কেমন বাংলাদেশের আছেন গণমাধ্যমকর্মীরা!

bannerড. সরদার এম. আনিছুর রহমানঃ ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে কি ঘটেছিল তা আমাদের সবারই কমবেশী জানা। তাই এখানে পাঠকের বিরক্তি ঘটাতে চাই না। যে প্রেক্ষাপটে যাই ঘটুক না কেন, এর পর থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মী তথা সাংবাদিকরা ১৬ জুনকে সংবাদপত্রের কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন । এবারও হয়তো তা পালন করছেন সাংবাদিক সংগঠনগুলো্ । তবে সাংবাদিক নেতাদের যদি প্রশ্ন করা হয় এই দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে গেল ৪০ বছরে কি অর্জন হয়েছে ? আজ ২০১৫ সালে এসে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীরা কতটা স্বাধীন ? আর সাংবাদিকরাই বা কেমন আছেন ! জানি, তাদের কাছ থেকে এসব প্রশ্নের কোনো সঠিক সদুত্তর পাবো না। কেননা, সাংবাদিকরা আজ রাজনীতিবিদদের কাছে নিজেদের বিবেক বিকিয়ে দিয়ে লেজুর ভিত্তিক সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েছেন। ফলে তারা নিজেদের রাজনৈতিক বলয়ের দৃষ্টিকোণ থেকেই গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাধীনতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন।এর ব্যতিক্রম কিছু হবে না, এতে অন্তত: আমার কোনো সন্দেহ নেই।
ফলে দিবসটি নিয়েও রয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা বিতর্ক । দেশের নীতিহীন রাজনীতির বেড়াজালে আবদ্ধ আমাদের সাংবাদিকরাও নিজেদের বিকিয়ে দিয়েছেন দলের কাছে। ফলে একপক্ষের কাছে এটি সংবাদপত্রের কালো দিবস হলেও অন্যপক্ষ এমনটি মানতে নারাজ । যদিও অতীতে সম্মিলিতভাবে এই দিবস পালনের নজির ছিল সাংবাদিক সমাজে । কিন্তু এখন আর সেই সময় নেই, দেশের রাজনৈতিক বিভাজনে সাংবাদিকরাও দ্বিধাবিভক্ত। দ্বিধাবিভাজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই ক্রমেই সেটা সহিংসতায়ও রূপ নিচ্ছে। ছোটকাল থেকেই গ্রামবাংলায় একটি প্রবাদ শুনে এসেছিলাম- ‘কাকের মাংস কাকে নাকি খায় না’। কিন্তু বর্তমানে সাংবাদিকদের মধ্যে যে ধরনের বিভেদ তৈরি হয়েছে তাতে যেন সেই প্রবাদকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে। সর্বশেষ জাতীয় প্রেসক্লাব নিয়ে যা ঘটেছে তা গোটা জাতিকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। জাতীয় প্রেসক্লাব নিয়ে এর চেয়ে বেশী কিছু বলে নতুন বিতর্কে নিজেকে জড়াতে চাই না। যা ঘটেছে এবং ঘটছে তা অত্যন্ত দু:খজনক।
এদিকে সোমবার জাতীয় সংসদের সরকারের মূখপাত্র তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তো বলেই দিয়েছেন, দেশে বর্তমানে গণমাধ্যম সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে। সংবাদমাধ্যম সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। এই সরকারের আমলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অতীতের যেকোনো সময়ের থেকে ভালো।
অন্যদিকে ১৬ জুন ‘সংবাদপত্রের কালো দিবস’ উপলক্ষে সোমবার এক বাণীতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পূর্বশর্ত হলে বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও খবরদারির খড়্গ চাপিয়ে তাদের পুরোনো পথেই আবার যাত্রা শুরু করেছে। সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের ওপর জুলুম অব্যাহত রেখেছে।সরকার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদ কর্মীদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিচারও হচ্ছে না। সাগর-রুনীর হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া এর অন্যতম উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেন।
ফলে আমরা সহজেই বুঝতে পারছি এই দিবসটি নিয়েও আমাদের রাজনীতিতে রয়েছে বিতর্ক। তাই দেশের লেজুরভিত্তিক সাংবাদিকতায় সাংবাদিকদের মধ্যে এ নিয়ে ভিন্নমত থাকাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই হয়তো এই দিবসটি একপক্ষ পালন করছে, অন্যপক্ষ সরকারের বগলে বসে মুচকি হেসে যাচ্ছে। এতে আখেরে ক্ষতিটা কার হচ্ছে তা অবশ্য চিন্তা করার বিষয়।
আজ সাংবাদিকদের কোনো কোনো সংস্থা এ উপলক্ষে সমাবেশ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, সংবাদপত্রে কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এসব আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিনটি প্রতিবছর পেরিয়ে যায়। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, বিনা বাধায় তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবস্থার বিশেষ কোনো পরিবর্তন ঘটে না। তবে এই দিবসটি পালনের মধ্যদিয়ে দেশের সংবাদমাধ্যমের অবস্থা নিয়ে কিছুটা হলেও নতুন করে চিন্তাভাবনার সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিছু প্রশ্ন নতুন করে উত্থাপনের অবকাশ মেলে। এছাড়া আর অন্য কিছু লক্ষনীয় নয়।
এরপরও প্রশ্ন উঠে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম কতটুকু স্বাধীন? তা অবশ্য সংবাদপত্র শিল্পের সাথে যারা জড়িত তারা বর্তমানের অবস্থা ভাল করে বলতে পারবেন। তবে আমরা যারা সাধারণ নাগরিক তা কিছুটা অনুভব করতে পারছি মিডিয়ার ভুমিকা দেখে।
প্রসঙ্গত, অতি সম্প্রতি এক সংবাদপত্রের অফিসে গিয়ে সম্পাদকের সাথে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গটি নিয়ে কথা বলছিলাম। তিনি শুধু এতটুকু বললেন, ‘মাঝে মধ্যেই ফোন আসে সরকারের উপর মহলের বিভিন্ন দপ্তর থেকে, তাতে কিছু অলিখিত নির্দেশনার কথাও জানিয়ে দেয়া হয়। যা আমরা মেনে চলে কোনো মতে চালিয়ে যাচ্ছি।’
অন্য একটি পত্রিকা অফিসে গিয়েছিলাম আমার অনেকদিনের পরিচিত এক সাংবাদিক বন্ধুর সাথে কথা বলার জন্য। পত্রিকাটি দুই-তিন বছর আগেও প্রচারের দিক থেকে শীর্ষ ৫ এর মধ্যে ছিল। সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের পিকআওয়ার, অফিসে প্রবেশ করেই দেখতে পেলাম, অনেক ডেস্ক তথা কম্পিউটারের সামনে খালি খালি চেয়ার পড়ে আছে। এবিষয়ে আমার পরিচিত বন্ধুটির কাছে প্রশ্ন করে জানতে পেলাম সাংবাদিকদের কর্মের সুযোগের এক ভয়াবহ চিত্র। তিনি জানালেন, গেল কয়েক মাস থেকে লোক ছাটাই চলছে, তাই ফাঁকা। তিনি এও জানালেন- এ অবস্থা শুধু তাদের একার নয়, অধিকাংশ সংবাদপত্রের। কারণ জানতে চাইলে শুধু তিনি বললেন- দেশের অবস্থা ভালো না তাই এমনটি হচ্ছে।
ফলে সরকার ও সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা যাই বলুক না কেন, বাস্তব চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। আমার জানা মতে, গেল ক’বছরে অনেক সাংবাদিক বেকার হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে ভিন্নমত দমনে যে কয়টি সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, ওইসব মিডিয়ার সাংবাদিকদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দৈন্যতা। ব্যয় করতে না পেরে অনেকে ঢাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকে বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকের সন্তানদের লেখাপড়াও বন্ধ হবার উপক্রম হয়ে পড়েছে। ফলে সবমিলেই চরম দৈন্যতায় দিনাতিপাত করছেন অনেকে ।
এছাড়া সম্প্রতি প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ২০১৪ সালের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বৈশ্বিক নিয়ে সূচক প্রকাশ করে তাতেও বাংলাদেশের সংবাদপত্র্রের একটা চিত্র ফুটে উঠেছে। ওই সূচকে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দেখা যায় ১৪৬। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে ভুটান, মালদ্বীপ, ভারত ও নেপালের অবস্থানও আমাদের ওপরে। আমাদের ২০১৪ সালের সূচকের ভিত্তিতে সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ দেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অবস্থা আগের দুই বছরের তুলনায় দৃশ্যত কোনো পরিবর্তিত হয়নি।
ফলে সরকারের বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার যে কোনো মিল নেই, তা যাঁরা সংবাদমাধ্যমে কাজ করেন, তাঁরা ঠিকই উপলব্ধি করছেন। আগের বছরের তুলনায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হয়রানির পরিমাণ ১০৬ শতাংশ বেড়েছে। হয়রানির মধ্যে রয়েছে মানহানি, দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা। এ ছাড়া ২০১৪ সালে মোট ২১৩ জন সাংবাদিক ও আটজন ব্লগার বিভিন্নভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে চারজনকে হত্যা করা হয়। গুরুতর জখম হয়েছেন ৪০ জন আর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬২ জন সাংবাদিক। আর্টিকেল-১৯ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এছাড়াও মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং অধিকারের তথ্যেও এর সত্যতা মিলে। অধিকারের প্রতিবেদনের তথ্য মতে, চলতি বছরের গেল ৫ মাসে সাংবাদিক আহত হয়েছেন ৪৭ জন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ১৪ জন, গ্রেফতার হয়েছেন ৫জন।
এছাড়া অধিকার-এর দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৩ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৭৭২ জন, হামলার শিকার হয়েছেন ৭৬ জন, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৮ জনকে, অপহরণের শিকার হয়েছেন তিনজন, হুমকি দেওয়া হয়েছে ২৯৩ জনকে, চারজনকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে, মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৫৫ জনের বিরুদ্ধে এবং বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৫৫ জন সাংবাদিক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে নির্যাতন, হয়রানি ও হুমকির শিকাররের ঘটনা তো রয়েছেই। সরকারি দল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা, সন্ত্রাসী ও পরিচয় গোপনকারীদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পেয়েছেন অনেকে ।
অন্যদিকে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের একটা বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান ফুটে উঠে সদ্য সমাপ্ত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকেও। সেদিন সরকার-সমর্থিত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকেরা অন্তত ছয়জন সাংবাদিককে শারীরিকভাবে আক্রমণ করেছেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রেখেছেন আরও ১৫ জনকে। সাংবাদিক পেটানোর দৃশ্যগুলো চেয়ে দেখেছেন পুলিশের সদস্যরা।
ফরহাদ মাজহার ও সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পতির করুণ পরিণতির কথা তো আমাদের সবারই জানা।
এরপরও আজ যখন ১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস পালিত হচ্ছে তখন আমার দেশ’র সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রায় দুই বছর ধরে জেলে আটক, তেমনি ইটিভির সাংবাদিক কনক সারো্ওয়ার এবং ইটিভির চেয়ারম্যান আবদুস সালামসহ আরো বেশ কয়েকজন সাংবাদিক কারাগারে আটক রয়েছেন। এরপরও গণমাধ্যমের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশ কর্তৃক সাংবাদিক নির্যাতন, ধর্মীয় উগ্রপন্থী কর্তৃক মুক্ত চিন্তার লেখক ব্লগারদের হত্যার ঘটনা তো অহরহ ঘটেই চলেছে । এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) আইন, ২০১৩-এর ৫৭ ধারা সংশোধন এবং জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, ২০১৪ তে বেশ কিছু ধারা সংযোজিত করেছে সরকার, যা গণমাধ্যম এবং ব্যক্তির স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।
অথচ আমাদের সেই মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এই সমাজ বিবর্তনের ধারায় রয়েছে এই গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বিরাট অবদান। আমরা কী আজ গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সেসব অবদানের কথা স্বীকার করছি? আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা।স্বাধীনতার পর জাতি পাকিস্তানীদের বঞ্চণা থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণের প্রত্যাশা করেছিলো । কিন্তু আজ স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর জাতির সেই প্রত্যাশা কী পূরণ হয়েছে? না, সেই প্রত্যাশা যেন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
তাই সবশেষে বলবো, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সুসংহত করতে গণমাধ্যম তথা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই। ফলে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে প্রথেমেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত কবরতে হবে। তবেই আশা করা যায়- দেরিতে হলেও একদিন জাতির সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে। যেখানে নাগরিকরা মুক্ত ও স্বাধীনভাবে তার মত ও চিন্তা চেতনা প্রকাশের সুযোগ পাবেন।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক। ই-মেইল:[email protected]