ছাতকে মণিপুরী পল্লীতে ডাকাতি ও হামলার ঘটনার গ্রেফতার ২

পুলিশের পাশাপাশী বিজিবির সহায়তা চাইলেন গ্রামবাসী !

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সীমান্তবর্তী রাসনগর আদিবাসী মণিপুরী পল্লীর ৫ বাড়িতে ডাকাতি হামলা ও লুটের ঘটনায় ঘটনার সাথে জড়িত মধ্যে পুলিশ শনিবার দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হল, উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের মৃত- মনফর আলীর ছেলে আব্দুল হাই ও একই গ্রামের মৃত জগম্বর আলীর ছেলে মানিক মিয়া।
উল্লেখ যে, মণিপুরী রাসপাড়ায় গত ২৯ ডিসেম্বর সোমবার রাতে একদল ডাকাতের হামলার ঘটনায় (অব:) সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট সহ ৩ জন আহত হয়েছিল। আহতদের মধ্যে সেনা সার্জেন্টকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটলে পরদিন মঙ্গলবার জরুরী ভাবে তার অপোরেশন করা হলেও এখনও তিনি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। ডাকাতরা ঐ রাতে ৪টি গরু লুটে করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় প্রাক্তন ইউপি সদস্য স্বপন কুমার সিংহ বাদী হয়ে ১১ জনের নামোল্লেখ করে ১৪ থেকে ১৫ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামী করে শুক্রবার থানায় মামলা দায়ের করেন।
সংশ্লিস্ট গ্রামবাসী ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের নোয়াকোট সীমান্ত সংলগ্ন রাসনগর আদিবাসী মণিপুরী পল্লীতে সোমবার মধ্যরাতে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি মুখোশপড়া স্বশস্ত্র ডাকাত দল হানা দিয়েছিল। ডাকাতরা গ্রামের প্রাক্তন ইউপি সদস্য স্বপন কুমার সিংহ, গকুল চাঁন সিংহ, নিহার রঞ্জন সিংহ শৈলেন্দ্র সিংহ ও নিশিকান্ত সিংহের বাড়ির দরজায় দরজায় পাহাড়া বসিয়ে দরজা ভেঙ্গে লুটের চেষ্টা চালায়। এ সময় ঘরের ভেতর থাকা লোকজন মোবাইল ফোনে গ্রামের লোকজনকে ডাকাতদের হানার বিষয়টি অবগত করলে গ্রামবাসী ডাকাতদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসে। এক পর্যায়ে অব: সেনা সার্জেন্ট রবীন্দ্র কুমার সিংহ ও কয়েকজন ডাকাতদের প্রতিরোধে এগিয়ে এলে ডাকাতরা তাকে ধরে নিয়ে নিয়ে রাস্তায় ফেলে এলোপাতারি ভাবে রামদা দিয়ে মাথায় , ডান হাতে কুপিয়ে রক্তার্ত জখম করে। একই ভাবে ডাকাতরা গৃহিনী নন্দ রাণী সিনহা ও অব: শিক্ষক লাল বিহারি সিংহকেও মারধর করে আহত করে। এ সময় ডাকাতরা গোয়ালঘর থেকে দুই পরিবারের ৪টি হালের বলদ লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় রাসনগর, ধ্বণি টিলা আদিবাসী মণিপুরী ২ পল্লীর ৫৫ পরিবারের প্রায় সাড়ে ৫ শতাধিক আবাল বৃদ্ধ বণিতা এখানো ডাকাত আতংকে রাত জেগে নির্ঘোম রাত পাড় করছেন।
ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ গ্রামবাসী জানান, গত দু’যুগেরও বেশী সময় ধরে কয়েকটি পাথরখেকো চক্র প্রভাবশালী মহলের যোগসাজসে রাসনগর ও ধ্বণি টিলা গ্রামের মণিপুরী পরিবারগুলোকে গ্রাম থেকে ভয়-ভীতি লুপাট করে তাড়িয়ে দিয়ে শত কোটি টাকার সম্পদ নিজেদের বগল দাবা করতেই বার বার পরিকল্পিত ভাবে ডাকাতি ও হামলার ঘটিয়েই যাচ্ছে। শনিবার ভোররাতে ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের পর পরই থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে সরকার দলীয় প্রভাবশালী বেশ ক’জন নেতা নরেচরে বসেন। কঠোর গোপনীয়তা আসামীদের দুপুরে আদালতে নিয়ে এলে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এর আগে গ্রেফতারকৃতদের বিষয়ে থানা থেকে স্থানীয় সাংবাদিকদেরও তদবীরবাজদের চাঁপের মুখে কোন প্রকার তথ্যই দেয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আব্দুল হাই ও মানিক এরা দু’জনই ইতিপুর্বে একটি হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী হওয়ার পর উচ্চ আদালতে রায় স্থগিত করা হয়। রাসনগর গ্রামের এক মণিপুরী সম্প্রদায়ের নেতা জানান, গ্রামের লোকজনকে রাত জেগে এখন পাহাড়া দিতে হচ্ছে। মামলার ১১ জন চিহ্নিত আসামীর মধ্যে বাকী ৯ জন এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় ফের হামলা ও লুটের আতংকে ভুগছেন। রাসনগর ও ধ্বণিটিলা দু’গ্রামের লোকজন সীমান্তবর্তী এলাকার লোক হওয়ায় পুলিশের পাশাপাশী পার্শ্ববর্তী সিলেট -৫ বর্ডারগার্ড ব্যাটালিয়নের নোয়াকুট বিওপিরও বিজিবির সহায়তা চাইলেন।
পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদ বললেন, এ ঘটনায় যারা জড়িত রয়েছে তাদের প্রত্যেককে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তিনি আরো বলেন , গ্রামবাসীরদের আতংকিত হওয়ার কোন কারন নেই অপরাধীদের ধরতে পুলিশ সব সময়ই তৎপর রয়েছে।