নগরীতে পুলিশবাহী দুটি গাড়িতে হামলা : দুই ট্রাকে আগুন, ১০ গাড়ি ভাঙচুর

ফাইল ফটো
ফাইল ফটো

সুরমা টাইমস ডেস্কঃ অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ৪০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। আর ওই ৪০ দিনের মধ্যে কয়েক দফা হরতালও অতিবাহিত হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল রোববার থেকে শুরু হয়েছে ২০ দলের আরেক দফা হরতাল কর্মসূচি। ৭২ ঘন্টা হরতালের প্রথম দিন গতকাল রোববার নগরী ও নগরীর আশপাশ এলাকায় ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। হরতালের শুরুতেই সকাল সাড়ে ৬ টায়র দিকে নগরীর শেখঘাট এলাকায় পুলিশবাহী দুটি গাড়িতে হামলা চালায় শিবির নেতাকর্মীরা। এ সময় গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে এক পুলিশ সদস্যসহ ২ জন আহত হয়েছেন। বেলা আড়াইটায় নগরীর দক্ষিণ সুরমা মোমিনখলা এলাকায় ও কদমতলী মুক্তিযুদ্ধ চত্ত্বর এলাকায় দুটি ট্রাকে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে ভাঙচুর ও একটি টমটম আটোরিকশা ভাঙচুর করে হরতাল ও অবরোধ সমর্থকরা। বিকেল ৫টার দিকে মিরাবাজার সড়কে ৬ থেকে ৭টি সিএনজি অটোরিকসা ও সিলেট-তামাবিল সড়কে চলাচলকারী একটি বাসে (সিলেট-ব-৫৫৩৮) ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৬টায় নগরীর শেখঘাট এলাকায় পুলিশের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে শিবির নেতাকর্মীরা। সকালে নগরীর মিরের ময়দানস্থ পুলিশ লাইন থেকে ১টি লেগুনা ও ১টি টেম্পুযোগে কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাদের দায়িত্ব পালনে যাচ্ছিলেন। গাড়িটি শেখঘাট পয়েন্টে আসা মাত্র কয়েকজন শিবিরকর্মী গলির ভিতর থেকে বের হয়ে গাড়ি দুটির গতিরোধ করে। পরে তারা লাঠিশোটা ও রামদা দিয়ে গাড়ি দুইটি ভাঙচুর চালায়। গাড়ি দুটির সামনের গ্লাস ভেঙ্গে হামলাকারী শিবির নেতাকর্মী পালিয়ে যায়। এ সময় এক পুলিশ সদস্য ও এক চালক আহত হন।
লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রবিউল হক মাসুম গনমাধ্যমকে জানান, পুলিশের দায়িত্ব পালনকারী ২টি গাড়িতে সকালে হামলা ও ভাঙচুর করে হরতাল সমর্থকরা। জবাবে পুলিশ ৬ রাউন্ড রাবারবুলেট ছুড়ে। পরে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ হামলায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন দুর্বৃত্ত অংশ নেয় জানিয়ে তিনি বলেন এদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
দক্ষিণ সুরমায় মাত্র ১০ মিনিট ব্যবধানে দুইটি ট্রাকে পেট্রলবোমা মেরে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে এক ট্রাকের চালক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম খান। এ সময় একটি টমটম আটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা, বেলা ৩ টার দিকে কদমতলী মুক্তিযুদ্ধা চত্ত্বর ও পুলিশ ফাঁড়ির মাঝামাঝি স্থানে একটি খালি ট্রাকে (ঢাকা মেট্র ট-১১-৬১৬০) প্রায় ১০ থেকে ১২ জন যুবক পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় তারা একটি টমটমেও ভাঙচুর চালায় তারা। বেলা ৩ টা ১০ মিনিটের দিকে মোমিনখলা নামকস্থানের মূল সড়কের ওপর একটি বালু বোঝাই ট্রাকে ২টি মোটরসাইকেলযোগে ৬ জন যুবক (ঢাকা মেট্রো-ট -১১-৫৩১৮) পেট্রলবোমা মেরে আগুন দিয়ে ভাঙচুর চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা দমকলবাহীনি ও পুলিশের সহযোগীতায় ট্রাক ২টির আগুন নিয়ন্ত্রন করেন। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মহানগর পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসান।
