বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িতে হামলা ক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি
নিউইয়র্ক থেকে এনাঃ বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তার দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে ভোট চাইতে এবং গণসংযোগ করতে গিয়ে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে পড়েছেন। সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা তার গাড়িতে হামলা করেছে। একবার নয় কয়েকবার। বেগম খালেদা জিয়ার উপর হামলা নির্বাচনকেও প্রশ্নবৃদ্ধ করেছে। অনেকেই এখন সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। কারণ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে না। একদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে জামিন দেয়া হচ্ছে না, অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় বেগম খালেদা জিয়ার উপর হামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সঞ্চার করেছে এবং তারা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার উপর সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের নগ্ন হামলার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে। বেগম খালেদা জিয়ার উপর হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির বিভিন্ন গ্রুপ, বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন এবং গ্রেটার ঢাকা জাতীয়তাবাদী ফোরাম গত ২০ ও ২১ এপ্রিল ( নিউইয়র্ক সময়) জ্যাকসন হাইটসের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। এ সব বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার উপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। তারা ক্ষোভের সাথে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে সারা বাংলাদেশে আগুন জ্বলবে এবং এই আগুন থেকে শেখ হাসিনাও রক্ষা পাবেন না।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ স¤্রাট এবং সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি গিয়াস আহমেদ ও সাবেক সহ সভাপতি আলহাজ্ব সোলায়মান ভূইয়ার নেতৃত্বে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় গত ২১ এপ্রিল জ্যাকসন হাইটসের গুরমেট রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
একই দিন সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. মজিবুর রহমান মজুমদার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, বর্তমান অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ও তার কতিপয় মন্ত্রীর বক্তব্যের জের ধরেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশে বার বার হামলা, এ হামলা সরকারের সন্ত্রাসী, অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী মানসিকতার বহি:প্রকাশ। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে ২০ ও ২১ এপ্রিল রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করে ভাঙচুর চালিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে তাকে হত্যার করার উদ্দেশে হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই সকল সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই আবগত আছেন যে, গত ২০ এপ্রিল তৃতীয় দিনের মত
সিটি নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় বের হন খালেদা জিয়া। গুলশানের বাসা থেকে বের হয়ে বিকাল পাঁচটার পর কাওরান বাজাররের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। খালেদা জিয়া গাড়িতে বসেই রাস্তার দুই পাশের লোকজনকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। তার গাড়ির পেছনে ছিল চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী, কর্মকর্তা ও মিডিয়াকর্মীদের কয়েকটি গাড়ি। গাড়িবহর ধীরে ধীরে কিচেন মার্কেটের দিকে এগোতে থাকে। বাপেক্স ভবনের সামনে গাড়িবহর থামানোর পর সেখানে স্থানীয় লোকজন ও নেতাকর্মীরা জড়ো হন। এ সময় খালেদা জিয়ার গাড়ির ওপরের কাচ সরিয়ে হ্যান্ডমাইকে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। বক্তৃতা
চলাকালেই আশপাশের ভবনের ওপর থেকে খালেদা জিয়ার অবস্থান লক্ষ্য করে ইটের টুকরো ছোঁড়া শুরু হয়। বিষয়টি লক্ষ্য করে খালেদা জিয়া নিজেই হামলাকারীদের উদ্দেশে বলেন, হামলা বন্ধ করেন। এরপরও ইটপাটকেল ছোঁড়া বন্ধ হয়নি। এ সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা জয়বাংলা সহ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ও দলের কর্মীরা তৎপর হলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা কিছুটা পেছনে চলে যান। তাদের একটি অংশ ওয়াসা ভবনের সামনের ও সামিট ভবনের সামনের রাস্তায় মিছিল করছিল। একপর্যায়ে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের পেছন থেকে গুলি, হামলা ও ভাঙচুর শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে খালেদা জিয়াকে গাড়িতে রেখে চারপাশে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দল সিএসএফের সদস্য। ফজলুল করিম, ফারকি হোসেন ও গাড়িচালক শাহজাদাসহ কয়েকজন আহত হন। হামলার