ফটো সাংবাদিক – দুর্যোগই যাদের নিত্যসঙ্গী
আমির হোসেন সাগরঃ পৃথিবীতে মানুষ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। আর তাদের জন্য আছে সুন্দর একটা পৃথিবী। আছে সমাজ, সমাজে আছে ভাল মন্দ। এই নিয়ে মানুষকে বাঁচতে হয়। বাঁচার জন্য প্রয়োজন কাজ। তাই মানুষকে খোঁজতে হয় কাজ। কেউ শুরু করে ব্যবসা, কেউ করে অন্য কাজ। বিভিন্ন পেশার সাথে বিভিন্ন জন জড়িয়ে পরে। এর মধ্যে সাংবাদিকতা হল একটা কঠিন পেশা। সুস্থ মনমানসিকতা নিয়ে সমাজের কল্যাণে কাজ করলে সমাজের সেবা করার সুযোগ লাভ করা যায়। জনসেবাকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করে এ কাজ করলে ইহ ও পরকালীণ কল্যাণ লাভ করা সম্ভব হয়।
সাংবাদিকতার সাথে জড়িতদের আমাদের সমাজে বলা হয় কলম সৈনিক। এরা কাজ করেন দেশ, মাটি ও সমাজের জন্য।
কেউ কেউ বলে থাকেন এরা হচ্ছেন জাতির বিবেক। এদের লেখনির মাধ্যমে উঠে আসে সমাজের ভাল ও মন্দ দিক। মানুষ সমাজের বিভিন্ন কথা জানতে পারে তাদের মাধ্যমে। জনগণ এই সাংবাদিকদের কাছে আশা করে। প্রতিদিন কোথায় কি হচ্ছে তা জানার জন্য। তাদের একটি লেখনীতে হতে পারে সন্দুর একটি সমাজ আবার হতে পারে নরক। তাই এই পেশা খুবই মূল্যবান। সত্যের পথে সাহসিকতার সাথে কলম দিয়ে লিখতে হয়। তাদের বলা হয় কলম সৈনিক বা কলামিস্ট। কিন্তু সাংবাদিকদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হচ্ছে আলোকচিত্রী বা ফটো সাংবাদিক।
আমাদের দেশে আছে সমাজকে সুন্দর করার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ, র্যাব, আর্মি তাদেরকে দিয়েছে সমাজের ভাল মন্দ দেখার দায়িত্ব। সমাজের কোথাও বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তারা ছুটে যায়। কোথাও মারামরি, বোমা হামলা, গোলাগুলি শুরু হলে ফটো সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে ছুটে যায়।
কিন্তু তাদের নিজেদের জীবন রক্ষার জন্য নেই কোন অস্ত্র। তাদের আছে শুধু মনোবল আর সাহস। পুলিশ বা আর্মিরা যায় অস্ত্র সামনে নিয়ে, আর আলোকচিত্রী সাংবাদকরা যায় কামেরা সামনে নিয়ে। তারা চায় তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাতির কাছে যেন সঠিক চিত্রটি তুলে ধরতে পারি।
এই চিত্র থেকে বেরিয়ে আসবে আলস অপরাধী। তাদেরকে চিহ্নিত করে আইন আওতায় এনে শাস্তি দিয়ে সুস্থ সমাজ গড়তে সাংবাদিকদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। যখন সাংবাদিক জাতির বিভেক মনে করে তখন তারা মারামারি, গোলাগুলির মাঝে ক্যামেরা নিয়ে ছুটে যায় যুদ্ধক্ষেত্রে সমাজের ভাল মন্দ তুলে ধরার জন্য।
এই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কেউ ফিরে আসে আবার কেউ ফিরে আসে না। এভাবে বিশ্বের অনেক সাংবাদিকই শহীদ হয়েছেন। যেমন- ইসরাঈল কর্তৃক ফিলিস্তিনীদের উপর বর্বরোচিত হামলায় শহীদ হয়েছেন একজন ফটো সাংবাদিক।
বর্তমানে ফিলিস্তিনীদের উপর যে অমানবিক বর্বরতা ইসরাঈল চালাচ্ছে সেই বর্বরতার চিত্রগুলো আমরা ক্যামেরার মাধ্যমে পাচ্ছি। আজকের এই ফিলিস্তিনী মুসলমান শিশু, মহিলাদের উপর যে বর্বরতার তরতাজা ছবি সারাবিশ্ব পাচ্ছে তা শুধুই এই ফটো সাংবাদিকদের সাহসিকতার কারণে। এই নির্মম ছবিগুলো দেখে আমরা নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিনা। কিন্তু কি করব। আল্লাহর কাছে দোয়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। আর এই দোয়া আমরা করতে পারছি এই সাংবাদিকদের জন্যই। তাদের এই কলম সৈনিক ও ক্যামেরা সৈনিক যেন জাতির বিভেক হয়ে থাকে।
আর এই কাজ করতে গিয়ে ইসরাঈলের হাতে শহীদ হলেন একজন ফটো সাংবাদিক। তিনি শহীদ হয়ে দুনিয়ার মানুষকে ঋণী রেখে গেলেন। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
আর সুস্থ সমাজের জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষা। শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। আর এই শিক্ষার মাধ্যমে জন্ম নিবে সত্যিকারের সৈনিক। ফলে আমাদের সমাজ হয়ে উঠবে সুন্দর।
লেখকঃ বিজয় টিভি ক্যামেরাপার্সন, সিলেট জেলা অফিস।