অরক্ষিত হাকালুকি হাওরে অতিথি পাখি নিধনে সংঘবদ্ধ শিকারী চক্র : সাথে সৌখিন শিকারী

Hakaluki Hunting Birdবিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি হাওর গত ৬ মাস থেকে অরক্ষিত। সেই সুযোগে অতিথি পাখি নিধনে সংঘবদ্ধ শিকারী চক্রের সাথে এবার যোগ হয়েছে সৌখিন শিকারী চক্র। চলেছে বিষটোপের পাশাপাশি ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার।
সুদুর সাইবেরিয়া ও হিমালয়ের পাদদেশ লাদাক থেকে শীতকালে দেশের বৃহত্তম এই অতিথি পাখির সমাগমস্থল হাকালুকি হাওরে আসে। চলতি বছর হাওরের জল্লা, হাওরখাল, ফুয়ালা, বাইয়া, মালাম, চেকিয়া, নাগুয়া লরিবাই, কৈয়ারকোনা, মাইছলা, তেকোনি, তুরল, ফুটবিলে বিভিন্ন জাত ও রঙের অতিথি পাখির সমাগম ঘটে। প্রতিবছর ৫০-৬০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে এই হাওরে। এর মধ্যে অনেক বিলুপ্ত প্রজাতির পাখিরাও আসে।
হাওর পাড়ের বাসিন্দারা জানান, হাওর তীরের কুলাউড়া উপজেলার সাদিপুর, জুড়ী উপজেলার বাচিরপুর, নয়াগ্রাম ও বেলাগাঁও, বড়লেখা উপজেলার দশঘরি, ভোলারকান্দি আজিমপুর, কোটাউরা এবং ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার পূর্ব-যুধিষ্টিপুর নিজঘিলাছড়া ও আশিঘর এলাকায় রয়েছেন সংঘবদ্ধ শিকারী চক্র। এরা প্রতি বছর বিষটোপে এবং ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার করে। এবার সেই সংঘবদ্ধ চক্রের সাথে যোগ হয়েছে সৌখিন পাখি শিকারিরা। সরেজমিন হাকালুকি হাওরে গেলে এমন তথ্য জানান হাওরে নিয়মিত যাতায়াতকারীরা।
সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে বড়লেখা উপজেলার বালিজুরি, জল্লা, ফুয়ালা, মালাম, পলোভাঙা, কালাপানি, নাগুয়া লরিবাই, কুকুরডুবি, পিংলা বিলে। গোলাপগঞ্জের লম্বাবিলে পলোভাঙায়, হাওরখাল, সাতঘিলা বিলে। ফেঞ্চুগঞ্জের শিকারিরা হাওরখাল, কালাপানি রঞ্চি, মেদা আরামডিঙা, নাগুয়া লরিবাই, টোলারবিলে। কুলাউড়া উপজেলার ফুটবিল, হাওয়াবন্না, চকিয়া ও গৌড়কুড়ি বিলে।
এক সময় এই হাওর অতিথি পাখিদের নিরাপদ অভয়াশ্রম ছিলো। কিন্তু গত দু’বছর থেকে হাওরটি অতিথি পাখির আর অভয়াশ্রম নেই বললেই চলে। মুলত পরিবেশ অধিদফতরের প্রকল্প চলাকালে হাওরটি অতিথি পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত হয়। এরপর সিবিএ ইসিএ প্রকল্প চালু হলে পাখিদের অভয়াশ্রমগুলোতে মনিটরিং করা হতো। কিন্তু গত বছর জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে অতিথি পাখির জন্য অরক্ষিত হয়ে পড়েছে হাকালুকি হাওর। তবে স্থানীয় প্রশাসন হাওরে আসা অতিথি পাখির নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিতকরণে অনেকটা উদাসীন। হাওর তীরের বাসিন্দারা জানান, অতিথি পাখি শিকার বন্ধে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা না হলে সংঘবদ্ধ শিকারী চক্র তৎপরতা রোধ করা সম্ভব হবে না। হাওরে কর্মরত বেসরকারি সংস্থা সিএনআরএস ক্রেল প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুর রহমান জানান, হাকালুকি হাওরে অতীতের তুলনায় পাখি শিকার অনেকটা কমেছে। আমাদের পক্ষে পাখি শিকার রোধ করা সম্ভব নয়। আমরা শুধু সহযোগিতা করতে পারি। স্থানীয় প্রশাসনকেই এব্যাপারে ভুমিকা নিতে হবে।