ভঙি জানেন খোকন!
নুরুল হক শিপুঃ সিনিয়র সাংবাদিকদের ওপর মোটরসাইকেল তুলে দিয়ে উদ্যত আচরণ করে পরে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করা ‘খ্যাপা’ খোকন নামে পরিচিত সিটি করপোরেশনে চাকরিজীবী সেই খোকন এবার নিজে খ্যাপলেন আবার খ্যাপালেন সহকর্মীদেরও। গতকাল বৃহস্পতিবার দাপট দেখিয়েছেন পুলিশের সাথে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পরিবহন শাখার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন কামরানের এপিএস, আবুল ফজল খোকন তার অসধাচরণের জন্য লাঞ্চিতও হয়েছেন। দাপট দেখাতে গিয়ে এক কনষ্টেবলের হাতে লাঞ্চিত হন। সকাল সাড়ে ১০টায় নগরভবন ফটকে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী বহিস্কার, মহানগরীতে হরতাল ও কাউন্সিলরদের সাংবাদ সম্মেলনসহ অন্যান্য কারণে সিটি কর্পোরেশনের সামনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। সকাল থেকেই পুলিশ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্কাবস্থান নেয়। এসময় পুলিশ সিটি কর্পোরেশনে প্রবেশকারীদের তল্লাশী করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সোয়া ১০ টার দিকে কর্পোরেশনে প্রবেশ করতে চান সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পরিবহন শাখার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল ফজল খোকন প্রবেশকালে পরিচয়পত্র প্রদর্শন নিয়ে পুলিশের সাথে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এসময় তিনি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিকাশ চন্দ্র সরকার ওপর চড়াও হন। তাকে বলেন ‘তকে আমি দেখে নেব’। এ সময় খোকন এসআই বিকাশকে মারতে তার দিকে তেড়ে যান। এসআই বিকাশের শরীরে খোকন হাত তুলার আগেই; এক কনেষ্টবল এগিয়ে এসে খোকনকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় খোকন নিজেই মাঠিতে বসে অবস্থান নেওয়ার ভঙি করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের গালি দিয়ে দৌড়াতে থাকেন। এ সময় মোবাইল ফোনে কার সাথে কথাও বলেন তিনি। দৌড়ে নগরভবনে অবস্থান নিয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সহযোগিতা চান। খবর পেয়ে অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. রহমত উলাহ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। ঘটনার সমাধানে বন্দরবাজার পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ বিকাশ দাশকে বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে বদলি করে কোতোয়ালী থানায় সংযুক্ত করা হয়েছে।
এসআই বিকাশ চন্দ জানান, ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম। খোকন সাহেবের সাথে আর আর এফ পুলিশের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পরে আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সমাধান হয়।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. রহমত উল্লাহ জানান, ওই ঘটনায় এসআই বিকাশকে কোতোয়ালী থানায় বদলী করা হয়নি। পুলিশের বদলী একটি রুটিন ওয়ার্ক। যে কনস্টেবলের সাথে খোকন সাহেবের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব জানান, বিষয়টি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সিসিক কর্মকর্তাদের মধ্যস্ততায় সমাধান করা হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশের প্রতি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমাদেরকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে খোকন জানান, সকাল সোয়া ১০ টার দিকে আমি ডিসি অফিস থেকে সিটি কর্পোরেশনের প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ আমাকে বাঁধা দেয়। এসময় পুলিশের ব্যারিকেড ছিল। পুলিশ পরিচেয় জানতে চাইলে তাদেরকে জানাই আমি সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা। তখন তারা আমাকে আইডি কার্ড দেখাতে বলে। আমি জানাই কার্ডটি বাসায় রেখে এসেছি। আমার সাথে কর্পোরেশনের গাড়ি আছে সাথে কাগজও আছে দেখেন। তখন আইডিকার্ড না দেখিয়ে যেতে পারবেননা বলে পুলিশ ক্ষেপে গিয়ে বলে ‘আপনে কি লিডার’। এর পরই মারধর করে। একই সময়ে আরেক পুলিশ সদস্য পেছন থেকে আমাকে আঘাত করে।
প্রসঙ্গত, খোকন গত ৭ ডিসেম্বর ইউএনবি’র সিলেট প্রতিনিধি সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ মহসীন ও তার স্কুল পড়–য়া মেয়েকে রাস্তায় ড্রেনে ফেলে মারপিট করেন। এ ঘটনায় সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠলে অবস্থা বেগতিক দেখে খোকন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে গিয়ে ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে লিখিত মুচলেকা দেন।