দক্ষিণ সুরমার ফাইজা হত্যা : আদালতে ঘাতক স্বামীর জবানবন্দী

Faiza and Husbandসুরমা টাইমস ডেস্কঃ আদালতে স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করলো ঘাতক আশিকুর রহমান সুমন। দাম্পত্য কলহের জের ধরেই স্ত্রী ফাইজা বেগমকে (১৯) বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। এরপর ঘরের তীরের সাথে স্ত্রীর লাশ ওড়না দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে এবং ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে বাথরুমের জানালা দিয়ে সে বেরিয়ে আসে। শনিবার বিকেলে ৩ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত সিলেট মহানগর মুখ্য হাকিম (সিএমএম) আদালত-১ এর বিচারক সাহেদুল করিম তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধি রেকর্ড করেন। এর আগে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে সুমন।
জবানবন্দিতে সুমন জানায়, ঘটনার দিন ইফতারি নিয়ে তার শ্বশুরালয় থেকে মেহমান আসার কথা। তাই হত্যার পর ঘর থেকে বেরিয়ে এসেই রান্নাঘরে বোনের সাথে রান্নায় সাহায্য করে। হত্যার বিষয়টি পরিবারের সবার কাছে লুকিয়ে রাখে সে। আদালত সূত্র সুমনের জবানবন্দির বরাত দিয়ে জানায়, বেলা ১২ টার দিকে ঘরের দরজায় গিয়ে স্ত্রীকে ডাকাডাকি করে। এসময় সুমন পরিবারের সকলকে জানায়, ‘ফাইজা ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।’ অনেক ডাকাডাকির পর সে নিজেই দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে। এর সব কিছুই ছিল লোক দেখানো।
আদালতে সুমন জানায়, তার মা হারা ৬ বছরের ছোট ভাইকে দেখতে পারতো না ফাইজা। ছোট ভাইটি প্রায় সময় এসে দরজায় ডাকাডাকি করতো। তা তার সহ্য হতো না। এ নিয়ে স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটির জের ধরে স্ত্রীকে হত্যা করে সে। বিকেল ৫ টায় জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আদালতের নির্দেশে আশিকুর রহমান সুমনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুরছালিন।
এদিকে, শনিবার বিকেল ৩ টায় ময়না তদন্ত শেষে ফাইজার মৃতদেহ তার পিতার কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। সন্ধ্যায় দক্ষিণ সুরমার কুচাই এলাকায় পিত্রালয়ে পারিবারিক কবরস্থানে ফাইজার দাফন সম্পন্ন হয়।
উল্লেখ্য, নগরীর দক্ষিণ সুরমার কুচাই গ্রামের ফারুক আহমদের কন্যা ফাইজা বেগমের সাথে দক্ষিণ সুরমা থানার খোজারখলা ১ নং রোডের এ/ব্লকের ১১৬ নম্বর বাসার সালেকুর রহমানের পুত্র আতিকুর রহমান সুমনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এক পর্যায়ে ঘটনার ৪০ দিন আগে তাদের দু’জনের বিয়ে হয়। গত শুক্রবার সকালে আতিকুর রহমান সুমন তার স্ত্রী ফাইজা বেগমকে পারিবারিক কলহের জের ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এক পর্যায়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সে স্ত্রীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের গ্রিলের সাথে তার লাশ ঝুলিয়ে রেখে ফাইজা আত্মহত্যা করেছে বলে নাটক সাজায়। ওই দিন বিকেল ৩ টায় খোজারখলার ১নং সড়কের ১১৬ নাম্বার বাসার ঘরের একটি কক্ষ থেকে ফাইজার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে আটককৃত শ্বশুর ছালেক মিয়া, ননদ ফাতেমা বেগম ও দেবর মামুন আহমদকে গতকাল শনিবার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। স্বামী আশিকুর রহমান সুমনকে একমাত্র আসামী করে দায়ের করা হত্যা মামলায় গতকাল জবানবন্দি শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।
কুচাই ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কামরুজ্জামান কামাল জানান, ফাইজার ময়না তদন্ত শেষ হয়েছে। তার মরদেহ ডায়বেটিক হাসপাতালের মর্চুয়ারিতে রাখা হয়েছে। আজ ফাইজার বড় ভাই সায়মন দু’বাই থেকে দেশে ফেরার কথা। সে দেশে ফিরলে ফাইজার দাফন আজ বিকালে তার বাবার বাড়িতেই সম্পন্ন হবে বলে তিনি জানান।