ওসমানী হাসপাতালে মৃত্যুর মিছিল ॥ তদন্ত শুরু করেছে তিন কমিটি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে একরাতে ১০ শিশুসহ ২৪ঘন্টায় ৩২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পৃথকভাবে গঠিত তিনটি তদন্ত কমিটি। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের তিন সদস্যের ও স্বাস্থ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কার্যালয় থেকে দু‘সদস্যের তদন্তদল গতকাল বুধবার সকালে হাসপাতালে এসে পৌছে পৃথকভাবে তদন্তকাজ শুরু করে। এছাড়া ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটিও বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। এ ঘটনায় কোন অস্বাভবিকতা থাকলে ও কোনো চিকিৎসক বা নার্স দায়ি হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের গঠিত তদন্তদল প্রধান মোশাররফ হোসেন। এদিকে, ওসমানী হাসপাতালে গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৬শিশু সহ ১৭ জন রোগী মারা গেছেন বলে হাসপাতাল সুত্রে জানাযায়।
গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা থেকে হাসপাতাল থেকে তারা এই তদন্ত কাজ শুরু করেন। তারা মারা যাওয়া ১০ শিশুসহ বাকি ২২ জন রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেখেছেন। তদন্ত দলের সদস্যরা এর আগে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুস ছবুর মিঞার সাথে বৈঠক করেন। ১টার দিকে তারা হাসপাতালের ২১, ২২ ও ২৩ নং শিশু ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন।
স্বাস্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দলে স্বান্থ্য বিভাগের পরিচালক (হাসপাতাল ও নার্সিং) সামিউল ইসলাম সাদী ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা.আবির হোসেন রাব্বি রয়েছেন। এছাড়া স্বাস্থ অধিদপ্তরের ডিজি‘র কার্যাল থেকে দুই সদস্যের দলের সদস্যরা গতকাল বুধবার সকালে ওসমানী বিমানবন্দর হয়ে হাসপাতালে পৌছে পৃথকভাবে তদন্ত কাজ শুরু করেন।
পরিদর্শন শেষে বেলা দুইটায় তদন্ত দলের সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আবির হোসেন রাব্বি গণমাধ্যম কর্মীদেরকে জানান, ২৪ ঘন্টায় ১০ শিশুসহ ৩২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেছি। যেসব রোগী মারা গেছেন, তাদের ব্যবস্থাপত্র দেখেছি। এগুলোতে কোনোধরনের অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখছি।
তিনি জানান, ২৪ ঘন্টায় ৩২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় কোন অস্বাভবিকতা থাকলে এবং এ জন্য কেউ দায়ী প্রমাণিত হলে সেই অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে। প্রাথমিকভাবে কোনধরনের অস্বাভবিকতা পাওয়া গেছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. আবির বলেন, তদন্ত চূড়ান্তভাবে শেষ হওয়ার পরই এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলা যাবে। তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়। আরো বলেন, আগামীতে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে আগত রোগীরা যেন আরো ভাল সেবা পান, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে বলেও আশ^স্থ করে জানিয়েছেন তদন্তের প্রয়োজন যতক্ষন ততক্ষন আমরা এখানেই থাকব।
গতকাল দুপুরে ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুস ছবুর মিঞা জানান, হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ইসমাঈল পাঠোয়ারীর নেতৃত্বে ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত দলও কাজ শুরু করেছে। হাসপাতালের এই তদন্তদলে আরো রয়েছেন হাসাপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মনজ্জির আলী, আবাসিক চিকিৎসক রঞ্জন কুমার রায়, সার্জারী বিভাগের প্রধান দেওয়ান আলী আহসান চৌধুরী, গাইনী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দিলীপ কুমাার ভৌমিক ও শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মসিহ উদ্দিন চৌধুরী। এই তদন্ত কমিটি আগামী ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার ওসমানী হাসপাতালে ২৪ ঘন্টায় ১০ শিশুসহ ৩২ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার জন্য শিশুর স্বজনরা নার্স, চিকিৎসকের অবহেলাকে দায়ী করেন। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনদের অভিযোগ নাচক করে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি, স্বাস্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে হাসপাতালে স্বান্থ্য বিভাগের পরিচালক (হাসপাতাল ও নাসিং) সামিউল ইসলাম সাদী ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা.আবির হোসেন রাব্বিকে নিয়ে স্বাস্থ মন্ত্রনালয় এবং স্বাস্থ অধিদপ্তরের ডিজি‘র অফিস থেকে দু‘সদস্যের আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার সকালে স্বাস্থ মন্ত্রনালয় এবং স্বাস্থ অধিদপ্তরের ডিজি‘র অফিসের গঠিত তদন্ত কমিটি পৃথকভাবে তদন্ত কাজ শুরু করেছে।