শ্রদ্ধাঞ্জলি : স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৩তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে : আলমগীর নূর

Alomgir Noorআবারও ফিরে এসেছে আমাদের জাতীয় জীবনের অত্যন্ত ব্যদনাদায়ক ও রক্তাক্তক্ষণ ৩০ মে। ১৯৮১ সালের জাতির এই শোকার্ত দিনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মীরজাফর ও ঘাতকের নিষ্ঠুরছোবল এদেশের কোটি কোটি মানুষের আধুনিক স্বাধীন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ স্থপতি মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে আমাদের কাছ থেকে চিরতরে কেড়ে নিয়ে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মের এই শ্রেষ্ঠ কাণ্ডারীর ৩৩তম মৃত্যু বার্ষিকীর আজকের এই শোকার্ত দিবেসে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এই মহান নেতাকে এবং তাঁর আত্মর মাগফেরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহর তা’আলা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন, আমিন।

বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রটির সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার সাথে সুর্দীর্ঘ চার দশক ধরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ও তাঁদের উত্তরাধীকার নতুন প্রজন্মের সাহসী ঠিকানা তারেক রহমান প্রতিটি নামই এক একটি শব্দের শাব্দিক প্রতিচ্ছবি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান এই তিনটি নামের বিশেষায়িত রূপক আজকের বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ।
মেজর জিয়া থেকে রাষ্ট্রপতি , এই সময়ের তিনি নিজে একটি পরাধীন দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিলেন, স্বশস্ত্র যুদ্ধ করলেন, তাঁর ডাকে দেশের সর্বস্তরের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেন। জেনারেল জিয়াউর রহমান সময়ের কঠিন বাস্তবতায় দেশের ক্ষমতা নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি নিজ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করেননি। মূলতঃ রাজনৈতিক নেতৃত্বের শূণ্যতায় দেশের তৎকালীন আপামর জনসাধারণ তাঁকে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছিলেন।
রাজনীতি, সুসংহত গণতন্ত্র এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তিনটিই একটি রাষ্ট্রের কাঠামোকে সুদৃঢ় করে। রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার মধ্য দিয়ে জনগণের মৌল মানবিক অধিকারগুলো সুনিশ্চিত হয়। সেই উপলব্দি থেকে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন দেশে আবার উদার রাজনৈতিক চর্চা ও সুসংহত গণতন্ত্রায়নের উদ্যোগ নেন।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্রে জাতিকে সুগঠিত করেন। প্রতিষ্ঠা করেন, মাটি ও মানুষের উন্নয়ন ও সুসংহত রাজনৈতিক দল বিএনপি। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূলতন্ত্রে সমগ্র জাতিকে সুগঠিত করেন। বাংলাদেশের দুর্বল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেন। দেশে আত্মনির্ভরশীল স্বাধীন অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। রাজনীতিকে স্থিতিশীল করেন। বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে সম্মানজনক আসনে অধিষ্ঠিত করেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। তাঁরই প্রচেষ্ঠায় বাংলাদেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আসন লাভ করতে সক্ষম হয়। স্বাধীনতার অতন্ত্র প্রহরী, গণতন্ত্রের সাধক অকৃত্রিম দেশ প্রেমিক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আজও দেশের ১৮ কোটি মানুষের অন্তরে বিশিষ্ট আসন লাভ করে আছেন।
৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতাকে সুসংগত এবং সুদৃঢ় করার জন্য ১৯৭৯ সালে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজে সামরিক বাহিনীর সদস্য হয়েও সামরিক বাহিনীর নিকট হতে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’ এটাই ছিল তাঁর রাজনৈতিক মূলমন্ত্র। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।’
তৎকালীন সময়ে বাঙ্গালী জাতির দুর্বিসহ ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়ের্ছিলেন।-দেশমাতৃকার স্বাধীনতা কায়েমের জন্য জীবনবাজি রেখে প্রকাশ্য স্বাধীনতার ঘোষণা করতে হবে।
যুদ্ধকালীন সময়ে কথিত রাজনীতিবিদরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের ৭ কোটি জনগণেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ভয়াল থাবার মুখে ফেলে ভারতে আত্মগোপনে আশ্রীত হয় ঠিক সেই সময়ের রাজনৈতিক নেতৃৃত্বশূন্যতার গভীর সংকটে দেশ–তখনি মেজর জিয়া ধূমকেতুর মতো আবির্ভুত হয়ে নিজের জীবনের মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও চট্টগ্রমের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্রে যান। সেখানে তিনি নিজে স্বাধীনতা ঘোষণার এক বিৃবতি তৈরি করেন এবং রেডিওতে পাঠ করেন …………
