এবার সুন্দরীদের শিকার হাজারো তরুণ!

teen attacked by pretty girlসুরমা টাইমস ডেস্কঃ ফোনে কথা বলে বাসায় রুম ডেট করার ফাঁদে ফেলে শিকার ধরতো সুন্দরী মিলি। তার মন ভোলানো কথায় বহু যুবক পা দিতেন ভয়াবহ ফাঁদে। কিন্তু এ ফাঁদ যে কত ভয়ানক তা যখন টের পেতো তখন কিছুই করার আর থাকতো না তাদের। মিলির ফাঁদে পড়ে এমন বহু যুবক হয়েছে নিঃস্ব। অনেকেই তার ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়ে গোপনে দিতেন লাখ লাখ টাকা। চট্টগ্রামে সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে ফাঁদে ফেলা একটি চক্রকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। চক্রটি এতটাই কৌশলী, যে কোনো ঘটনা ঘটাতো খুব নীরবে। গত ৫ বছর ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাড়িভাড়া নিয়ে এ অপকর্ম করে আসছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। সর্বশেষ থানায় মামলা হওয়ার পর গতকাল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ চক্রকে হাতেনাতে ধরে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।
মূলত ব্যবসায়ীরা ছিলেন তাদের টার্গেট। এরপর একে অন্যান্য পেশার লোকজনকেও ফাঁদে ফেলতো তারা। ব্ল্যাকমেইলিং করে প্রতিমাসে তারা আয় করতো ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। গতকাল সকালে তাদের থানায় আনার পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, এ দলের মূল সদস্য জোবেদা আক্তার জয়া (৪০)। সেই মেয়েদের দিয়ে চট্টগ্রামের কোটিপতি ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলতো । তার দলের অপর সদস্যরা হলো উৎপল চৌধুরী (৩৫), সাইদুল মুসলিম সাইমুন (৩০), আতিকুর রহমান সোহেল (২৬) ও সুমনা আক্তার শিলা (১৮)। এদের মধ্যে মিলি ও আতিক সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। আর প্রধান হোতা জোবেদা আক্তার হলো মিলির মা। যে বাড়িতে এসব অপকর্ম করতো তা ছিল শহরের ৩৬নং কসমোপলিটন আবাসিক এলাকায়। সেখানকার রোড ০৫, পূর্ব নাসিরাবাদ, ষোলশহরের বাড়িতে ছিল তাদের গোপন অভিসারের জাল।
ফোন করা হতো শহরের বিভিন্ন ধনাঢ্য ও টাকাওয়ালা ব্যক্তিদের। একবার, দু’বার, এভাবে বারবার ফোন করার পর একসময় তার কাছে বাধ্য হয়ে ধরা দিতো অনেক যুবক। মিলির সঙ্গে রাতের পার রাত তাদের হতো প্রেমালাপ। আবার বিবাহিত শিলা পুরুষদের বোকা বানাতো খুব সহজেই। তাদের আকর্ষণ করে এমন সব কথাবার্তা বলে মানসিকভাবে তার প্রতি দুর্বল করে দিতো মুহূর্তেই। ফোনে এসব কথা শোনার পর যে কোনো পুরুষই তার সঙ্গে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠতো। মিলি তাদের জানাতেন এভাবে ফোনে কথা বলতে তার ইচ্ছে হয় না। তাই বাসায় যখন কেউ থাকবে না তখন যেন সোজা চলে আসেন। কসমোপলিটনের ওই বাড়িতে একবার কেউ মিলির মন ভোলানো কথায় পা দিলে মানসম্মান নিয়ে ফিরে আসতো পারতো না। কেননা, আগে থেকেই সেখানে গোপন ক্যামেরার ফাঁদ ফেলে রাখতো জোবেদা, উৎপল, সাইমুন আর আতিক।
বিষয়টি টের পেয়ে গেলে অস্ত্রের মুখে লোকজনকে ছবি তুলতে বাধ্য করতেন এ চক্রের সদস্যরা। ইন্টারনেটে ছবি ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলে মুহূর্তেই আদায় করতেন দুই থেকে তিন লাখ টাকা। যারা টাকা দিতে পারতেন না তাদের ফোন করাতে বাধ্য করতেন পরিবারের সদস্যদের কাছে। অনেকে ঘটনা জানাজানি হওয়ার ভয়ে বন্ধুদের মাধ্যমে টাকা দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতেন।
পাঁচলাইশ থানা পুলিশ জানায়, সর্বশেষ এ চক্রের হাতে নিঃস্ব হয়ে থানায় মামলা করেছেন আকছির উদ্দিন মোল্লা নামের এক ব্যক্তি। মামলার আগে মোবাইল ফোনে ওই ব্যক্তির সঙ্গে রুম ডেট করার প্রস্তাব দেয় মিলি।
অআকছির উদ্দিন জানান, মিলির মিষ্টি কথায় তিনি প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কখনোই বুঝতে পারেননি তা ছিল ফাঁদ। গত ২০শে মে রাত ৮টায় ৩৬নং কসমোপলিটন আবাসিক এলাকার বাসায় গিয়ে আটকা পড়েন তিনি। চক্রটি বিবস্ত্র অবস্থায় সুমনা আকতার শিলার সঙ্গে তার নগ্ন ছবি ভিডিও করে।
তিনি এর প্রতিবাদ করলে ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় তারা। একপর্যায়ে আকছির উদ্দিনের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। সামাজিক চক্ষুলজ্জার ভয়ে আকছির তার দুই বন্ধুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে মুহূর্তে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন।
পরদিন ভোর ৬টায় তাকে বাড়ি থেকে মুক্ত করে দিয়ে বাকি টাকা দ্রুত পরিশোধ করার জন্য হুমকি দিতে থাকেন। আকছির উদ্দিন বিষয়টি জানাতে পাঁচলাইশ মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার সূত্র ধরে গতকাল পুলিশ তাদের অআটক করে।
এ ব্যাপারে থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত আজিজ আহমেদ বলেন, ‘এই চক্রটি অনেক লোককে ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে অপকর্ম করতো। অনেক লোক বিষয়টি আমাদের জানিয়েছে। শেষমেশ মামলা হওয়ার পর তাদের আটক করতে পেরেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে ওরা।’
তিনি আরো বলেন, ‘সহজ সরল অনেক মানুষকে তারা বাসায় ডেকে নিয়ে গিয়ে জোর করে নগ্ন করতো। পরে তা ভিডিও করতো। এতে ঘটনা জানাজানি হওয়ার ভয়ে কেউই মুখ খুলতো না। সবাই বিষয়টি টাকা দিয়ে ধামাচাপা দিতে রাজি হতেন। আর এই দুর্বলতার সুযোগটিই নিতো ওই সিন্ডিকেটটি।’