কোম্পানিগঞ্জে নির্মম, নির্যাতনের পর পুতুলের আত্মহত্যা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ কোম্পানীগঞ্জের কাঠাল বাড়ির যুবতি পুতুল। বাবা বাবুল মিয়া প্রায় মানসিক বিকারগ্রস্ত। একই গ্রামের মৃত ফুল মস্তানের ছেলে দরবেশের বখাটেপনার শিকার পুতুল। প্রায়ই দরবেশ পুতুলকে কুপ্রস্তাব দিত। এমন পরিস্থিতিতে পুতুলের মা কোহিনূর বেগম পুতুলের বিয়ে দেন কোম্পানীগঞ্জের ঢালারপাড় এলাকায়। এরপর দরবেশ ও একই এলাকার ছাওয়াল মিয়ার ছেলে জীবন পুতুলের স্বামীর বাড়িতে গিয়েও তাকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে পুতুলের স্বামী পুতুলকে তালাক দেন। স্বামী হারানো পুতুলের ফের টাই হয় বাবার বাড়িতে। কিন্তু মুক্তি পায়নি সেই বখাটেপনা থেকে। পুতুলকে প্রায়ই কুপ্রস্তাব দিত পাশের বাড়ির ছাওয়াল মিয়ার ছেলে জীবন। বিষয়টি পুতুলের মা কোহিনূর বেগম জানান জীবনের বাবা সাওয়াল মিয়াকে। কিন্তু ছাওয়াল মিয়া নিজের ছেলের বিচার না করে উল্টো শারীরিক নির্য়াতন চালান পুতুল ও তাঁর মা কোহিনূর বেগমের ওপর। ওই দিন পুতুলদের ঘরে ঢুকে তাঁর ছেলে জীবন পুতুলকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। পুতুলের চিৎকারে রান্নাঘর থেকে ছুটে আসেন কোহিনূর। পরে দৌড়ে পালিয়ে যায় জীবন। ঘটনাটি ঘটে গত ২৪ নভেম্বর সকালে পুতুলদের বাড়িতে। ওই বিষয়টিও জানানো হয় জীবনের বাবা ছাওয়াল মিয়াকে। ঘটনা শুনে কোহিনূর বেগমের প্রতি ক্ষিপ্ত হন ছাওয়াল মিয়া। তিনি বলেন, ‘নষ্টা মহিলা তোর মেয়েও একটা নষ্টা চরিত্রহীন। তোর মেয়েকে ওই মুহুর্তে বাড়ি থেকে বের করে দিবি। তিনি বলেন, তোর মেয়ে বিষ খেয়ে, গলায় দড়ি দিয়ে মরতে পারেনা? তোর মেয়ের কারণে আমার ছেলে নষ্ট হয়ে যাবে।’ ছাওয়াল মিয়ার এমন কটুকথা শুনার পর গত ২৫ নভেম্বর পুতুল বিষপান করে আত্মহত্যা করে।
এমন নির্মম কাহিনীর বর্ণনা দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় ছাওয়াল মিয়ার ছেলে জীবন, জলিল মিয়ার ছেলে ছাওয়াল মিয়া ও ফুল মস্তানের ছেলে দরবেশকে আসামী করে গত ২৭ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্য়াতন আইনে মামলা দায়ের করেছেন পুতুলের মা কোহিনূর বেগম। মামলা নম্বর ২৩। মামলা দায়েরের পর পুলিশ ওই মামলায় জীবনের বাবা ছাওয়াল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে। ছাওয়াল মিয়া জামিনে মুক্তি পেয়ে কোহিনূর বেগমকে মামলা প্রত্যাহার করতে অব্যাহত হুমকি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ছাওয়াল মিয়া তার সহযোগী ছিদ্দিক মিয়ার ছেলে আলমগীর, মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে মুছা মিয়া, মৃত ফুল মস্তানের ছেলে দয়াল মিয়া, মৃত চান মিয়ার ছেলে অহিদ মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে নিয়ে কোহিনূর বেগমের ওপর অবানবিক শারীরিক নির্যাতক করে। খবর পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ ওইদিন গভীররাতে কুহিনুর বেগমকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করে ও ঘটনার সাথে জড়িত ছিদ্দিক মিয়ার ছেলে আলমগীর মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।
এঘটনায় কোহিনুর বেগমের বড় ভাই সিরাজ মিয়া বাদি হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত শনিবার কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে কোহিনুর বেগম সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কা জনক অবস্থায় চিকিৎসাধিন রয়েছেন।
সিরাজ মিয়া এজাহারে অভিযোগ করেন, তাঁর বোন কোহিনূরের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার না করায় অভিযুক্তরা কোহিনূর বেগমের বাড়িতে ঢুকে কোহিনুর বেগমের মুখে পড়নের ওরনা চেপে ধরে বাড়ীর পশ্চিম পাশে খালি জায়গায় নিয়ে কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে আসামীরা কোহিনুর বেগমের তলপেটে লাথি মারতে থাকে। এতে রক্তক্ত জখম হন কোহিনূর বেগম। পরে থাকে কোম্পানীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপরে কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিলওয়ার হোসেন জানান, ছাওয়াল মিয়া ও তাঁর ছেলে খুব খারাপ লোক। কোহিনুর বেগমের দায়ের করা মামলায় সে জামিনে বেরিয়ে কোহিনুর বেগমের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ কোহিনুর বেগমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। আসামীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তিনি বলেন, আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।