নবীগঞ্জে গৃহকর্মী অঞ্জনা হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ সমাবেশ
উত্তম কুমার পাল হিমেল,নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)থেকে ॥ নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডক্টরস কোয়াটারে নিরীহ অঞ্জনা রানী সরকারের হত্যাকান্ডের মামলা নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আবারও ফুসে উঠেছে নবীগঞ্জ সচেতন নাগরিক সমাজ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের নতুন বাজার মোড়ে সাহেব আলীর সভাপতিত্বে ও ছাত্রদলনেতা অলিউর রহমানের পরিচালনায় বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নবীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ আহ্বায়ক আলহাজ্ব ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, কমরেড চৌধুরী ফয়সল শোয়েব, পৌর কাউন্সিলর সুন্দর আলী, কমান্ডার এমএ খালেক, আহমদ ঠাকুর রানা, মাওঃ আব্দুর রকিব হক্কানী, ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, শাহীন আহমদ চৌধুরী, রঞ্জু দেব, নুরুজ্জামান, আজমল আহমদ, তপন মালাকার, খোকন মিয়া, সাইদুর, রিপন চৌধুরী, সাব্বির আহমদ শুভ প্রমূখ। বক্তাগণ বলেন, নিরীহ অঞ্জনা হত্যাকারীদের ফাসিঁর দাবীতে এবং নিরীহ অঞ্জনার বিচার ব্যবস্থা সুষ্টভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে আমরা আন্দোলন শুরু করে ছিলাম। এই আন্দোলনের ফসল হিসেবে নবীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা রের্কড হয়েছিল। আজ স্থানীয় কিছু দালাল, ভাটপাড় ও অর্থলোভী কিছু ছাত্রনেতা এবং জনপ্রিিতনিধিরা আমাদের ব্যানার ব্যবহার করে মোটা অংকের টাকার কাছে বিক্রী হয়ে গেছেন। তারা ওই নাগরিক সমাজকে কলংকিত করে সমাজে কুলাঙ্গার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। এ সব কুলাঙ্গার ও অর্থলোভী দালালদের কবল থেকে সচেতন থাকার জন্য নবীগঞ্জবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, অঞ্জনার খুনি সজল দেবের অবৈধ কালো টাকা থেকে ১৬ লাখ টাকা নিয়ে ওই কুলাঙ্গার’রা ভাগভাটোরা করে নিরীহ অঞ্জনার পিতার হাতে প্রায় আড়াই লাখ টাকা দিয়ে তাকে চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আপোষে সম্মতি আদায় করেছেন। বক্তাগণ আইনের সুশাসন প্রতিষ্টার স্বার্থে ওই দালালদের ষড়যন্ত্রের কবল থেকে বেরিয়ে অঞ্জনা হত্যার ন্যায় বিচার প্রতিষ্টা এবং ঘাতক সজল দেবের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ন্যায় প্রতিষ্টার স্বার্থে নবীগঞ্জ নাগরিক সমাজ লড়াই করে যাবে। এতে নবীগঞ্জ বাসী সকল আন্দোলনে পাশে থাকার আহ্বান জানান। বক্তাগণ আরো বলেন, মৃত অঞ্জনার ছুরতহাল ও ময়না তদন্তের সময় কোন চিরকোট পাওয়া না গেলেও ওই সব দালালরা মামলার বাদীকে দিয়ে জামিনের অনাপত্তি দরকাস্তে ভুয়া চিরকুটের কথা উল্লেখ্য করে হাস্যকরের সৃষ্টি করেছেন।
উল্লেখ্য, বিগত ১৬ আগষ্ট শনিবার সকালে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৎকালীন প্রধান সহকারী সজল চন্দ্র দেবের হাসপাতালের ডক্টরস কোয়াটারস্থ বাসভবন থেকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দত্তগ্রামের নিরীহ গৃহপরিচালিকার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর পরই সজল দেব এ ঘটনাকে আত্বহত্যা বলে চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জনদাবীর প্রেক্ষিতে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এক পর্যায়ে নিরীহ অঞ্জনার পিতা রাবেন্দ্র নম বাদী হয়ে সজল দেবকে প্রধান আসামী করে তার পরিবারের অপর ৪ সদস্যসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের খবর পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায় সজলসহ তার পরিবার। ইতিমধ্যে আন্দোলনকারীদের মধ্যে স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে নিরীহ অঞ্জনার পিতা রাবেন্দ্র নমঃকে আপোষে দফারফা করতে বাধ্য করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠে। অবশেষে বাদীর অনাপত্তি আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৮ ডিসেম্বর বৃস্পতিবার হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমল আদালত-৫ থেকে জামিন লাভ করেন সজল দেব, তার স্ত্রী ও দু’ পুত্র। ঘটনাটি স্থানীয় সংবাদ পত্রে ফলাও করে প্রকাশ করলে আন্দোলনরত নবীগঞ্জ সচেতন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ক্ষোভ ও ঘৃণা দানা বাধে। ইতিমধ্যে তারা জরুরী ভিত্তিতে একাধিক বৈঠক করেছেন। অপর দিকে দত্তগ্রাম এলাকাবাসী নাম অপ্রকাশের শর্তে জানান, নিরীহ অঞ্জনার লাশের সাথে বেঈমানী করে এবং হত্যাকারীদের বাচাঁনোর জন্য ওর্য়াড মেম্বার হাকিম আলী, হারুনুর রশীদ হারুন ও রহুল আমীনসহ একদল অর্থলোভী লাটিয়াল বাহিনী মোটা অংকের টাকা ভাগভাটোরা করে অঞ্জনার নিরীহ পিতাকে আপোষে বাধ্য করেছেন। তাদের ভয়ে অঞ্জনার পিতা মূখ খোলতেও সাহস পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা।