ভূমিকম্পে শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত অনেক কিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে

সিলেটে শোকাহত নেপালী শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

Nepali Students at Sylhetসুরমা টাইম ডেস্কঃ সিলেটে অবস্থানরত নেপালি শিক্ষার্থীদের মন ভাল নেই। নেপালের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহৎ ভূমিকম্পে ইতোমধ্যে নিহতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে বলে দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশংকা কর্তৃপক্ষের। এখনো যে রাজধানী কাঠমন্ডু থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল লংঝুম ও আশপাশের পোখরা এবং গোখরা শহরে উদ্ধারকারী দলের বেশির ভাগই পৌঁছাতে পারেনি। কীভাবে ভাল থাকবে তাদের মন? নেপালে মা বাবা ভাই বোন আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের রেখে পরবাসে কারো ভালো থাকার কথা নয়। এদের অনেকেরই বাড়ী ঘর ও ভেঙ্গে শেষ হয়ে গেছে। শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, রাস্তাঘাট সবখানে ভাঙ্গণের নির্মম পদচিহ্ন রেখে গেছে ভয়াবহ ভূমিকম্প। দেশটিতে ১৯৩৪ সালের পর গত ২৫ এপ্রিল সাত দশমিক ৯ মাত্রার যে ভূমিকম্প হয়েছে। এতে রাগিব-রাবেয়া ও নর্থইষ্ট মেডিকেলে পড়–য়া অনেক নেপালী শিক্ষার্থীর আত্মীয়স্বজন বাড়িঘর ও সম্পদহারা হয়েছেন। এখনো অনেকে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগও করতে পারছেন না। আবার চাইলেও দেশে ফিরতে পারছেন না তারা। কারণ বিমানবন্দর বা সড়ক যোগাযোগও অচল হয়ে পড়েছে।
গতকাল দুপুরে সিলেট নগরীর পাঠানটুলায় রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নী ডাঃ স্বপন কুমার দাশের সহযোগিতায় কথা হলো নেপালী দুই ইন্টার্নী ডাক্তার অভিশেষ রিগমি ও নাবিন থাপার সাথে। এদের দু’জনের পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ থাকলেও আত্মীয় স্বজনদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আলাপকালে দু’জনই জানালেন, দেশের এই ভয়াবহ দুর্যোগের সময় আর্তমানবতার খাতিরে তারা দেশে ফিরতে চান। মানুষের পাশে দাঁড়াবেন বলে। কিন্তু ইচ্ছা করলেই সব সম্ভব হচ্ছে না। বেশ উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটছে তাদের।
অভিশেষ রিগমি :নেপালের রাজধানী কাঠমন্ডু থেকে প্রায় ১৩০-৩৫ কিলোমিটার দূরে চিতউম জেলা। সে জেলার ভরতপুর গ্রামে অভিশেষের বাড়ি। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল লংঝুম থেকে প্রায় দু’শ কিলোমিটার দুরে গ্রামটি। তবে রাজধানী কাঠমন্ডু সাথে লংঝুমের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। অভিশেষের বাবা শিবরজী রিগমি। রিগমি নেপালের বিখ্যাত একজন ফিল্ম ডিরেক্টর। তিনবার নেপালের জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন। মা গেনো রিগমি। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।
তারাপুর চা বাগানের স্নিগ্ধ ছায়াঘেরা পরিবেশে একটি রোস্তোঁরায় বসে কথা হয় তার সাথে। সুন্দর চেহারার মানুষটি কেমন যেনো অন্ধকার অমানিশায় ডুবে আছেন।
বাংলা হিন্দি আর ইংরেজি ভাষার মিশ্রনে আমাদের আলাপ হলো। প্রথমেই ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বললেন, অবস্থা খুবই খারাপ। এখনো কোন আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধব মারা গেছে কি না জানতে পারিনি। শুধু বড় বোন জানিয়েছে মা ভালো আছে।’ শনিবার রাত ১১টার দিকে মা গেনো রিগমি ও দুই বোন ভাবনা আগরওয়াল ও পল্লবী রিগমি ভালো আছেন বলে জেনেছেন। কিন্তু এরপর আর কোন যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না বলে জানালেন। অভিশেষ জানালেন, পরিবারের সদস্যরা নাকি এখনো ভয়ে তাবুতে খেলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
স্থানীয় নেপালি পত্রিকা গুলোর অনলাইন ভার্সন দেখিয়ে দেখিয়ে জানালেন, রাস্তার আইল্যান্ডের মাঝে শত শত মানুষ ঘুমিয়েছে। অনেকেই তাবুতেও আশ্রয় পাচ্ছেন না। ১৮৩২ সালে নেপালের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ভিমসেনের নামে গড়ে উঠা যে টাওয়ার ধ্বংস হয়ে গেছে সেটার পাশেই তাদের বাসা। এই টাওয়ার ও অনেক খেলার মাঠ গেছে। ভেঙ্গেচুরে। মুখটা কালো করে অভিশেষ তার মনের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করলেন, কি বলবো। কিছুই জানতে পারছি না। দেশ বা পরিবারকে সাহায্য করতে মন চাইছে। বাট আই হেভ নো সোউরস। আই ফিল রিয়েলী বেড।’
নাভিন থাপা :নাভিন থাপার বাড়ী কাঠমন্ডু থেকে এক ঘন্টার রাস্তা। ঝুমলজ জেলায়। তার বাবা বল বাহাদুর ও মা সাবিতুই থাপা। তাদের এক ভাই ও এক বোন। খুবই অশান্তির মধ্যে আছেন বলে জানালেন। এখন তার একটাই চাওয়া। যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরে যেতে চান। তার কথায়, ‘যত কষ্টই হোক কষ্টগুলো এদের সাথে থেকে শেয়ার করতে চাই।’ দেশের মানুষের জন্য কিছু একটা এখনই করতে চান। দেশের জন্য তার মত বাকিরাও বেশ উদ্বিগ্ন বলে জানালেন।
ফান্ড কালেকশনঃ রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজে প্রায় দুই শতাধিক নেপালি শিক্ষার্র্থী পড়ালেখা করেন। নাভিন থাপা ও অভিশেষ রিগমি দু’জনেই জানালেন, মেডিকেলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তারা অর্থ সংগ্রহ করে দেশের অসহায় মানুষের সাহায্যে দুতাবাসের মাধ্যমে দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। আর এর নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘ওয়াল্ড নেপালি স্টুডেন্টস ওরগেনাইজেশন (ডব্লিউএনএসও) এর শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশে বিভিন্ন মেডিকেল অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ফান্ড কালেকশন শুরু করেছেন। এছাড়া সিলেটের যারা নেপালি জনগণকে সহায়তায় এগিয়ে আসতে চান তারা অভিশেষ ও নাভিন থাপার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।