প্রিয় দেশবাসী-
“আমি মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট ও লিবারেশন আমি চিফ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি এবং যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। বাংলাদেশ এখন স্বাধীন। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে নেমেিেছ। আপনারা যে যা পারেন সামর্থ অনুযায়ী অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়–ন। আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হবে এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে দেশ ছাড়া করতে হবে। গ্রেটবৃটেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, সোবিয়েট ইউনিয়ন, চীনসহ বিশ্বের স্বাধীনতা প্রিয় দেশের উদ্দেশ্যে আমাদের আহ্বান আমাদের ন্যায় যুদ্ধের সমর্থন দিন এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেন। …….. ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদের অবধারতি।” (সূত্র-অলি আহাদ জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-৭৫, পৃষ্ঠা-৪০৯) এটাই ঐতিহাসিকভাবে স্বাধীনতার প্রথম প্রকাশ্য ঘোষণা। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের শিল্পপতি তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এ.কে. খানের বিশেষ ভূমিকা পরবর্তীতে জিয়ার উক্ত মৌলিক ঘোষণায় শেখ মুজিবের পক্ষে কথাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সংযোজন করে প্রচার করা হয়েছিল।
জাতির মহাসদ্ধিক্ষণে এই ঐতিহাসিক কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ও সাহসী দায়িত্ব পালনের জন্য শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন রাষ্ট্রপতি জিয়া। এছাড়াও নয় মাসব্যাপী আমাদের স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের তিনি ছিলেন একজন মহান সংগঠক ও বীরযোদ্ধা। তাইতো তাঁকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ খেতাব ‘বীর উত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনিই স্বাধীনতার ঘোষক। মরহুম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের যেখানে ‘ইতি’ র্সেখানেই মেজর জিয়ার ‘শুরু’।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতারের পরমুহুর্তে মেজর জিয়ার দুঃসাহসিক আত্মপ্রকাশ। মেজর জিয়াই মরহুম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করে শেখ মুজিবকে ইতিহাসের মহানায়ক হওয়ার ক্ষেত্র টেকসই করে সম্প্রসারিত করেছেন। শুধু তাই নয়, বর্তমানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জিয়াউর রহমানই পাশের দেশ-ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। জিয়ার অবদানেই শেখ হাসিনা আজ আওয়ামী রাজনৈতিক দলের সভানেত্রী এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
আজকাল স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক নিরর্থক এবং নিতান্তই কূট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার মাত্র। মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা আছে বিশ্বজুড়ে। জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সিপাহশালার। তিনি ছিলেন, এগার হাজার প্রতিরোধকারী সেনার কমান্ডার। সেটাই তাজউদ্দিন বেতার ভাষণে বলে গেছেন ১০ এপ্রিল ১৯৭১
“The government of the people re-public of Bangladesh, first announced through Major Ziaur Rahman to set up a full pledged operational base from which it is administering the liberated areas”
ভারতে সরকারী ওয়েব সাইটে বলা আছে “While the where abouts of Mujib remained unknown, Major Ziaur Rahman announced the formation of the provisional government of Bangladesh over radio Chittagong.
আর মার্কিন ষ্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতি On march 27 the clandestine radio announced the formation of a revolutionary army and provisional government under the leadership of Major Ziaur Rahman”.
মেজর জিয়া শুধু একজন মুক্তি যোদ্ধাই নয়, তিনি একাধারে স্বাধীনতার ঘোষক, একজন সমর পরিচালক, একজন বিশ্বনেতা এবং সর্বোপরি একজন জননন্দিত রাষ্ট্রপতি । এই নশ্বর বিশ্ব যতদিন টিকের্ থাকবে, ততদিনই জিয়ার নাম স্বর্ণোজ্জ্বল হয়ে বাংলাদেশ তো বটেই সারা বিশ্বজুড়েই কোন না কোনভাবই আলোচনায় থাকবে। আজ তাঁর ৩৩তম মৃত্যু বার্ষিকীতে মহান স্বাধীনতার ঘোষক রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। জাতির বর্তমান দুর্বিসহ ক্রান্তিকালে মেজর জিয়ার মতো একজন কালজয়ী বহুদলীয় গণতন্ত্রের কান্ডারীর নিরন্তর প্রয়োজন।

লেখক: রাজনৈতিক, মিডিয়া ও উন্নয়ন কর্মী।
Email: [email protected]
Mobile : 01815-639055