অবরুদ্ধ খালেদা, `জিম্মি’ ১৩ ট্রাকচালক
খালেদার কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের সংখ্যা বেড়ে ১৩
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ট্রাকচালক আলাউদ্দিন যাচ্ছিলেন কালাচাঁদপুর। রবিবার রাত ১২টা। কাকরাইল মোড়ে পুলিশের সিগন্যালে থামলেন তিনি। পুলিশ কাগজপত্র না দেখে বলল চলো আমার সাথে। এই বলে পুলিশ তাকে নিয়ে আসল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের সামনে,যে কার্যালয়ের ভেতরে গত দুই দিন ধরে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া।
এখনতো আর আলাউদ্দিনকে যেতে দেয়না পুলিশ। ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের আলাউদ্দিন বলেন, ‘ভাই আমি দিনমজুর মানুষ, দিন এনে দিন খাই। এই সব রাজনৈতিক ঝামেলায় আমি পড়তে চাই না। কিন্তু তারপরও পুলিশ আমাকে এই ঝামেলাতে জড়িয়ে দিয়েছে।’
আপনাকে এখানে কি কথা বলে নিয়ে আসা হয়েছে- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কাকরাইল মোড় থেকে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে এসেছে। কাকরাইল মোড়ে পুলিশ সিগন্যাল দিয়ে আমাকে গাড়ি থামাতে বলে। আমিও গাড়ি থামাই। এরপর পুলিশ কোন কথা না বলেই গাড়িতে উঠে পড়ে এবং আমাকেও এখানে নিয়ে আসে।’
আলাউদ্দিন বলেন, ‘ভাই বুঝতে পারছি না মালিককে এখন কি বলবো। আর আমারই বা কি হবে। কারণ কত দিন থাকতে হবে সেটাও জানি না। আর আমি বাড়িতে টাকা না পাঠালে বউ ও ছেলে-মেয়ে না খেয়ে থাকবে। এখন আপনারাই বলেন আমি কি করবো?
এভাবেই নিজের অসহায়ত্ব আর জিম্মি দশার কথা অকপটে বললেন আলাউদ্দিন। এভাবে শুধু আলাউদ্দিন নয়। ১৩ জন ট্রাকচালক এই অবস্থার শিকার।
ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ১৩ জন ট্রাকচালককে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ের সামনে নিয়ে আসে পুলিশ। গাড়িতে মালামালবহন করে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার পথে পুলিশ তাদের অবৈধভাবে বাধা প্রদান করে বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাকচালকরা।
সোমবার রাত ১২ টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় ১৩ টি ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। ওই এগারো জন ট্রাকচালক এই প্রতিবেদককে তাদের নিয়ে আসার গল্প বলেন।
বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করার উদ্দেশ্যেই মূলত পুলিশ এই ধরনের কাণ্ড করেছে বলে দাবি করেন ট্রাকচালকদের।
বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত আরেক ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মালামাল ডেলিভারি করার জন্য নতুন বাজার যাচ্ছিলাম। কিন্ত পুলিশ আমাকে গুলশান-২ থেকে ধরে নিয়ে এসেছে। আর আমিসহ আমার গাড়ির আরো ৬ জন রয়েছে। আমরা যদি আমাদের বাড়িতে টাকা না দেই তাহলে আমাদের পরিবারের সবাই না খেয়ে থাকবে। এমনিতেই আজ আমাদের ৬ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। এই ৬ হাজার টাকা আমরা আর ফিরে পাবো না।’
গাড়ি চালক সোহেল সাংবাদিকদের বলেন, ভাই আমি কী অন্যায় কাজ করেছি? পুলিশ কেন আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। পুলিশ কোন কথা না বলে, আমার কোন কথা না শুনেই এখানে নিয়ে এসেছে। আজ কাজ করে যে টাকাটা পেতাম সেটাও পেলাম না। বরং রাত ৪ টা পর্যন্ত না খেয়ে আছি, এখন না পারছি বাড়ি যেতে, না পারছি ঘুমাতে, আর না পাচ্ছি শান্তি।
এই প্রতিবেদকের কাছে একই কথা ও দাবি করেছেন বেগম জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে সামনে অবস্থানরত প্রতিটি ট্রাক ড্রাইভার।
শনিবার রাত পৌনে ১২ থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধে করে রাখা হয়েছে। (ঢাকা টাইমস)