বিজিবি মহাপরিচালকের বক্তব্যে বিএনপির উদ্বেগ
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বৃহস্পতিবার যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। আজিজ আহমদের ওই বক্তব্যের প্রতিবাদও জানিয়েছে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে থাকা বিএনপি।
বৃহস্পতিবার বিজিবি সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ত্রৈমাসিক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বাহিনীর মহাপরিচালক বলেন, ‘কারো হাতে পেট্রোলবোমা দেখলে বিজিবি সদস্যরা অবশ্যই অস্ত্র তুলে নেবে। কারণ একজনের পেট্রোলবোমায় হয়তো পাঁচজনের জীবন চলে যাবে। তাই তাকে দমন করাটাই শ্রেয়।’
‘প্রথমেই কাউকে গুলি করার নির্দেশ আমরা দেইনি। প্রথমে আমরা তাদের ধাওয়া দিয়ে কিংবা বিকল্প কোনো পন্থায় পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করবো। কিন্তু তাতেও যদি কাজ না হয় সে ক্ষেত্রে গুলি চালানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি বলছে, ‘সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির মহাপরিচালক রাজনৈতিক অন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গুলি চালাবার যে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা তাতে গভীর উদ্বেগ এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এমন নির্দেশ সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূত ও আইন পরিপন্থী।’
‘ভোটার বর্জিত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকার একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ক্রমাগত অস্বীকার করে আসায় দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট ঘণীভূত হয়েছে।’
দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে একটি জনপ্রতিনিধিহীন সরকার চরম কর্তৃত্ববাদী শাসন চালু করেছে। তারা চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান তো দূরের কথা, এ সঙ্কটকে স্বীকারই করছে না। রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উদ্ভূত চলমান অচলাবস্থাকে ক্ষমতাসীনেরা আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হিসেবে প্রচার করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে সবকিছু দমিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
‘আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অতি উৎসাহী কতিপয় কর্মকর্তা বেআইনি নির্দোষ এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক বক্তব্য প্রকাশ্যে দিতে শুরু করেছেন। এতে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটছে। আমরা রাষ্ট্রীয় বাহিনীসমূহের আইসম্মত নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে আহ্বান জানাই। একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী এই শাসক দল ১৯৭৪ সালে বিরোধী দল দমন, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ, বিরোধী দলকে দেখা মাত্র গুলি করার জন্য রক্ষীবাহিনীকে নির্দেশ এবং মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সন্তোষে অবরুদ্ধ রেখে জনগণের সকল মৌলিক মানবিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। সেই একই ধারায় তারা এবার বেগম খালেদা জিয়াকে গুলশানে ১২ দিন ধরে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এর বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও আন্দোলনকে তার নিষ্ঠুর পন্থায় দমন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের গুলিতে গত কয়েকদিনে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন কয়েক শত।’
‘একাধিকবার সহিংস অবরোধ ও অসহযোগে দেশ অচল করা, গান পাউডার দিয়ে চলন্ত বাসে অগ্নিসংযোগ করে যাত্রীদের পুড়িয়ে মারা, অফিস যাত্রীদের দিগম্বর করা, সমুদ্র বন্দর অচল করা, রেল স্টেশন জ্বালিয়ে দেয়া, বছরে ১৭৩ দিন হরতাল করা এবং পেট্রোল বোমা মেরে ও লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে মানুষ হত্যার অতীত কলঙ্কিত রেকর্ডধারীরা এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়। তারা এখন আন্দোলনরত বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও জনসাধারণকে রাস্তায় নামতে দিচ্ছে না। উপরন্তু পুলিশ পাহারায় তারা ক্ষমতাসীনদের সমর্থকদের দিয়ে মিছিল সমাবেশ করাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রহরায় চলাচলকারী সীমিত সংখ্যক যানবাহনে বোমা হাললায় বা আগুনে পুড়িয়ে নারী ও শিশুসহ নিরপরাধ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।’
‘এসব নাশকতার প্যাটার্নের সঙ্গে শাসকদের অতীত হীন অপতৎপরতাগুলো হুবহু মিলে যায়। তারাই সুপরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এর সঙ্গে জনগণের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এসবের দায়-দায়িত্ব পুরোপরি ক্ষমতাসীনদের উপর বর্তাবে। বিরোধীদলের ওপর নাশকতার দায় চাপিয়ে দমন-পীড়ন এবং হত্যালীলা জোরদার করতে তারাই সুপরিকল্পিতভাবে এসব ঘৃণ্য নাশকতার ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমরা এসব অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা এবং হতাহতদের প্রতি গভীর শোক ও সহানুভূতি জানাই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের হারানো মৌলিক ও ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সফল করেই এসব অপতৎপরতার জবাব দেয়া হবে।’