সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে নিহত ৪ : মারা গেছে ২২০টি গরু
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সুনামগঞ্জে বৃহস্পতিবার বজ্রপাত ও কালবৈশাখী ঝড়ে এক নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টিতে আহত হয়েছেন আরও ১৮ জন কৃষক। ঝড় ও শিলার তাণ্ডবে ধ্বংস হয়েছে দুই হাজারের বেশি কাঁচা ঘর-বাড়ি এবং পৌনে ৪০০ হেক্টর জমির পাকা ধান। মারা গেছে বিভিন্ন হাওরে থাকা ৮টি ভেড়াসহ ২২০টি গরু।
দিরাইয়ে কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে বসতগৃহে গাছ চাপায় এক গৃহিনীর মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নৌকাডুবিতে মারা যান এক কৃষক। ঝড় ও শিলার আঘাতে বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছেন ৮ জন। তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দিরাই উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপি কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে হতাহতসহ ক্ষয়ক্ষতির এমন ঘটনা ঘটে।
বিকেলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম গাছ চাপায় নিহত গৃহিনীর বাড়িসহ ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন।
দিরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. এরশাদুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে বসতগৃহের ওপর গাছ চাপায় গৃহিনী জুলনা বেগম (২৫) মারা যান। তার স্বামীর নাম জুয়েল কাজী।
একই ইউনিয়নে শিলাবৃষ্টিতে ৩৮৪ হেক্টর জমির পাকা বোরো ধান নষ্ট হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রনধীর চৌধুরী।
একই সময়ে কালিগুটা হাওরের আরমিশা বিলে নৌকা ডুবিতে চরনারচর ইউনিয়নের শ্যামারচর গ্রামের খলা হাটির কৃষক জালাল উদ্দিন (৫৫) নিখোঁজ হন।
বিকেল সাড়ে ৫টায় স্থানীয় জেলেরা জাল টেনে তার মরদেহ উদ্ধার করেন বলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বায়েছ আলম নিশ্চিত করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঝড়ে পৌর এলাকাসহ ৯ ইউনিয়নে ২ হাজারেরও বেশি কাঁচা ঘর সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়েছে। শিলা বৃষ্টি এবং বজ্রপাতে উপজেলার চরনারচর, সরমঙ্গল, করিমপুর, ভাটিপাড়া ও জগদল ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওরে অন্তত ২০০টি গরু মারা গেছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা।
ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে পৌর মেয়র আজিজুর রহমান বলেন, ক্ষতির ভয়াবহতা অনেক বেশি। নিঃস্ব-অসহায় লোকজনকে সান্তনা দেবার ভাষা নেই। সরকারি সহায়তা ছাড়া এসব লোকজন উঠে দাঁড়াতে পারবেন না।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সুনামগঞ্জে বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছিল। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বজ্রপাতে তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামের পাশের হাওরে কাজ করার সময় আবদুল জলিল (৪৫) নামের এক কৃষক মারা যান। একই সময় হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে জেলার ধরমপাশা উপজেলার মধ্যনগর থানার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের চালান্দী গ্রামের হোসেন আলী (৫০)।
এ ছাড়া সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের উলুতুল নোয়াগাঁও গ্রামের বজ্রপাতে ১০ জন কৃষক আহত হন এবং ৮টি ভেড়া মারা গেছে। আহতরা হলেন, আইনুল মিয়া (৩৫), সারোয়ার মিয়া (১৮), বাহা উদ্দিন (৫৫), কামাল উদ্দিন (৪৫), মিয়াজ উদ্দিন (২৪), শহীদুল্লাহ (৩৫), সোহেল মিয়া (২৫), জাহাঙ্গীর আলম (২২), আলমগীর মিয়াকে (১৯) সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী শাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, সদর উপজেলায় বজ্রপাতে আহতদের সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা সবাই শঙ্কামুক্ত আছেন।