কাঠগড়ায় ফুরফুরে রুবেল নিমেষেই বিমর্ষ
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপির দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেল হোসেনকে আদালতে আসামির কাঠগড়ায় একেবারে নিরুদ্বিগ্ন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অপরদিকে বোরকা পরা বাদী হ্যাপি ফিরোজা রঙের ওড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা পরে দাঁড়িয়ে ছিলেন অবনত দৃষ্টিতে।
বৃহস্পতিবার দীর্ঘ প্রায় একঘণ্টা ধরে চলা এই মামলার শুনানিকালে বাদী হ্যাপি একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেও আসামি রুবেল আয়েশি ভঙ্গিতে শুনানিতে অংশ নেয়া আইনজীবী বিচারক ও বাদীর দিকে তাকাচ্ছিলেন। সাদা শার্ট, কালো জিন্সের প্যান্ট, কালো জ্যাকেট পরা রুবেলকে বার কয়েক স্মিত হাসতেও দেখা গেছে।
মামলার বাদীকে বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষার জন্য পক্ষ-বিপক্ষের আইনজীবীদেরকে বিচারক বেশ কয়েকবার মামলার এজাহারে উল্লেখিত স্পর্শকাতর শব্দগুলো উচ্চারণ না করে (বিচারক সেন্সর করতে বলেন) শুনানি করতে বলেন।
তারপরও দু’পক্ষের দুই আইনজীবীর মুখ থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবেই ওই জাতীয় কয়েকটি শব্দ বেরিয়ে পড়ে। পরে বিচারক এ বিষয়ে আবারো সতর্ক করেন।
রুবেলের পক্ষে ব্যারিস্টার মনিরুজ্জমান আসাদ ও অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শুনানিতে বলেন, ‘মামলায় রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে গত ১ ডিসেম্বর ভিকটিমকে ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়ছে। কিন্তু ওইদিন আসামি রুবেল বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত ডেনাইট ম্যাচে খেলেছেন। তাই ওইদিন এই ধরনের কোনো ঘটনার সুযোগই ছিল না। মেডিকেল রিপোর্টেও ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তিনি একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটার। বিশ্বকাপ দলে তার স্থান ৫ নম্বরে। তাই দেশের স্বার্থে, ক্রিকেটের স্বার্থে তার জামিন পাওয়া প্রয়োজন।’
অন্যদিকে হ্যাপির পক্ষে প্রসিাকিউশন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার মিরাস উদ্দিন এবং তার ব্যক্তিগত আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মানসুর রিপন, তুহিন হাওলাদার ও ইউনুস আকন্দ শুনানিতে বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা ১ ডিসেম্বর ঘটেনি। ভুলক্রমে ১ ডিসেম্বর উল্লেখ করা হয়েছিল। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২ ডিসেম্বর রাত ১২টায়। পরে তারিখ ও সময় সংশোধন করা হয়েছে।’
তারা বলেন, ‘জামিন পাওয়া না পাওয়ার বিষয়ে আইনের চোখে সবাই সমান। আসামি জাতীয় দলের ক্রিকেটার না অন্য কেউ তা আইনের চোখে বিবেচ্য বিষয় নয়। আদালত থেকে ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি নেয়া হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্ট এখানো নথিতে আসেনি। আসামি রুবেল জামিন পেলে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে অস্ট্রেলিয়া যাবেন। তিনি সেখাতে গিয়ে পলাতক হতে পারেন। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো প্রয়োজন।’
দু’পক্ষের দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত রুবেলের করা জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তবে জামিন না পাওয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আসামির কাঠগড়ায় থাকা নিরুদ্বিগ্ন রুবেল মুহূর্তের মধ্যেই বিমর্ষ হয়ে পড়েন। এ সময় আইনজীবী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে ‘কিচ্ছু হবে না, কিচ্ছু হবে না’ বলে সান্ত্বনা দেন।
অবশ্য ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে হ্যাপির বেলায়। রুবেলের জামিন নামঞ্জুরের আদেশে বিমর্ষ হ্যাপি খুব দ্রুতই চনমনে হয়ে ওঠেন। দৃষ্টি তুলে আইনজীবীদের সঙ্গে সহাস্যে কথা বলেন। উৎসুক লোকজন এবং মিডিয়াকর্মীদের ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান আইনজীবীদের সঙ্গে।
এদিকে রুবেলকে আদালত থেকে কোর্টহাজতে নেয়ার বেশকিছু সময় পর আদালত থেকে তার আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসেন হ্যাপি। এ সময় উপস্থিত উৎসুক লোকজন ও কতিপয় শিক্ষানবীশ ও তরুণ আইনজীবী ভুয়া ভুয়া বলে চিৎকার করতে থাকে। আশপাশ থেকে আবার কাউকে বেশ তীর্যক অরুচিকর মন্তব্য করতেও শোনা গেছে।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর নবাগত অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপি ধর্ষণের অভিযোগ এনে রাজধানীর মিরপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯/১ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রুবেল তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর সে জোরপূর্বক ইচ্ছার বিরুদ্ধে হ্যাপির সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক করে বলেও দাবি করেন তিনি। সর্বশেষ গত ২ ডিসেম্বর রুবেল হ্যাপির সঙ্গে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ করে। পরে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে রুবেল এড়িয়ে যায়।
মামলা দায়েরের পর রাত সাড়ে ৭টার দিকে নায়িকা হ্যাপিকে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেয়া হয়। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
গত ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুবেল হোসেনকে চার সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর করে সিএমএম আদালতে ওই সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার তিনি সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণের পর জামিন প্রার্থনা করেন।