পাথর কোয়ারির আধিপত্য বিস্তারে যুবলীগ নেতা খুন : খুনের পরিকল্পনা ঈদের আগে

আদালতে ইউপি চেয়ারম্যান আলফু মিয়ার স্বীকারোক্তি

alfu miahসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ পরিত্র ঈদ উল আযহার আগেই যুবলীগ কর্মী আব্দুল আলীকে খুনের পরিকল্পনা হয় । সুযোগ বুঝেই তাকে খুন করা হয়। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে যুবলীগকর্মী আব্দুল আলী খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া তেলিখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল মতিন আলফু মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন।
আদালত সূত্র জানায়, রোববার দুপুরে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪র্থ আদালতের বিচারক কুদরত-ই-খোদা তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। প্রায় দুই ঘন্টার জবানবন্দিতে যুবলীগ কর্মী আব্দুল আলী খুনের ঘটনায় বেশি কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন আলফু মিয়া। আলফু মিয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানান, ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির আধিপত্য নিয়ে গত ঈদের আগে আবদুল আলীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। শুক্রবার (২৪ অক্টাবর) সেই সুযোগ কাজে লাগায় তারা।
তবে খুনের সময় আলফু নিজের সম্পৃক্ততার কথা এড়িয়ে যান। বলেন, ‘আকদ্দছ ও আলী হোসেনসহ বেশ কয়েকজন হত্যার মিশনে অংশ নিয়েছেন।’
পাথর রাজ্যের একক আধিপত্য ধরে রাখতে খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর নাম বলেছেন আলফু। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আলফু বলেন, ‘উপজেলার দক্ষিণ রণিখাই মনপুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণে টেন্ডারে কোটি টাকার কাজ পেয়েছিলেন আব্দুল আলী। ওই দিন সকালে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলী নিয়ে ট্রলারযোগে মনপুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান।
আলফুর বরাত দিয়ে আদালত সূত্র আরও জানায়, তার সহযোগী আকদ্দছ আলী ও আলী হোসেন মোবাইল ফোনে তাকে জানায় ‘আবদুল আলীকে আজই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে।’ জবাবে আলফু বলেছিলেন- ‘তোমরা যা ভাল মনে কর, সেটাই কর।’
আলফু বলেন, ‘আব্দুল আলীকে খুনের ঘটনা শুক্রবার সন্ধ্যায় আকদ্দছ আলী ও আলী হোসেন মোবাইল ফোনে অমাকে জানায় এবং সাবধানে থাকতে বলে।’
আলফু আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি আদালতে রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান সিলেটের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা। তিনি বলেন, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, খুনের ঘটনার পর পুলিশ আলফু মিয়ার লাইসেন্সকৃত বন্দুক সহ তোতা মিয়া নামের একজনকে গ্রেফতার করে। হত্যা মামলার পাশাপাশি আলফু মিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্রআইনে আরেকটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
খুনের ঘটনার পর পুলিশ কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন আলফু মিয়াকে তামাবিল সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অন্য ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (২৪ অক্টাবর) সন্ধ্যায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কাটাখাল এলাকায় ইঞ্জিন নৌকা থেকে নামার সময় আব্দুল আলীকে কুপিয়ে ও গুলি গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা। তাকে উদ্ধারের পর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী হালিমা আক্তার বাদি হয়ে আলফু মিয়াসহ ২৯ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।