অনুগল্প ‘পিঁপড়ারানী’

Ant Queenপ্রবাসী রুবেলের সাথে পরিচয়ের প্রায় বছর দুয়েক হল। লেখালেখির সূত্রে ফেসবুকে পরিচয়। সেই আকস্মিক পরিচয় থেকে ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। আমি তাকে রসিকতা করে উপাধি দেই উলুপাড়ার কবি, তিনিও আমাকে উপাধি দেন পিঁপড়াপাড়ার কবি। শুরু হতে থাকে কবিতা এবং গল্পে দুইজনের কঠোর সমালোচনা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই। সুযোগ পেলে কেউ কাউকে হেনস্থা করতেও কম করি নি! আমি সম্মানার্থে তাকে মামা বলে সম্বোধন করি। ওনিও আমাকে ডাকেন ভাগিনা।

সেদিন ‘পিঁপড়ারানী’ নামে কবিতা আপলোড করতেই ঘণ্টাখানেকের মধ্যে প্রায় শ’দুইয়েক কমেন্ট পড়ল। রুবেল মামা তো আমায় তুলোধুনো করে ছাড়লেন। পিঁপড়ারানী তার ভাগনি, সে তার ভাগনিকে আটক রেখেছে আমি ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত সে আমার কাছে আর দিবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। পক্ষ বিপক্ষের কমেন্টে ফেসবুক মাঠ ক্রমশই উত্তপ্ত হওয়ার পথে। অন্যান্যরাও বেশ মজা পাচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে যেন শক্তিশালী দুই দেশের মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধ চলছে! আমিও নাছোড় বান্দা। কোনভাবেই মামার কাছে ক্ষমা চাওয়ার পাত্র আমি নই। কিন্তু কেন যেন তর্ক যুদ্ধে আমি মামার সাথে পেরে উঠছিলাম না। এমন সময় কাকতালীয় ভাবে আগমন ঘটল পিঁপড়ারানীর। আমি ও মামা দুজনেই তো অবাক। একি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! কল্পনার পিঁপড়ারানী যে সত্যি সত্যিই আমাদের সাথে কথা বলছে! তর্কযুদ্ধে সে আমাকে জোড়ালো সহযোগিতা করেছে। মামা হেরে গেলে তর্কযুদ্ধ থেমে যায়।
আমি তখন ভাল করে খোঁজ নিতে থাকি পিঁপড়ারানীর। আমি ম্যাসেজে অপশনে গিয়ে রানীর নাম জিজ্ঞেস করি। সে হাসি মুখে বলে- আমি তোমার সত্যিকারের পিঁপড়ারানী। অনেক কথোপকথনের পর আমি বললাম ফোনে সরাসরি কথা বলতে চাই। বলা মাত্রই রানী নাম্বার দিল। আমি কথা বলি। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকে। রানী আমাকে তার ছবি এমএমএস করে পাঠায়। আমি দেখে মুগ্ধ হই। তাকে সরাসরি দেখার প্রবল ইচ্ছে আমার মধ্যে কাজ করতে থাকে। আমি তাকে সাহস করে বললাম- আমাদের দেখা হওয়া উচিত।
-হ্যাঁ, কিন্তু কোথায় কীভাবে?
-ঢাকায়, রমনা পার্কে।
-কবে? কখন?
-আগামি মঙ্গলবার, বিকেল ৪টায়।
-ওকে।
সরল মনে ও অপার বিশ্বাস নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে যথাস্থানে আমি উপস্থিত হই। একটু পর এক প্রেমিক জুটি এল। দুজনেই বেশ অন্তরঙ্গ অবস্থায় আসছে। আমি ভাল করে তাকাই, এমএমএসের সাথে মিলাই। এ যে আমার পিপড়ারানী! তার বয়ফ্রন্ডের গলা ধরে কাছাকাছি আসে। লজ্জায় তখন আমার চোখ-মুখ লাল হয়ে ওঠছে। তীব্র শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে রানী আমার দিকে আঙুল তুলে তার বয়ফ্রন্ডকে বলল- এই সেই মদন! এরপর তারা দুজনেই অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে। কপালের ঘাম হাত
দিয়ে মুছতে মুছতে আমি শুধু ক্ষীণস্বরে বললাম- এটা ঠিক না!
…………………………………….
২৯.০৯.২০১৪
মুনশি আলিম
ফেঞ্চুগঞ্জ,সিলেট

মুনশি আলিম
বি এ অনার্স (বাংলা), এম এ (বাংলা) জাবি, এমফিল শাবিপ্রবি
সার্বিক যোগাযোগ: ০১৭৪১৪৩৬৮৫১
Email: [email protected]