বিএনপি নেতা শাহরিয়ারের স্বেচ্ছায় কারাবরণ!

Sylhet Hortal 29-12-2014_Shahriarনুরুল হক শিপুঃ ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী। তিনি সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক। আলোচিত ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে যখন সিলেটের রাজনীতি উত্তপ্ত। যখন ২০ দলের নেতাদের ব্যাপক ধরপাকড়ের পাশাপাশি একেরপর এক মামলা দেয়া হচ্ছে; এর আগেই সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী গ্রেপ্তার হন। তাঁর এই গ্রেপ্তার হওয়া নিয়ে সিলেট বিএনপিতে চলছে নানা গুঞ্জন। দলের একাংশের নেতারা বলছেন, যখন ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতারা একের পর এক মামলায় জর্জরিত হতে হচ্ছে; ঠিক এর আগে প্রশাসনের সাথে সমঝোতা করে ৫ জানুয়ারির আগেই কারাগারে গেছেন ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী। তারা মনে করেন সেনা সমর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন ঘনিষ্ট লোক হিসেবে পরিচিত ডা. শাহরিয়ার কোনো ভাবেই দলের জন্য মঙ্গল জনক নন। এমন কি বর্তমান সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সাথে রয়েছে তাঁর আত্বীয়তা ও শখ্যতা।
এর কারণ সম্পর্কে তারা বলেন, শাহরিয়ারের ওপর কয়েকটি মামলা রয়েছে। ওই মামলা গুলোতে তিনি জামিনে আছেন। তাকে যেদিন গ্রেফতার করা হয়; ওই দিন (২৯ ডিসেম্বর) কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে পুলিশ তাঁকে ওই মামলায় এজহারভূক্ত আসামী না করে সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। তিনি বর্তমানে সুনির্দিষ্ট কোনো মামলা ছাড়াই কারাগারে রয়েছেন। তাঁর আইনজীবী কেন জামিনের আবেদন করছেন না তা নিয়েও রয়েছে জল্পনা-কল্পনা। তিনি নিরাপদে কারাগারে থাকার কারণে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত গনতন্ত্র ‘হত্যা’ দিবস (৫ জানুয়ারির) ও অনির্দিষ্ট কালের অবরোধ কর্মসূচি কিছুতে তাকে অংশ গ্রহণ করতে হয়নি। সেই সাথে তাঁকে আর নতুন মামলায়ও পড়তে হচ্ছেনা। দেশের পরিস্থিতি শান্ত হলে হয়তো তাঁর জামিন চাওয়া হবে বলেও মন্তব্য ওই একাশের নেতাদের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে কয়েকটি ৪ টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে ৪টি মামলাই তিনি জামিনে রয়েছেন। ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্র“য়ারি কোতোয়ালী থানায় সিলেট শহীদ মিনারে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর, ওইদিন নগরীর কোর্ট পয়েন্টে ভাংচুর ও বিস্ফোরণের অভিযোগে ২টি মামলা দায়ের করা হয়। জিয়ার মামলা ৬৮/১৩ ও ৬৯/১৩ যা বর্তমানে মহানগর দায়রা জজ আদালতে ১৫/১৪ হিসেবে নতিভূক্ত রয়েছে। ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ওই মামলা ২টির এজহারভূক্ত আসামী। আগামী ৮ফেব্র“য়ারি ওই দুটি মামলা তিনি আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া গত ২৯ ডিসেম্বর সকালে নগরীর চৌহাট্টা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। ওই রাতেই পুলিশ বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় ১টি মামলা দায়ের করে। কিন্তু ওই মামলায় রহস্যজনক কারণে তাকে এজাহার নামীয় আসামি না করে পুলিশ সন্দেহভাজন আসামী দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে।
মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকি সবুজ সিলেটকে জানান, মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহরিয়ার ৫ জানুয়ারির আন্দোলনের আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি প্রশাসনের সাথে সমঝোতা করে গ্রেফতার হয়েছেন। এমন গুঞ্জন দলের ভেতর চলছে; তা আমার কানেও এসেছে। তবে বিষয়টি সত্য না মিথ্যা আমার জানা নেই।
দলের একাংশের নেতাদের দেয়া বক্তব্যের সাথে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীর আইনজীবী মহানগর বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি সবুজ সিলেটকে জানান, যেদিন তাকে গ্রেফতার করা হয়, ওইদিন পুলিশ দলের ২ কর্মীকে প্রথমে গ্রেপ্তার করে। ডা. শাহরিয়ার তাদের ছাড়াতে পুলিশের সাথে দফায়-দফায় কথা বলেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, দলের কর্মীদের নিতে হলে সাথে আমাকে নিতে হবে। ওই সময় পুলিশ তাকেও গ্রেপ্তার করে। তিনি রাজপথ থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
ওই মামলায় জামিন চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডা. শাহরিয়ার গ্রেপ্তার হয়ার পর বিভিন্ন কারণে আদালত বন্ধ ছিল। গত ৫ জানুয়ারি আদালত খুললে আমরা ২০/২৫ জন আইনজীবী তাঁর জামিন চাইলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন।
আজকালের মধ্যে জামিন চাওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি প্রথমে বলেন, এই মুহুর্তে জামিন আর চাওয়া হবেনা। কিছু সময় নেব। সময় নেয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বলেন, কোন কারণ নেই; একটু সময় নেব।
ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী মামলা থেকে বাঁচতে প্রশাসনের সাথে সমোযতা করে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে দলে গুঞ্জন রয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ডা. শাহরিয়ার সমঝোতায় কারাগারে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। যারা এমন কথা বলছে তারা দলের নেতা নয় দালাল।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ নভেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। ওই কমিটিতে ডা. শাহরিয়ারকে অব্বায়ক করে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০০৭-২০০৮ সাল পর্যন্ততিনি মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ওই ২ বারই তাকে মহানগর বিএনপির আহবায়কের দায়িত্ব দেয়ায় সিলেট বিএনপিতে বিদ্রোহ দেখা দেয়। নগরীতে ঝাড়–-জুতা মিছিল, পাল্টা কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।