, রিপোর্ট সিলগালা করে ভোক্ত অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়েছে। এর ফল প্রকাশ কেবল তাদেরই অধিকার।
তবে একটি পরীক্ষা শেষ করেই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে না, এমন মত দিয়ে তিনি বলেন, ম্যাগির সবগুলো উপাদানের একাধিক পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে।
এছাড়াও ভারতের ম্যাগিতে মনো গ্লুটামেট সোডিয়াম পাওয়া গেছে, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ ওই উপদান রয়েছে কি না তা পরীক্ষার কার্যকর পদ্ধতি বাংলাদেশে নেই।
বিষয়টি জাতীয় স্বার্থেই দ্রুত করা প্রয়োজন বলে মত দেন এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
যদি তাই হয়, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) এত দ্রুত কী করে নেসলের পক্ষে সার্টিফিকেট দিলো? এমন প্রশ্নের উত্তরে মনজুর মোর্শেদ বলেন, সেটি বিএসটিআই জানে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় সিলগালা প্রতিবেদনে কি আছে তা তাদের জানা নেই সেটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যুগ্ম-সচিব মাতিনুল হক বলেন, বিসিএসআইর এর সিলগালা রিপোর্ট আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা কোনও তথ্য জানাতে পারবো না। আমাদের নিষেধ রয়েছে। যা কিছু বলার মন্ত্রণালয় বলবে।
তবে অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের ম্যাগিতে সীসা রয়েছে কি না সে বিষয়ে গুরুত্ত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ এটি আমাদের বিশেষ করে শিশুদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। জাতীয়ভাবে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন এই কর্মকর্তা।
অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্টটি ১০ জুন পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। সাত দিনেও মন্ত্রণালয় এ বিষযে কেনো কিছু জানালো না সে প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি মন্ত্রণালয়ের বিষয়। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। বাংলানিউজ