একজন সফল সমাজকর্মী অধ্যক্ষ এম আতাউর রহমান পীর

Manik Photoআজিজুল হক মানিক; অধ্যক্ষ এম আতাউর রহমান পীর একজন সফল সমাজকর্মী। সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত৷৷ রোটারী ক্লাব অব জালালাবাদ এর প্রতিষ্ষ্ঠান জালালাবাদ রোটারী প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র ও হাসপাতাল এর তিনি একজন ট্রাস্টি মেম্বার। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমী, বাংলাদেশ রসায়ন সমিতি, কেন্দ্রিয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ-সিলেট, কো-অর্ডিনেটিং কাউন্সিল-শহর সমাজসেবা-সিলেট, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি-সিলেট, ডায়বেটিক সমিতি-সুনামগঞ্জ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী সমিতি-সুনামগঞ্জ এর আজীবন সদস্য৷৷পাশাপাশি জনাব আতাউর রহমান পীর সাহিত্যকর্মের সাথেও জড়িত। অবসর সময়ে লেখালেখি করা তাঁর নেশা। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধৌ রয়েজে—উচ্চ মাধ্যমিক ব্যবহারিক‍ রসায়ন ও স্নাতক ব্যবহারিক‍ রসায়ন, দ্যা ত্রিূড অব ইসলাম(২০০৬,অনুবাদ), ইসলাম-কালজয়ী জীবনাদর্শ(২০০৭,প্রবন্ধ), জেনারেল ওসমানী (২০০৯,সম্পাদিত), সুখের সন্ধানে (২০০৯,প্রবন্ধ), দৈনন্দিন জীবনে মহানবী(সাঃ)-(হাদিস সংকলন-২০০৯)৷ জনাব আতাউর রহমান পীরের গ্রন্থসমুহে মানবিক মূল্যবোধ ও তরুণদের প্রতি দিকনির্দেশনা লক্ষ্য করা যায়৷একজন সফল সমাজকর্মী হিসেবে তিনি সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ সালে মুক্তিযুদ্ধ একাডেমী, সিলেট এর পক্ষ হতে সম্মাননা পদক এবং ২০০৯ সালে দ্যা গ্লোবাল ইন্সিটিউট,কলকাতার পক্ষ হতে ইন্টারন্যাশনাল হিউমানিটারিয়ান এওয়ার্ড লাভ করেন৷
আমি ১৯৭৯ সালে মদন মোহন কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হই৷ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় আমার ছড়া-কবিতা ছাপা হত৷ কলেজের পক্ষ হতে আয়োজিত সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রতিযোগীতায় চ্যাম্পিয়ন এবং উপস্থিত বক্তৃতায় কুমিল্লা বোর্ডে প্রথম হওয়ায় আমার একটা আলাদা পরিচিতি ছিল৷কলেজের অধ্যক্ষ শ্রী কৃষ্ণ কুমার পাল ও অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ সাহিত্যওসংস্কৃতি কর্মে আমাকে সহযোগিতা করতেন৷ ১৯৮০ সালের জানুয়ারী মাসে রসায়ন বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে জনাব আতাউর রহমান পীর মদন মোহন কলেজে যোগদান করেন৷একজন সমাজকর্মী ও সাহিত্যসেবী হিসেবে তিনি আমাদেরকে সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা করতেন৷ তাঁর সূজনশীল কর্ম আমাদেরকে দারুনভাবে মুগ্ধ করে৷ফলে তাঁর বিস্তারিত তথ্য জানতে আমরা সবাই আগ্রহী হয়ে উঠি এবং প্রাথমিকভাবে জানি যে তিনি সুনামগঞ্জের সন্তান৷ মরমী কবি শাহ আছদ আলী পীর (রহঃ) এর প্রপৌত্র এবং সুনামগঞ্জ সরকারী জুবিলি হাইস্কুলের স্বনামধন্য শিক্ষক মরহুম আব্দুল মান্নান পীর-এর প্রথম পুত্র৷এম আতাউর রহমান পীর ১৯৫০ সালের ৮এপ্রিল সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি ১৯৬৬ সালে সুনামগঞ্জ সরকারী জুবিলি হাইস্কুল থেকে এস,এ্‌স,সি এবং ১৯৬৮ সালে সুনামগঞ্জ কলেজ হতে এইচ,এ্‌স,সি ও ১৯৭১ সালে সিলেট এম,সি কলেজ থেকে রসায়ন বিজ্ঞানে অনার্স পাশ করার পর ১৯৭২ সালে(পরীক্ষা হয় ১৯৭৪ সালে)চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।তিনি কর্মজীবণ শুরু করেন ময়মনসিংহের আঠারবাড়ি কলেজে শিক্ষক হিসেবে ১৯৭৪ সালে এবং পরে ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে একই জেলার গৌরীপুর কলেজে প্রায় ৬ বৎসর অধ্যাপনা করেন৷ ৷১৯৮২ সালে ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটে আমি মদন মোহন কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হই। ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে যেসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো, এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করতেন জনাব আতাউর রহমান পীর স্যার৷৷