সময় ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পথচারীরা যে যেদিকে পারেন পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। হামলা চলাকালেই খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের কাছেই কয়েকজন পুলিশ সদস্য অবস্থান করছিলেন। ওই এলাকা আগে থেকে দায়িত্বে থাকা এই পুলিশ সদস্যরা প্রথমে আওয়ামী সন্ত্রাসী হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করে তোপের মুখে পড়েন। একপর্যায়ে তারাও সেখান থেকে সরে যান। হামলা চলাকালেই খালেদা জিয়ার গাড়িবহর পেট্রোবাংলা ভবনের দিকে নিরাপদে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে সামনের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা থাকায় হামলাকারীরা বেশ কিছুক্ষণ বহরের পিচু পিচু ধাওয়া করে। হামলার সময় ছবি তুলতে গেল আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলার শিকার হন কয়েকজন ফটো সাংবাদিক। এক পর্যায়ে গাড়িবহর চলতে শুরু করলে হামলাকারীরা পেছন ফিরে মিছিল শুরু করে। কাওরান বাজারের মাটি, ছাত্রলীগের ঘাঁটি বলে তাদের মিছিল দিতে দেখা যায়। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিজিএমইএ ভবন-এর সামনের রাস্তা দিয়ে মগবাজার হয়ে কাকরাইলে দিকে চলে যায়। এ সময় ওই এলাকার রাস্তায় কয়েক দফা ঘুরে বেইলি রোড থেকে ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন। এ সময় তার বহরে দলীয় নেতাকর্মীরাও যোগ দেন। বেইলি রোড থেকে মালিবাগ মোড় হয়ে শাহজাহানপুর মোড়ে পৌঁছান খালেদা জিয়া। সেখানে দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান করছিলেন। পরে খিলগাঁও রেলগেট, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া ও আশপাশের এলাকায় প্রচারণা চালান খালেদা জিয়া। ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় ঢাকা ফকিরাপুল এলাকায় আবারো ও খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে আওয়ামী লীগের গুন্ডা বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। দুভার্গ্যজনক হলেও সরকারের আসনে বসে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সবাই মিথ্যাচার করছে। যেখানে ভিডিও ফোটেজ দেখে সব কিছু চেনা যায় সেখানে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। একবিংশী শতাব্দীতে এসেও সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, আসন্ন সিটি করেপোরেশন নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই সরকার এ ধরনের ফ্যাসিবাদী ও সন্ত্রাসী তান্ডবের আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এটি সরকারের অগন্ত্রাতিক, ফ্যাসিষ্ট ও সন্ত্রাসী চরিত্রের প্রতিফলন। এ দিকে দলীয় গুন্ডাদের সন্ত্রাসী হামলা ও পুলিশের আইজিপিও নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় তার বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রতিহত করতে প্রয়োজনে আইন প্রণয়নের জন্য ওপেন বক্তব্য দিয়েছে। আওয়ামী গুন্ডা বাহিনীকে খালেদা জিয়ার ওপর হামলা করার জন্য এই উস্কানি দিয়েছে। আমরা সরকারকে স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অব্যহত রেখে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত রাখা যাবে না। জনসর্মথনের যে ¯্রােত দেখা যাচ্ছে তিন সিটিতেই বিজয় লাভ করবে বিএনপি’র প্রার্থীরা। তিনি বলেন, আপনারা জানেন, অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ও তার দোসরা উস্কানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে একের পর এক সিটি নির্বাচনে আচরণ বিধি লংঘন করে চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অতিসত্ত্বর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবী এবং সিটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। জনগণ আগামী ২৮শে এপ্রিল সিটি নির্বাচনে গুলি, বুলেট, রক্তের জবাব ব্যালটের মাধ্যমে দেবে। বিক্ষোভ সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসীম ভুইয়ার নেতৃক্বে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় গত ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের খাবারবাড়ি রেস্টুরেন্টের সামনে। জসীম ভুইয়ার সভাপতিত্বে এবং স্টেট বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদের পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহিদুর রহমান, আব্দুল খালেক আকন্দ, আশরাফ হোসেন, সেলিম রেজা, রুহুল আমিন নাসির, জাফর তালুকদার, মোস্তাক আহমেদ, আলমগীর হোসেন, ওয়াহেদ আলী মন্ডল, মাহমুদুর রহমান, মোহাম্মদ নূর আলম, মনি আক্তার, জীবন সফিক, রইস উদ্দিন, হোসেন মেম্বার, রকিব উদ্দিন, সাদি মিন্টু, সালাউদ্দিন নোমান, আবু তাহের, জসীম উদ্দিন, সামসুদ্দিন, সুমন মিয়া ও আনোয়ার হোসেন লেবু।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বেগম খালেদা জিয়ার উপর হামলার নিন্দা জানান এবং দোষীদের অভিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি করেন। তারা আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে সারা বাংলাদেশে আগুন জ্বলবে, সেই আগুনে শেখ হাসিনাকেও পুড়ে মরতে হবে।