স্কুলছাত্র সাঈদ খুনের ঘটনায় পুলিশের সোর্স গেদার স্বীকারোক্তি

Geda-and-Sayeedসুরমা টাইমস ডেস্কঃ স্কুল ছাত্র আবু সাঈদ খুনের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে পুলিশের সোর্স আতাউর রহমান গেদা মিয়া। রোববার সিলেটের মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট-১ সাহেদুল করিমের আদালতে সে খুনের দায় স্বীকার করে। গত ১৪ মার্চ স্কুল ছাত্র আবু সাঈদের লাশ উদ্ধারের দিনই পুলিশ গেদাকে গ্রেপ্তার করেছিলো। কিন্তু গেদা মুখ খুলেনি। গেদা সহজেই খুনের ঘটনা স্বীকার না করায় পুলিশ ১৬ মার্চ আদালত থেকে তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয়। প্রথম দফা রিমান্ডে গেদা খুনের ঘটনার দায় স্বীকার না করলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলো বলে জানায়। কিন্তু সে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ কারনে ১৯ মার্চ পুলিশ ফের আদালতে হাজির করে গেদার ৭দিনের রিমান্ড জানায়। আদালত তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিলেটের কোতোয়ালি থানার এসআই ফয়েজ আহমদ জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে সোর্স গেদা মিয়া খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে এবং সে সত্য কথা বলায় এবাদুর ও রাকিবের জবানবন্দির সঙ্গে তার বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়।
এদিকে, দ্বিতীয় দফা তিন দিনের রিমান্ড শেষে  রোববার বেলা ২টার দিকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গেদাকে সিলেটের সিএমএম-১ এর আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় গেদার মাথায় ছিলো হেলমেট ও পরনে ছিলো বুলেটপ্র“প জ্যাকেট। আদালতে হাজির করার পর বেলা আড়াইটা থেকে আদালতে তার জবানবন্দি শুরু করা হয়।
আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে গেদা জানায়, ‘টাকার জন্য সে ও বাকী চারজন মিলে স্কুল ছাত্র আবু সাঈদকে অপহরনের পরিকল্পনা করে। নগরীর জিন্দাবাজারে একটি রেস্টুরেন্টে বসে তারা অপহরনের পরিকল্পনা করে। রেস্টুরেন্টের ওই বৈঠকে সে ছাড়াও ওলামালীগ নেতা রাকিব, মাছুম ও এক সিকিউরিটি কর্মচারী ছিলো। ১০ মার্চ সন্ধ্যায় তারা পরিকল্পনা করে চলে যায়। কথা মতো পরদিন ১১ মার্চ বুধবার তারা নগরীর রায়নগর, দর্জিবন্দ এলাকায় অবস্থান নেয়। বেলা ১১ টার দিকে সে ও মাছুম মিলে অপহরন করে আবু সাঈদকে। অপহরনের সময় সাঈদের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরা হয়। প্রথমে তার ( গেদা) বাসায় এবং পরে সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে পুলিশ কনস্টেবল এবাদুরের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় আবু সাঈদকে।’ গেদা আদালতে আরও জানায়, ‘অপহরনের পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে তারা খুন করে আবু সাঈদকে। আবু সাঈদকে আগের রাতে মুখ বেধে রাখা হয়েছিলো।’ খুনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে গেদা মিয়া জানায়, ‘খুনের সময় কেউ আসছে কী না সেজন্য পাহারা দেয় রাকিব। আর এবাদুর স্কুল ছাত্র সাঈদের পা ও মুহিবুল ইসলাম মাছুম শরীর ধরে রাখে। এরপর আমি গলা টিপে আবু সাঈদকে খুন করি। খুনের পর লাশ গুম করে রাখার পরিকল্পনা করা হয়। সেজন্য ৭টি বস্তার ভেতরে লাশ বন্দি করে চিলেকোটায় রেখে দেই।’ গেদা জানায়, খুনের পর সে মোবাইল ফোনে সাঈদের পরিবারের কাছে টাকা দাবি করে। এরপর সে আবু সাঈদের বাসায় যায়। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলে। আবু সাঈদকে খুজে বের করতে সেও পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে বলে জানায়। পরিবারের কেউ যাতে তাকে সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য সাঈদের বাসায় গিয়েছিলো বলে জানায় গেদা। এছাড়া, রাস্তায় সাঈদের মামাদের সঙ্গে দেখা হলেও সে এ ব্যাপারে কথা বলেছে। সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। আদালতে গেদা অজ্ঞাত এক ব্যক্তির পরিচয় বলেছে। ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি সিকিউরিটি কোম্পানীর কর্মচারী। গেদার পরিচিত। এ কারনে খুনের ঘটনার শুরু থেকে ওই সিকিউরিটি কর্মচারী তার সঙ্গে ছিলো। খুনের পর আর সিকিউরিটি কর্মচারীর সঙ্গে তার দেখা হয়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রোববার আদালতপাড়ায় সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে ওই সিকিউরিটি কর্মচারীর পরিচয় বলেছে গেদা। কিন্তু গোপনীয়তার স্বার্থে তারা তার পরিচয় প্রকাশ করছেন না। তবে, তাকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য মামার বাসায় বেড়াতে যাওয়ার পথে ১১ মার্চ বুধবার সকাল ১১টার দিকে নগরীর রায়নগর এলাকা থেকে অপহৃত হয় চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আবু সাঈদ (৯)। এরপর ১৪ মার্চ শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে নগরীর কুমারপাড়া ঝর্ণারপার এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমানের বাসা থেকে তার গলিত বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিশেষ কৌশলে এসএমপি’র বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল এবাদুর ছাড়াও আটক করা হয়-জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম রাকিব ও র‌্যাব-পুলিশের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা মিয়াকে।
১৫ মার্চ রোববার এ ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর। পরদিন সোমবার স্বীকারোক্তি দেয় রাকিব। আর গেদাকে সোমবার থেকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অস্পষ্ট জবাব দেয়ায় বৃহস্পতিবার তাকে দ্বিতীয় দফায় তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রোববার রিমান্ড শেষ হওয়ার পর তাকে আদালতে আনা হলে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) রহমত উল্যাহ আদালতে গেদার স্বীকারোক্তি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।