রানা প্লাজার দ্বিতীয় বার্ষিকী : ক্ষতিপূরণ আদায়ে জারা ও গ্যাপের সামনে ৩৫টি সংগঠনের বিক্ষোভ

রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে নিউইয়র্কে সমাবেশ ও র‌্যালি। ছবি-এনা।
রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে নিউইয়র্কে সমাবেশ ও র‌্যালি। ছবি-এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা: বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ঢাকার সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে নিহতদের স্মরণে নিউইয়র্কে যৌথ সমাবেশ করেছে। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে বাংলাদেশি পোশাকের অন্যতম বড় ক্রেতা মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘জারা’ ও ‘গ্যাপ’-এর প্রধান শো’রুমের সামনে বিক্ষোভ করেছেন নিউইয়র্কভিত্তিক প্রায় ৩৫টি আন্তর্জাতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
সমাবেশেন নেতৃত্বদানকারী অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবারের (অ্যাসাল) নারী নেত্রী মাজেদা উদ্দিন জানান, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে ১ হাজার ১৩৮ শ্রমিক মারা যান। প্রায় আড়াই শ্রমিক পঙ্গুত্ববরণসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু দুই বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্তরা আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। বাংলাদেশি পোশাকের অন্যতম প্রধান ক্রেতা জারার রানা প্লাজা ভিকটিমস কমপেনসেশন ফান্ডে ৩০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বাধ্যবাবধকতা রয়েছে। কিন্তু জারা মাত্র ১ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। এখনো ২৯ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ পাওনা রয়েছে।
মাজেদা উদ্দিন আরো জানান, জারার প্রতিষ্ঠাতা আমানসিও অরটেগা বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী হওয়া সত্ত্বেও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে গড়িমসি করছে। ক্ষতিপূরণ আদায় ও বিশ্ববাসীকে জানাতে গত ২৪ এপ্রিল (নিউইয়র্ক সময়) বিকাল ৫টায় ম্যানহাটনের ফিফথ এভিনিউ ও ১৭ স্ট্রিটে অবস্থিত জারার শো’রুমের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। নিউইয়র্কের ৩৫টি সংগঠন যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে।
এদিকে জারা ছাড়াও বাংলাদেশি পোশাকের আরেক অন্যতম বড় ক্রেতা গ্যাপ-এর সামনেও বিক্ষোভ করা হয়েছে। বিক্ষোভ সমাবেশ ছাড়াও এই দুই প্রতিষ্ঠাতের সামনে র‌্যালি বের করা হয়। বিক্ষোভকারীরা এসময় জারা, গ্যাপ, জেসিপেনি, ম্যাংগো ও ওয়ালমার্টের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এই বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন অ্যাসালের নারী নেত্রী মাজেদা উদ্দিন, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন সেন্টারের প্রধান অধিকর্তা সারা ফাউন্ডারস, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের অ্যাম্বাসেডর মালিক নাদীম আবিদ, এন মজুমদার, অ্যাক্টিভিস্ট হাকিকুল ইসলাম খোকন প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে রানা প্লাজা ভিকটিমস কমপেনসেশন ফান্ডের অর্থ পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে গার্মেন্ট শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে আর যেনো কোনো রানা প্লাজা ট্রাজেডি না হয়। আর যেনো একজন শ্রমিককেও জীবন দিতে না হয়।
এদিকে রানা প্লাজার ট্রাজেডির দ্বিতীয় বার্ষিকীতে শুক্রবার বিকালে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় সমাবেশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ‘দেশিজ রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভমেন্ট (ড্রাম)। সমাবেশে বক্তারা গার্মেন্ট শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নিহতদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশের নেতৃত্ব দেন ড্রামের কমিউনিটি অর্গানাইজার কাজী ফৌজিয়া এবং ড্রামের লিডার সায়মা খান। আজ ২৫ এপ্রিল চিন্ডেলপ্লেসের সামনে অনুরূপ সমাবেশ অনু্িষ্ঠত হবে।