মাদকে সয়লাব লক্ষ্মীপুর-ইয়াবা বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজার চন্দ্রগঞ্জ

1লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুর জেলার মধ্যে ইয়াবা বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজার এখন চন্দ্রগঞ্জ। লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী দুই জেলার মধ্যবর্তী সীমান্ত এলাকা চন্দ্রগঞ্জ। চন্দ্রগঞ্জ বাজারকে ঘিরে পার্শ্ববর্তী দুই জেলার অন্তত ২০টি স্পটে ইয়াবাসহ মাদক বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। এসব স্পট পরিচালনায় স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয়-প্রশ্রয় রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের একাধিক নেতা নাকী ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। মূলতঃ তারাই নাকী নৈপথ্যে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। অবশ্য এ বিষয়ে প্রকাশ্য মুখ খুলতে রাজি হয়নি কেউ। সরেজমিনে জানা যায়, জয় চৌধুরী গ্রুপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রীত হয় চন্দ্রগঞ্জের মাদক ব্যবসা। চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের গণিপুর গ্রামের ননা কাজীর পুত্র জাহাঙ্গীর পরিচালনা করে কামারহাট স্পট, দেওপাড়া গ্রামের মৃত কবির আহমদের পুত্র চোরা মানিক পরিচালনা করে চোরকান্দি স্পট, মৃত কোরবান আলীর পুত্র সিএনজি চালক হেঞ্জা কলেজ গেইট স্পট, পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের হারুন ওরফে পাগলা হারুন পরিচালনা করে মোস্তফার দোকানের স্পট, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চকিদার বসুদুহিতা গ্রামের ইসমাইল ওরফে ইসমাইল চকিদারের পুত্র মনির পরিচালনা করে আন্ডারঘর স্পট, হাজিরপাড়া তিন রাস্তার মোড়ের স্পট পরিচালনা করে মঞ্জু ও সবুজ, বেগমগঞ্জের আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের ভবভদ্রী গ্রামের স্পট পরিচালনা করে মাসুদ ও ফয়সাল, হাজিরপাড়া স্পট পরিচালনা করে শেখ হারুন, মান্দারি স্পটে কফিল,  আন্ডারগর স্পট পরিচালনা করে খোরশেদ আলম সুমন, আমানউল্যাহপুর ইউনিয়নের কোয়ারিয়া গ্রামের স্পট পরিচালনা করে লিটন ও তার ভাই মিলন, কাছিহাটার ইয়াবার বড় ডিলার সোহাগ, পটিকার জামালের ছেলে মাসুদসহ ২০টি স্পটে ইয়াবাসহ মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে। এর মধ্যে ভবভদ্রী গ্রামের মাসুদ, ফয়সাল, কোয়ারিয়ার লিটন বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে জেলখাটার পর জামিনে এসে আবারো একই পেশায় জড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, চন্দ্রগঞ্জ বাজারকে ঘিরে ২০টি মাদক স্পটে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার পিস ইয়াবা বেচাকেনা হয়। পাশাপাশি চরশাহী ও দিঘলী ইউনিয়নের একাধিক স্থানেও মাদক স্পট পরিচালনার খবর পাওয়া গেছে। থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও এসব স্পট একেবারে বন্ধ করতে পারেনি। অভিযোগ আছে, কোনো কোনো স্পট পরিচালনাকারীদের সাথে পুলিশের একাধিক অফিসারের সাথেও সখ্যতা রয়েছে। তাই অভিযান পরিচালনার আগেই ওইসব স্পট পরিচালনাকারীদের কাছে আগাম খবর চলে যাওয়ায় অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক জানান, চন্দ্রগঞ্জ এলাকায় কিশোর, তরুণ ও যুবকরা এখন ইয়াবায় আসক্ত। ধর্ণাঢ্য এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানরাই বেশি ইয়াবা আসক্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের ছাত্ররাও রয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়ে যে সবাই এখন ফিনিক (ফিলিংস) নিতে ব্যস্ত।
কয়েকজন অভিভাবক জানান, তাদের সন্তানরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় এখন সন্তানদের মাদকের টাকা জোগাড় করে দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা। টাকা না দিলে পিতামাতার সাথেও দুর্ব্যবহার চলে। অন্যদিকে টাকা না দিলে তারা জড়িয়ে পড়ছে অপরাধসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক আরো জানান, তাদের সন্তানরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার কারণে গত দুইবছরে কয়েকবার তাদেরকে কুমিল্লায় মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা করিয়ে এনেছেন। চিকিৎসার পর মাসখানের ভালো থাকলেও আবারো তারা মাদকে জড়িয়ে পড়ছে।
কয়েকজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে জানা গেছে, মাদকের মধ্যে সবচেয়ে সর্বনাশা বস্তুটির নাম ইয়াবা। কিন্তু কী এই ইয়াবা? ইয়াবার মূল শব্দ থাই। এর সংক্ষিপ্ত অর্থ পাগলা ওষুধ। মূলত নেশাজাতীয় ওষুধ। এক ভয়াবহ মাদক যা মস্তিষ্ক, হৃদ্যন্ত্র এবং শরীরের যেকোনো অঙ্গকেই আক্রান্ত করতে পারে। ধীরে ধীরে নিস্তেজ করে দেয় একটি সুন্দর দেহ, মন ও মানসিকতা। এই ইয়াবা আসক্তির কারণে মস্তিষ্কের বিকৃতি হতে পারে। ইয়াবার সঙ্গে মাঝে মাঝে ক্যাফেইন বা হেরোইন মেশানো হয়, যা আরো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই মহাভয়ানক মাদক সেবন করলে মনে উৎফুল্লভাব তৈরি হয়, যৌন উত্তেজনা বেড়ে যায়, কিছুটা ওজন কমে মনে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তাই কৌতূহলবশত ইয়াবা সেবন করে থাকে অনেকে। কিন্তু কিছুদিন ইয়াবা সেবনের পর দেখা দিতে শুরু করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। প্রথমেই শুরু হয় মানসিক অবসাদগ্রস্ততা। কৌতূহলবশত কয়েকদিন সেবনের পরই আসক্তি এমন পর্যায়ে যায় যে এটি ছেড়ে দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন ইয়াবা ছাড়া আর কিছুই ভালো লাগে না। ফলে ওই মাদক পেতে যেকোনো হীন অপকর্ম করতেও হিতাহিত জ্ঞান থাকেনা আসক্তদের।
লক্ষ্মীপুর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, জনবল কম থাকার কারণে কোনো কোনো স্থানে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবুও সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা ফেলে ওইসব স্পটে অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, অভিযানে মাদক বিক্রেতারা ধরা পড়লেও আইনের ফাঁকফোঁকড়ে এরা জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো একই অপরাধ করছে। এ জন্য আইনের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে আরো কঠোর আইন প্রনয়ণ করা দরকার বলে মনে করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।