২০০২ সালে তিনি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্টান মদন মোহন কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন৷ প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত থেকে ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে অবসর গ্রহন করেন৷২০০৮ সালে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়,গাজীপুর থেকে ১ম শ্রেণীতে বি,এড এবং ২০০৯ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ম শ্রেণীতে এম,এড ডিগ্রি লাভ করেন ৷এখন তিনি ইটালির দ্যা নিউ এজ ইউনিভার্সিটির কলকাতা ক্যাম্পাসে ‘আর্সেনিক দূষিত এলাকায় বিকল্প খাবার পানির উৎস’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের জন্য গবেষণারত আছেন ৷
শিক্ষাবহির্ভূত কার্যত্রূমের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর-এর অফিসার হিসেবে সরকার কর্তৃক কমিশন প্রাপ্ত হন এবং ২০০৬ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন ৷জনাব আতাউর রহমান পীর ২০০৮সালে ‘বিএনসিসি’ এর ক্যাডেটসহ সরকারীভাবে ভারত সফর করেন ৷ তাঁর প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে বিএনসিসি, সিলেট এর জন্য জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট এর পাশাপাশি খিদিরপুর এলাকায় ১,২৬ একর জমি সরকারের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে ৷ সুদীর্ঘ ৩০ বছর বিএনসিসি’র মূলমন্ত্র জ্ঞান, শৃঙখলা এবং একতা’র প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ২ময়নামতি ব্যাটালিয়নের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন শেষে ২০১০সালে তিনি বিএনসিসি থেকে অবসর গ্রহণ করেন ৷২০১১সালে বিএনসিসি সদর দপ্তর থেকে প্রথমবার যে দু’জনকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়, তাদের মধ্যে তিনি একজন ৷
২০০২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রণালয় হতে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণীশিক্ষক সম্মাননা ও স্বর্ণপদক লাভ করেন ৷এছাড়া ২০০৬সালে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ স্কাউট কমিশনার হিসেবেও তিনি সম্মাননা পদকপ্রাপ্ত হন ৷ জনাব এম আতাউর রহমান পীর ১৯৯৭-৯৮ সালে রোটারী ক্লাব অব জালালাবাদ-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশের শ্রেষ্ঠ সভাপতি হিসেবে পুরস্কৃত হন ৷ এছাড়া সিলেট মোবাইল পাঠাগার, মেট্রোপলিটন ল’কলেজ-সিলেট এবং মেট্রোপলিটন কিন্ডারগার্ডেন-সিলেট এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ৷২০০৬ সালে তিনি সুনামগঞ্জ শহরে ‘শাহ আছদ আলী পীর(রহঃ)ফাউন্ডেশন’ গঠন করে ওই সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের মেধাবৃত্তির প্রবর্তনসহ একই বছর জামেয়া হাফিজিয়া দরগাহে শাহ আছদ আলী পীর (রহঃ) নামে সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর মহল্লায় একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন ৷ ২০১২ সালে তাঁর দানকৃত (মহালদিক, এয়ারপোর্ট, সিলেট ) ভূমিতে হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) হাফিজিয়া মাদ্রাসা চালু করা হয়েছে ৷৷ ব্যক্তিজীবনে তিনি ২পুত্র ও ১কন্যা সন্তানের জনক ৷ উনার স্ত্রী মিসেস ফিরোজা আক্তার একজন শিক্ষিকা ৷ তাঁর বড় ছেলে অস্ট্রেলিয়ার ওলগন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করার পর লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ৷ বর্তমানে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশুনা করছেন ৷তাঁর ছোট ছেলে ওআইসি পরিচালিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি,গাজীপুর থেকে অনার্স পাশ করার পর যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে বর্তমানে শাবিপ্রবি-তে পিএইচডি ডিগ্রীর জন্য গবেষণারত আছেন ৷ তাঁর একমাত্র কন্যা সপ্তম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী ৷জনাব এম আতাউর রহমান পীর বর্তমানে সিলেট সেন্ট্রাল কলেজে প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত ৷ একজন সফল সমাজকর্মী হিসেবে তিনি যেভাবে মানুষের জন্য কাজ করেছেন, তা সত্যিই অতুলনীয় ৷ সমাজকল্যানের জন্য জনাব আতাউর রহমান পীর এর কর্মতৎপরতা আমাদেরকে সবাইকে অনপ্রানিত করে ৷