খালেদা জঙ্গি নেতা, অভিযোগ প্রমাণ হলেই বিচার

pm_hasina at parliamentসুরমা টাইমস ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া একজন খুনি, একজন জঙ্গি নেতা। তিনি হুকুম দিয়ে তার পেটুয়াবাহিনীর মাধ্যমে ককটেল ফুটিয়ে, পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ খুন করছেন। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বিষয়টি তদন্ত করছে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়- তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে, কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’
বুধবার জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও জামায়াত কোনো রাজনীতি করছে না। তারা আন্দোলনের নামে নাশকতা চালাচ্ছে। পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ খুন করছে। ২০ দলীয় জোট যখন দেশের মানুষকে ভীত সন্ত্রস্থ করে রাখছে সেখানে খালেদা জিয়ার বাসভবনকে সুরক্ষিত করতে তার কাঁটার বেড়া দেয়া হচ্ছে।’ মানুষ মেরে জনরোষ থেকে তিনি বাঁচতেই এ বেড়া দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন প্রধান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আইন করে বিএনপি-জামায়াত জোটকে নিষিদ্ধ করার দরকার হবে না। জনগণ না চাইলেই এমনিতে বিএনপি-জামায়াত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।’
আব্দুল মতিন খসরুর অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির এই জোটের সহিংসতায় খালেদা জিয়ার কোনো সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। যদি তার সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয় তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তার বিরুদ্ধে মামলা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাভাই খালেদার সৃষ্টি। উনি বাংলা ভাইয়ের মা। বিএনপি একটি জঙ্গিবাদী দল, তাই তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। তিনি গণতন্ত্র, ভোট মানেন না। তিনি লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় যেত চান।’
টক-শোতে নাশকতার উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টক-শোতে যারা এ নাশকতার উস্কানি দিচ্ছে তাদেরকে আমরা মনিটরিং করছি। যদি তারা সত্যি উস্কানি দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা কখনো নির্বাচনে জিততে পারেনি, দল গড়তে পারেনি, তারাই ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন। তাদের ক্ষমতায় যাবার খায়েস আছে। এদের অনেকেই গভীর রাতে টক-শোতে গিয়ে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের এই সহিংসতাকে উস্কানি দিয়ে কথাবার্তা বলছে। অথচ তাদের একজনও বার্ন ইউনিটে যাননি, কোনো সাহায্য সহানুভূতি তো দূরের কথা। কই তারা তো এই ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা নিয়ে কোনো কথা বলছেন না?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘৩৭ দিন যাবৎ তারা দেশকে অশান্ত করে রেখেছে। আগুনে পুড়িয়ে মানুষ খুন করে চলেছে। দেশের ছেলে মেয়েদের স্কুলে যেতে দিচ্ছে না। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা ব্যহত করছে। কৃষক তার ফসল বিক্রি করতে পারছে না। ২০১৩ সালে তারা নির্বাচন বানচাল করতে গিয়ে নাশকতা চালিয়ে শত শত মানুষ খুন করেছে। এরপরও আমরা অনেক উন্নয়ন করেছি। মানুষ সুখি ছিল। কিন্তু দেশের উন্নয়ন দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেছে খালেদা জিয়ার। জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই তিনি দেশ ধ্বংসের কাজে নেমে পড়েছেন। তিনি মানুষ খুন করে লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চান। কিন্তু জনগণ তা হতে দেবে না। এই খুনি জঙ্গিদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে।’
স্পেশাল কোর্টে নাশকতাকারীদের বিচার হবে
সংসদ সদস্য আবদুর রউফের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আইনের কোনো অভাব নেই। বিশেষ সন্ত্রাস দমন আইন, স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট আছে। তাই নতুন কোনো আইনের দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করার দরকার হবে না, তবে স্পেশাল কোর্টে এসব নাশকতাকারীদের বিচারের ব্যবস্থা করছে সরকার।’ এসময় তিনি নাশকতার বিচারের কাজে নিয়োজিত বিচারকদের প্রতি নাশকতার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।
মৌলভীবাজারের সংসদ সদস্য আবদুস শহীদ প্রশ্ন করেন- এ সহিংসতার বিচারের জন্য আইনের ধারার কোনো সংশোধন করার প্রয়োজন আছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইন সংশোধন করার কোনো প্রয়োজন এক্ষুণি দেখি না। কেননা আমাদের বিদ্যমান আইনে এ সহিংসতার বিচার করা যাবে। তবে দ্রুত বিচারের জন্য আইনমন্ত্রীকে বলেছি, তিনি এ বিষয়টি দেখছেন।’
সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বার্ন ইউনিটে আমি গিয়েছিলাম। দগ্ধ রোগীদের ১০ লাখ টাকা করে অনুদান দিয়েছি। ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর যারা ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরও এককালীন অনুদান দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের বার্ন ইউনিটে কিছু যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। সেখানে শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ার চিকিৎসার কাজে একটি যন্ত্র কেনার জন্য সরকার ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। আর বিশেষ রোলিং বেডের জন্য ৩ কোটি, মোট ৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি দ্রুত কেনা হচ্ছে।’
এসময় তিনি বলেন, ‘শুধু ঢাকা মেডিকেল নয়, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, সিএমএইচ, কুর্মিটোলাসহ দেশের বিভাগীয় জেলা হাসপাতালগুলোতে বার্ন ইউনিট খোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের বেশকয়েকটি জেলা শহরের হাসপাতালে পুড়ে যাওয়া রুগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ সেল খোলা হয়েছে।’