কদমতলী এলাকায় হামলার শিকার ট্রাকের চালক আলা উদ্দিন জানান, শেরপুর থেকে খালি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট ১১-৬১৬০) নিয়ে তিনি গোটাটিকর যাচ্ছিলেন। কদমতলী পথে ৫টি মোটর সাইকেলে ১০ জন যুবক এসে ট্রাকের গতিরোধ করে। যুবকরা ট্রাকের গ্লাসে ভাঙচুর করে সামনের কেবিনে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। সাথে সাথে স্থানীয় লোকজন এসে আগুন নিভিয়ে ফেলায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ট্রাকটি। এরঠিক ১০ মিনিট পরই মোমিনখলা স্টার লাইট স্কুলের সামনে একটি ট্রাকে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ট্রাকের হেলপার কুটি মিয়া জানান, ট্রাকটি শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সিলেট সদর উপজেলার দাসপাড়ার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। মোমিনখলায় আসার পর ৩টি মোটর সাইকেলে ৯ জন যুবক এসে ট্রাকটির গতিরোধ করে। পরে পেট্রলবোমা ছুঁড়ে মারলে ট্রাকে আগুন ধরে যায়। এতে ট্রাকের সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পেট্রলবোমা থেকে রক্ষা পেতে ট্রাক চালক এরশাদ মিয়া লাফিয়ে নামতে গিয়ে আহত হন। তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম খান গনমাধ্যমকে জানান, ২টি ট্রাকে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। রাতেই এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আসামী গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অপরদিকে, হরতালের সমর্থনে মিরাবাজারে গাড়ি ভাংচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালো দুর্বৃত্তরা। বিকেল ৫টার দিকে মিরাবাজার সড়কে এ ভাঙচুর চালানো হয়।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, ৬ থেকে ৭টি সিএনজি অটোরিকসা ও সিলেট তামাবিল সড়কে চলাচলকারী একটি বাস (সিলেট-ব-৫৫৩৮) ভাংচুর করে হরতাল ও অবরোধ সমর্থকরা। আর এ সময় বাসটি তামাবিল থেকে সিলেট আসার পথে হামলার স্বীকার হয়। ঢিল ছুড়ে বাসের চতুর্দিকে গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ সময় আতঙ্কিত যাত্রীরা জীবন বাচাঁতে গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে পরেন। এ সময় ১০ টির মত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। পুরো মিরাবাজার এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। ব্যবসায়ীরা ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দেন।
সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কামাল হোসেন সরকার জানান, হরতাল সমর্থকরা মিরাবাজারে একটি বাস ভাঙচুর করেছে। তারা ভাঙচুর করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারে ফের ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাত সোয়া ৮টার সময় সিতারা ম্যানশনের সামনে দুইটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। ককটেল বিস্ফোরিত হওয়ার পর দিকবিদিক দৌড়াতে শুরু করেন পথচারীরা, আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে থাকেন তারা। দ্রুত বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, শপিংমল।
ককটেল বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলেও তারা কাউকে আটক করতে পারেন নি। গত শনিবার সন্ধ্যার পর জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশনের সামনে উপর্যুপরি দুইটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মহিলাসহ ৩ জন আহত হন।
তবে, হরতালে পুরোদিনই নগরী ও নগরীর বাহিরে যান চলাচল করেছে। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে দুরপাল্লার বাসও ছেড়ে গেছে। তবে অন্য দিনের তুলনায় ছিল কম। আর পুরোদিনই নগরী ও নগরীর আশপাশ এলাকায় ছিল তীব্র যানজট। রেলওয়ে স্টেশন থেকে সময়মত ছেড়ে ট্রেনও।