সাঈদীর চূড়ান্ত রায় আজ : সিলেটে জিরো টলারেন্সে থাকবে পুলিশ

নীরব জামায়াত : সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কা

Sayedeeসুরমা টাইমস ডেস্কঃ জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল মামলার রায় আজ বুধবার। যুদ্ধাপরাধের দায়ে তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর ঘোষিত রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মামলার রায় দেওয়া হবে। প্রধান বিচারপতি মো. মোজ্জাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের ৫ সদস্যের আপিল বিভাগ এ রায় দেবেন। অন্য ৪ বিচারপতি হচ্ছেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু, চাঞ্চল্যকর এই রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত হলেও এর প্রতিবাদে কোন কর্মসূচি দেয়নি জামায়াত। রায় ঘোষণার জন্য তারিখ নির্ধারিত হলেও সিলেট বা দেশের কোথাও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে কোন কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া যায়নি। আগামীকালও কোন কর্মসূচি ঘোষণার খবর পাওয়া যায়নি জামায়াতের পক্ষ থেকে। সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যদি ওয়ান পার্সেন্টও ন্যায় বিচার হয়, তাহলে বেকসুর খালাস পাবেন মাওলানা সাঈদী। রায় ঘোষণার প্রতিবাদে কোন কর্মসূচি আসছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে কোন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। তবে,রায় দেখে দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা অবনতির আশঙ্কায় সিলেটে জিরো টলারেন্সে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এজন্য নেওয়া হযেছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিভাগজুড়ে নিরাপত্তায় থাকবে সাত সহস্রাধিক পুলিশ। সেসঙ্গে মঙ্গলবার রাত থেকেই সাদা পোশাকে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। সঙ্গে থাকছে এপিবিএন, রিজার্ভ ফোর্স, বিজিবি ও র‌্যাব । নগরী, জেলা ও উপজেলা সদরগুলোতে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ইতোমধ্যে নগরী ও জেলা-উপজেলা সদরগুলোতে চৌকি বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার এই পরিকল্পনা মঙ্গলবার সন্ধ্যা রাত থেকে চলছে। সিলেট জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বলেন, জেলা পর্যায়ে সহস্রাধিক পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা, আরো প্রায় ৫শ‘ এপিবিএন ও রিজার্ভ ফোর্স মাঠে নামানো হয়েছে। একই সঙ্গে র‌্যাব সদস্যরাও নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে বলে জানান তিনি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বিভাগীয় শহর ছাড়াও প্রতি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। এছাড়া সিলেট নগরীতে ২ জন ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থাকবে।
তিনি বলেন, মেট্টোপলিটন ও জেলা পুলিশ থেকে ৩ প্লাটুন করে বিজিবি চাওয়া হয়েছে। সে সুবাদে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবিকে প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে।
সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, জামায়াতের আমির সাঈদীর রায় উপলক্ষে রেঞ্জের আওতাধীন সব জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা, এপিবিএন ও রিজার্ভ ফোর্স ও বিজিবি ছাড়া প্রায় ৩ সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।
এদিকে আপিল মামলাটির রায় ঘোষণা বুধবারের কার্যতালিকার এক নম্বরে রেখেছেন আপিল বিভাগ। গত ১৬ এপ্রিল আপিল মামলাটির শুনানি শেষ হওয়ায় রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন আপিল বিভাগ। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর, রায় হয় ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি।
রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী আপিল করলে শুনানি শেষে গত ১৬ এপ্রিল তা রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে আপিল বিভাগ। তার পাঁচ মাস পর রায়ের দিন জানানো হল। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দি তদের মধ্যে সাঈদী দ্বিতীয় ব্যক্তি যার মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। এর আগে তার দলেরই নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তির পর গত বছরের ডিসেম্বর তার মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর হয়।
গত এপ্রিলে আপিল শুনানির পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আশা প্রকাশ করেছিলেন, আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়েও ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি বজায় থাকবে।
অন্যদিকে সাঈদীকে আইনগতভাব শাস্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেন তার আইনজীবী এসএম শাহজাহান।৭৪ বছর বয়সী সাঈদী বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। ২০১০ সালের ২৯ জুন থেকে কারাবন্দি সাঈদী। তবে এর মধ্যে মা ও ছেলের মৃত্যুর পর দুই দফায় কয়েক ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন পিরোজপুর থেকে দুই বার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য।
হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্র“য়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদ দিলে সহিংস বিক্ষোভে নামে জামায়াতকর্মীরা।রায়ের পর দেশজুড়ে জামায়াতের তা বে নিহত হন পুলিশসহ অর্ধশতাধিক। পুড়িয়ে দেওয়া গাড়ি, বাড়ি এমনকি বিদ্যুৎ কেন্দ্রও।২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর একে একে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় তাদের, চলতে থাকে বিচার।
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম রায়ে ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে। পলাতক থাকায় তিনি এর বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেননি।
এর পরের মাসের ৫ তারিখে দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ হয়। আপিল শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রায়ে তাকে মৃত্যুদ দেয়। ১২ ডিসেম্বর ওই দ কার্যকর হয়।তৃতীয় রায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদ দেওয়া হয়। এরপর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের আজীবন কারাদ হয়। মৃত্যুদ হয় দলটির নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদ, মো. কামারুজ্জামানের।সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ২০টি অভিযোগের মধ্যে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়ার দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
আরো ছয়টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে আদালতে প্রমাণিত হলেও আগের দুটিতে ফাঁসির আদেশ হওয়ায় সেগুলোতে কোনো দ দেয়নি আদালত।এই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ মার্চ আপিল করেন সাঈদী। অন্যদিকে প্রমাণিত হলেও সাজা না হওয়া ছয় অভিযোগে এই জামায়াত নেতার শাস্তি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।দুই পক্ষের আপিল আবেদনের শুনানি শেষে এখন চূড়ান্ত রায় দেবে আপিল বিভাগ।