নগরীতে রাতে ৩ ট্রাকে পেট্রলবোমা : চালক দগ্ধ
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ হরতাল-অবরোধের ৪২ দিন অতিবাহিত হয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সোবহানের রায় ইস্যু। গতকাল হরতাল-অবরোধ ইস্যুতে নগরীতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সোবহানের রায়ের পরই নগরীতে তান্ডব চালায় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। রাতে সুবিদবাজার, উপশহর ও দক্ষিণ সুরমায় তিনটি পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলা করেছে। এতে দক্ষিণ সুরমায় ট্রাক চালক অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন।
গতকাল বুধবার সকালে ও দুপুরে নগরীর কুমাড়পাড়া, মহাজনপট্টি এলাকায় তারা ককটেল বিস্ফোরণ ও বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। রাত সাড়ে ৮টায় নগরীর সুবিদবাজার সংলগ্ন ফাজিলচিশতে মালবাহী একটি পিকআপে পেট্রলবোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া পেট্রলবোমা বিস্ফোরণে গাড়িটির সম্মুখপ্রান্তে আগুন ধরে যায়, রাত সাড়ে টায় উপশহর সি-ব্লকের একটি বাসার সামনে পার্কিংয়ে রাখা সিলেট-ট-৬৩১১ ট্রাকে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা।
রাত পৌনে ১০ টায় ঢাকা মেট্রে-ট-১৪-৮৮৯৯ একটি মালবাহী ট্রাকে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দৃর্বৃত্তরা। এতে ট্রাক চালক দগ্ধ হন। তাকে সাথেসাথে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর মহাজনপট্টি এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ওই এলাকায় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় । খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ২৩ রাইন্ড গুলি ছোঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই সময় ২ জনকে আটকও করে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোবহানীঘাট ও উপশহর এলাকা থেকে কাষ্টঘর সড়ক দিয়ে মহাজনপট্টিতে আসেন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা পরপর বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। তারা ওই সময় একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশার গ্লাস ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে ২৩ রাউন্ড গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে।
এসময় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান। এরপর পুলিশ মহাজনপট্টি এলাকায় ব্যাপক তল্লাশী চালায়। সেখান থেকে জামায়াত সন্দেহে ২জনকে আটক করা হয়। তবে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন আটক দুইজন ব্যবসায়ী। ওই দুই ব্যবসায়ীকে আটকের প্রতিবাদে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিক সড়ক অবরোধ করেন। আপরদিকে, রায়ের প্রতিবাদ ও হরতাল অবরোধ সমর্থনে নগরীর কুমারপাড়া এলাকায় ঝটিকা হামলা করে শিবির নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ৩টি গাড়ি ভাঙচুর করে, কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে কুমারপাড়া এলাকায় কয়েকজন শিবির নেতাকর্মী জড়ো হয়ে ঝটিকা হামলা চালায়। এ সময় তারা একটি ট্রাক ও ২টি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করে। গাড়ি ভাঙচুর শেষে পালানোর সময় শিবির নেতাকর্মীরা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে টাইলস বহনকারী একটি পিকআপ (ঢাকা মেট্রো ন-১৮-০৯৫৬) নবীগঞ্জের উদ্দেশ্যে সুবিদবাজার এলাকা অতিক্রম করছিল। ফাজিলচিশত এলাকা সংলগ্ন তারাদিন রেস্টুরেন্টের সামনে পৌছামাত্র পিকআপে পেট্রোলবোমা ছুড়ে দুর্বৃত্তরা, এতে গাড়িটির সম্মুখপ্রান্তে আগুন ধরে যায়। এসময় স্থানীয়রা আগুন নেভাতে এগিয়ে আসেন। আগুনে গাড়িটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও স্থানীয়রা আগুন নেভাতে সক্ষম হন। কোতোয়ালী থানার ওসি আসাদুজ্জামান গনমাধ্যমকে জানান, মহাজনপট্টিতে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা নাশকতা করার চেষ্টা করে। পুলিশ সাথেসাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ২৩ রাউন্ড গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এসময় জামায়াত নেতারা পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় ২ জনকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত চলছে যদি তারা সত্যিই ব্যবসায়ী হন একং নাশকতার সাথে জড়িত না থাকেন তাহলে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। তিনি বলেন, জড়িত থাকলে ছাড়ার প্রশ্নই ওঠেনা। কুমারপাড়া গাড়ি ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই; তবে কিছু পাওয়া কিংবা ঘটনার সত্যতা পাইনি।
রাত পৌনে ১০টায় দক্ষিণ সুরমার সাত মাইল এলাকায় ট্রাকে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম খান জানান, দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় ট্রাকটিতে আগুন ধরে যায়। পুলিশ ও স্থানীয়রা ও দমকলবাহিনীর সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রনে এনেছেন। ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন ট্রাকের চালক। তাকে ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, সব ধরণের নাশকতা এড়াতে নগরীতে ছিল র্যাব ও পুলিশের টহল। নগরীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পয়েন্টে ছিল পুলিশের অবস্থান। দুপুরের পরে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ সাজোয়াযান (এপিসি) নিয়ে টহল দেয়। এছাড়া, হরতাল-অবরোধে নগরীর কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল ও কুমারগাও বাস স্ট্যান্ড থেকে সব ধরণের বাস ছেড়ে গেছে। নগরীতে পুরো দিনই যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক।