মালালাকে নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নে বিব্রত নোবেল কমিটি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ১৪ বছর বয়সেই প্রাণ যেতে বসেছিল তাঁর। তালেবানের হামলার পর মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছেন। পাচ্ছেন তারকার মর্যাদা, হচ্ছেন সমালোচিতও। তবে প্রশংসাকারী ও সমালোচক সবাই এক বাক্যে মানেন, নারী শিক্ষায় বড় প্রেরণার নাম মালালা ইউসুফজাই।
শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ সভার অন্যরকম আকর্ষণ মালালা ইউসুফজাই। পাকিস্তানের এই কিশোরী তাঁর ১৬তম জন্মদিনে সুযোগ পেয়েছেন জাতিসংঘে ভাষণ দেয়ার। পাকিস্তানে নারী শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রাখতে গিয়ে তালেবানের হামলার শিকার হওয়া মালালা যে নারী শিক্ষা নিয়ে কথা বলবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
তালেবান হামলার পর মুমূর্ষু অবস্থায় ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়ার পরে সুচিকিৎসায় সেরে উঠেছেন মালালা। টাইটেনিয়ামের প্লেট দিয়ে মাথার খুলির ফুটো বন্ধ করে, শ্রবণশক্তি অনেকটাই ফিরে পেয়ে মালালা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন ব্রিটেনেই।
এ বছর টাইম ম্যাগাজিন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের তালিকায় স্থান দিয়েছে তাঁকে। তার আগেই জাতিসংঘের উদ্যোগে পালিত হয়েছে ‘মালালা দিবস’। এক অর্থে, এই শুক্রবারটাও তো জাতিসংঘের মালালা দিবস। কারণ তাঁর বক্তব্যের দিনে আর কারো কথা কি খুব একটা গুরুত্ব পাবে!
মালালা ইউসুফজাইয়ের এমন তারকা মর্যাদাকে অনেকেই অবশ্য ভালো চোখে দেখছেন না। পাকিস্তানেও অনেকেই মনে করেন যে, খুব বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে মালালাকে নিয়ে। এমনিতে পরিসংখ্যান বলছে মালালা তালেবান হামলার শিকার হওয়ার পর পাকিস্তানে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বেড়েছে।
তাঁর জন্মস্থান সোয়াতে এ বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে ১ লক্ষ ২ হাজার ৩৭৪ জন ছাত্রী। গত বছর এই সময়ে ভর্তি হয়েছিল মাত্র ৯৬ হাজার ৫৪০ জন। আফগান সীমান্তবর্তী এ জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা দিলশাদ বিবি জানিয়েছেন এই তথ্য।
তবে পাকিস্তানের অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, এই পরিবর্তনে মালালার ভূমিকা খুবই গৌণ। তাঁদের মতে মালালার মতো অনেক মেয়েই তালেবানের বাধার মুখে লেখাপড়া চালিয়ে আসছিল। আর তার মাধ্যমে আগে থেকেই মেয়েদের মাঝে প্রকাশিত হচ্ছিল আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়নের পথ ধরার ইতিবাচক মানসিকতা।
ব্যাপক সামরিক অভিযানের ফলে সোয়াত এবং আশেপাশের এলাকায় তালেবানের দাপট এখন আগের তুলনায় অনেক কম। সে কারণেই নাকি মেয়েরা আগের তুলনায় আরো বেশি হারে আসছে স্কুলে।
এমন ধারণা একেবারে অমূলক নয়। সোয়াতের মিঙ্গুরা অঞ্চলের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আনোয়ারা সুলতানা মনে করেন, তালেবান আতঙ্ক অনেকটা কেটে গেছে বলেই মেয়েরা আগের চেয়ে বেশি নিরাপদ বোধ করছে এবং সেই নিরাপত্তাবোধ থেকেই তারা আরো বেশি করে আসছে স্কুলে।
সাঈদা রহিম ১৩ বছরের এক কিশোরী। তালেবানের হুমকির মুখে সোয়াত ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল তার পরিবার। তিন মাস এলাকায় ফিরতে পারেনি তারা। সাঈদার তখন মনে হয়েছিল আর বুঝি লেখাপড়া করা হবে না।
তবে সম্প্রতি বাবা-মায়ের সঙ্গে সে-ও ফিরেছে সোয়াতে। শুরু হয়েছে স্কুলে যাওয়া-আসা। মালালা জাতিসংঘে ভাষণ দেবে শুনে সাঈদা খুব খুশি। বললো, ‘‘আমি ওর (মালালা) ভাষণ খুব পছন্দ করি। ও যে কাজটা শুরু করেছে তা আমি চালিয়ে যেতে চাই। আমিও প্রচারে আসতে চাই, চাই সব মা-বাবাকে তাঁদের মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে।”
মালালা ইউসুফজাই সমালোচকদের কথা অনুযায়ী যদি ‘ঘটনাক্রমে তারকা’ হয়েও থাকেন, এ তারার আলো যে অনেক তা অস্বীকার করবেন কী করে!
তবে মালালার নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার ঘোষণার পর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এক ব্যক্তি প্রশ্ন তোলেন শান্তিতে এ বছরের নোবেল বিজয়ী নির্বাচনের মানদণ্ড নিয়ে। সবাইকে চমকে দিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, মালালা নোবেল পাওয়ার যোগ্যই নন। তিনি বলেন, ‘তার (মালালার) আকাঙ্ক্ষা আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি এখন পর্যন্ত কিছুই করে দেখাতে পারেননি।’
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা ও প্রযুক্তি বিষয়ক নিউজপোর্টাল বিজনেস ইনসাইডার এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের আচমকা প্রশ্নে বেশ বিব্রতই হয় নোবেল কমিটি। হতচকিত হয়ে পড়েন জাগল্যান নোবেল কমিটির প্রধান জাগল্যান।