যেভাবে চলছে জুলেখা নগর চা বাগান

Rangeecchara  BSF Campমশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজারঃ বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তৎকালীন কেরামত পুলিশ এর মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৮ শত ৬১ দশমিক ২৬ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জুলেখা নগর চা বাগান। সৈয়দ টি এন্ড লেন্ডস কোঃ লিঃ এর স্বত্ত্বাধীকারী সৈয়দ উবেদুর রহমান ১৯৮৮ সালে বাগানটি পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহন করেন। পর্যায়ক্রমে বাগানের পরিধি ও উন্নতি দেখে বাগানের অন্যান্য অংশীদার তার ভাতিজারা বাগানটি বিক্রি করে দিতে চাইলে সৈয়দ উবেদুর রহমান‘র পুত্র সৈয়দ হাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী সৈয়দা গোলশান আরা তা কিনে নেন। সৈয়দা গোলশান আরা ২০০৪ সাল থেকে সৈয়দ টি এন্ড লেন্ডস কোঃ লিঃ এর পরিচালক হিসাবে বাগানের দায়িত্বভার গ্রহন করতেই তার উপর নেমে আসে একের পর এক নানামুখী ষড়যন্ত্রÍ। সব বাঁধা উপেক্ষা করে এবং সরকারী কোন অনুদান বা সহযোগীতা ছাড়াই বাগানটি দিন দিন উন্নত হতে থাকে। প্রায় Julekhanagar Tea১০ একর ভূমি ক্রয় করে বাড়ানো হয় বাগানের পরিধি। সর্বশেষ ২০১১ সাল থেকে পুনরায় ভূমি মন্ত্রনালয় থেকে বাগানটির ইজারার মেয়াদ আরো ৪০ বছর বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে বাগানের শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৮ শত। ২ শত শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। নিয়ম মাফিক সাপ্তাহিক মজুরি ভিত্তিতে মজুরি প্রদান করা হয়। সরকার বাহাদুর পাচ্ছেন নীট ৩৭%, বছরে ২৫-৩০%। বাগানটির বর্তমান উৎপাদন হার বার্ষিক ৩ লাখ কেজি।
শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে সার্বক্ষণিক হাসপাতাল যাতে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালণ করছেন ১ জন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট, ১ জন কম্পাউন্ডার, ১ জন মিডওয়াইফ। চা শ্রমিক সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য রয়েছে জুলেখা নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়, রয়েছে মুসলমানদের জন্য মসজিদ, হিন্দুদের জন্য মন্দির ও খৃষ্টানদের জন্য গীর্জা। বাগানের পরিচালক, কর্মকর্তাবৃন্দ ও শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে সৌহার্দ্রপূর্ণ ও বন্ধু ব্যৎসল সম্পর্ক। একান্ত আলাপচারিতায় বাগানের পরিচালক সৈয়দা গোলশান আরা একে একে তুলে ধরলেন বাগানের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যার কথা। বললেন পুরো জীবনটাই শেষ হতে চলছে আমার। বাগানের শ্রমিকরাই আমার সব, তাদের সুখেই আমি সুখি। বাগান শ্রমিকরাই যদি ভাল না থাকে তাহলে আমরা কিভাবে ভাল থাকব। তাই, আমি কোনদিন এই বাগানের শ্রমিকদের কোন ক্ষতি হতে দিবনা। সরকার যথাযথ ভ্যাট, ট্যাক্সসহ সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা আদায় করলেও মালিকদের সুবিধা-অসুবিধাটা সরকার দেখছেনা। একে একে তুলে ধরলেন রাষ্ট্রীয় কিছু সমস্যা। বাংলাদেশের লাংলী ছড়া (ত্রিপুরা রাজ্যের রাঙ্গীছড়া চেকপোষ্ট) , কমলপুর সীমানা পিলার নং- ১৯২১/১/এস ও ১৯২১/২/এস এর তাদের বাগানের সীমানা প্রাচিরে নেই কোন বিজিবি- যার ফলে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী বাগানের শ্রমিকরা নির্যাতনের শিকার হন প্রতিনিয়ত। যখন তখন ত্রিপুরারা এসে বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে শ্রমিকদের নির্যাতন, অবৈধভাবে পিস্তল, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, হিরোইনসহ, তাদের আন্ডার ওয়ার্ল্ড‘র সদস্য অপরাধী সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ও মানবপাচার করে থাকে- যার কোন প্রতিবাদ কেহ করতে পারেনা। ভারতীয়রা সকাল ৮টার মধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং অপকর্ম শেষে বিকাল ৪টার মধ্যে আবার ত্রিপুরায় ফিরে যায়। নিজ প্রচেষ্টায় বিজিবি ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমি বরাদ্ব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশীরা উপকৃত হবে। বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের কিছু বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য নিয়ে যান ত্রিপুরা রাজ্যের রাঙ্গীছড়া চেকপোষ্ট‘র সামনে নো ম্যানস ল্যন্ডের কাছাকাছি। সেখানে ৮ ও ৯ নং সেকশনের পাশে ত্রিপুরার একটি সীমানা প্রাচির ঘেষে চোরাকারবারিরা বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে থাকে। সেই অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য বাগানের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি গেইট নির্মান করা হয়েছিল। কিন্তু, পরদিনই শ্রীমঙ্গলের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি গেইটগুলো ভেঙ্গে ফেলেন এবং আর যাতে গেইট নির্মান করা না হয় সেজন্য সার্বক্ষণিক তৎপড়তা অব্যাহত রেখেছেন। সৈয়দা গোলশান আরা এসব ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন- ভারতীয় অনুপবেশের কারণে আমি নিজে এবং আমার শ্রমিকরা নিপীড়িত, নির্যাতীত ও আতংকিত থাকি প্রায় প্রতিনিয়ত। এতেকরে বাগানের উন্নয়ন হচ্ছে বাধাগ্রস্থ। তাই, আর কিছু না হোক অন্তত এখানে জরুরী ভিত্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের দাবী জানান তিনি।