হাওড়পাড়ের কান্না: তুমি শুনতে কি পাও?
॥ এমজেএইচ জামিল ॥
আমি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী গ্র্যাজুয়েড নাগরিক হয়েছি। এতে আমার কোন কৃতিত্ব বা গৌরব নেই। আমি এক কৃষকের ছেলে সেটাই আমার কাছে গৌরবের। আমার রক্তে আমার অস্তিত্বের সাথে সম্পর্ক হল ধানের শুধুই ধানের। প্রাইমারী স্কুল থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা যা কিছু অর্জন সম্ভব হয়েছে এর পিছনে একমাত্র যোগানদাতা ছিলেন কৃষক বাবা। আর সব এসেছে এই সোনালী ধান থেকে । তাই আমার অস্তিত্বের সবটুকুই জুড়েই শুধু ধান আর ধান।
কয়েকদিনের বৃষ্টির পানিতে কষ্টের ( দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওড়) সোনালী ধান আজ পানির নিছে। কাল যখন বাবার কান্না ভরা কণ্ঠে শুনলাম আর বোধ হয় ধান তুলা গেলনা। সেই অনুভুতিটা শুধু আমার নিজের বাবার নয় । হাওড়াঞ্চলের প্রতিটি বাবার এমন বোবা কান্নায় বুকটা ফেটে যায়। এই খবর শোনা মাত্রই নিজেকে আর সংবরন করতে পারছিনা। মন ছুটে যায়, তখনই বাড়ী চলে যাই। কিন্তু আগামীকাল শুক্রবার এলএলবি পরীক্ষা থাকায় ইচ্চা থাকা সত্ত্বেও বাড়ীতে যেতে না পারার ব্যাথা আমাকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছে। পরীক্ষার প্রস্তুতিটুকু নিতে পারছিনা। বাবা মা বুঝিয়ে বললেন বাবারে মন খারাপ করিস না, আল্লাহ ধান দিয়েছেন তিনি যদি কেড়ে নেন আমাদের কি সাধ্য আছে তা ফেরানোর। সর্বাবস্থায় আল্লাহর শোকর কর বাবা। কথাগুলো আমাকে প্রবোধ দেয়ার জন্য হলেও এর পেছনে লুক্কায়িত রয়েছে মা-বাবার কান্না। এই কান্না শুধু কোন প্রতীকি মা-বাবার নয়। এই কান্না গোটা হাওড়পাড়ের। এই কান্না দেখার কেউ নেই।
গতকাল বুধবার ছবি গুলো জামলাবাদ গ্রামের পুর্ব পাশের সাংহাই হাওড় থেকে তুলে পাঠিয়েছে ছোট ভাই জয়নুল হক জয়। এই ছবিটি তোলা হয়েছে গতকাল বুধবার। আজ বৃহস্পতিবার এই ধান আর ভেসে নেই। পানির নিছে তলিয়ে গেছে।
নববর্ষের দিনে একটি কবিতা লিখে পোষ্ট করেছিলাম
যদি না উঠে কৃষকের গোলায় সোনালী ধান
কিসের উ”চ্ছাস, পহেলা বৈশাখ
সবই নিস্প্রান।
কবিতাটি আবেগ থেকে লিখেছিলাম। আজ সেই কবিতাটির সারমর্ম উপলব্দি করছি। আর নিজের অজান্তে চোখের অশ্রু ঝরাচ্ছি। পহেলা বৈশাখে বর্ষবরনের নামে তোমরা বস্ত্রহরন সহ কত নারকীয় তান্ডব করেছো। তোমরা ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশের বিজয়ে আনন্দ উল্লাসে মত্ত। ৩ বারের প্রধানমন্ত্রীর গাড়ীতে বারবার হামলা হল সেখানেও আমি নিরব থেকেছি। কিন্তু যখন আমার অস্তিত্ব সোনালী ধান পানির নিছে তলিয়ে গেল তখন আমি আর নিরব থাকতে পারিনা। তাই বিবেকের তাড়নায় কলম ধরে কিছু লিখার চেষ্টা করছি। পহেলা বৈশাখের নামে তোমরা নগ্ন উৎসবে মেতে উঠে আসমানী গজন নিয়ে এসেছো। তোমরা ইলিশ মাছ আর পান্তা ভাতের নামে গরীব অসহায় কৃষকের সাথে উপহাস করেছো। তোমরা বিত্তবান তোমরা হাই সোসাইটির মানুষ। তোমাদের প্রজন্ম এই কৃষকের কষ্ঠার্জিত ধান তোলার ইতিহাস কোনদিন জানতে চাইবেনা। কিন্তু আমি এক কৃষকের ছেলে সারাজীবন কৃষক সমাজের পক্ষে কথা বলেই যাব। আল্লাহ যেন সেই তৌফিক দান করেন সবার কাছে এই দোয়া কামনা করছি। আর সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে বিনীত আবেদন করছি। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপুরন দেয়া হোক। আর না হলে এই অসহায় কৃষকের অশ্রু আপনাদের ধ্বংস অনিবার্য করে তুলবে। আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠবে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুলিশী পাহারায় নারীর বস্ত্রহরনের মত নগ্ন উল্লাস করেছো। এবার রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় সারাদেশের মসজিদে মসজিদে বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করুন। যে কয়টা হাওড় তলিয়ে গেছে তাদের ক্ষতিপুরনের ব্যাবস্থা করুন। আর যে কয়টা এষনও বাকী আছে তা রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করুন। আল্লাহ আমাদের প্রকৃত বাস্থবতা উপলব্দি করার মাধ্যমে অসহায় কৃষকের পাশে দাড়াঁনোর তৌফিত দিন। আমিন।