পুলিশের টিয়ারসেলে প্রাণ গেল ওসি মোস্তাফিজের

FB_IMG_1418823133922 (1)সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে এমন খবরে ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্য নিয়ে ছুটে যাওয়া ওসি মোস্তাফিজের। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আর নিজের দায়িত্ব পালন যে তাঁকে জীবনের শেষ প্রান্তে নিয়ে আসবে এমন ভাবনাও ছিলনা। কিন্তু দায়িত্ব পালনে অসুস্থ হয়ে পড়ায় শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান।
ঘড়িতে যখন সাড়ে ৩টা। তখন দ্রুত গতিতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ঢুকলো ওসমানীনগর থানার একটি গাড়ি। গাড়িটি থেকে নামানো হলো ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানকে। দ্রুত গতিতে তাঁকে নেয়া হলো হাসপাতালের ২য় তলার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের হৃদরোগ শাখায়। পৌনে ৪টায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানালেন, ‘হি ইজ ডেড’। তিনি আর বেঁচে নেই।
গতকাল বুধবার ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার বাজারে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদের রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ চলাকালে সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোস্তাফিজুর রহমান। তাৎক্ষনিক তিনি পার্শ্ববর্তী একটি ফার্মেসীতে গিয়ে তার ব্যবহৃত ০১৭১৬১৪৫১২০ নাম্বার থেকে সিলেট নগরীতে তার পরিটিত এক ডাক্তারকে ফোন করে বলেন, সংঘর্ষ থামাতে পুলিশের ছোড়া টিয়ারসেল তার উপর লেগেছে বলেই তিনি ফার্মসিস্টের সাথে কথা বলতে দেন। ডাক্তার ফার্মসিস্টকে বিপি পরীক্ষা করে ইনহেইলার দিয়ে তাঁকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। দ্রুত গতিতে তাকে ওসমানী হাসপাতালের ২য় তলার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের হৃদরোগ শাখায় নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে গোয়ালাবাজারে শ্রমিকদের সংঘর্ষ চলাকালে টিয়ারস্যালের মধ্যস্থানে পরে যাওয়ায় গ্যাসের কারণে তাঁর হার্টএটাক হয়েছে।
নিহত ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের মরদেহ বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে ঢুকানো হয় হাসপাতাল মর্গে। লাশের ময়না তদন্ত শেষে বিকেল সাড়ে ৫টায় মরদেহ হস্তান্তর করা হয় তাঁর ব্যাচমেট সিলেট কোতোয়ালী থানার ওসি আসাদুজ্জামানের কাছে।
ময়না তদন্ত শেষে ওসমানী হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান ডাক্তার আবু আহমেদ আদিলুজ্জামান জানান, এই মুহুর্তে মৃত্যুর মূল কারণ কি বলা যাচ্ছেনা। তবে ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুর প্রাথমিক তথ্য আগামী শনিবারে জানা যাবে।
হৃদরোগ বিভাগ থেকে ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের মরদেহ বের করার পর সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাইমুল হাসান জানান, নতুন ষ্টেন্ড বসানো নিয়ে সিএনজি শ্রমিকরা সড়ক অবরুধ করে। এক পর্যায়ে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদের দু’পক্ষের মাঝে নতুন গোয়ালাবাজারে সংঘর্ষ বাদে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ওসি মোস্তাফিজুর রহমান অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। সিলেট ওসমানী হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
ওসমানীনগর থানার ওসি (তদন্ত) অকিল উদ্দিন জানান, সংঘর্ষে ১’শ ৮০ রাউন্ড টিয়ারগ্যাস, রাবার বোলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়। টিয়ার গ্যাসের কারণে ওমি মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
জানা যায়, ওসি মোস্তাফিজুর রহমান কুমিল্লা জেলার সদর থানার মোগলটুলি গ্রামের পাথারিয়া পড়ার নয়াব আলীর ছেলে। বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর। ওসি মোস্তাফিজ ২ কন্যা সন্তানের জনক। তাদের নাম রাইছা ও মাইশা। রাইছা ভিকারুননেছানূন স্কুলের অষ্টম শ্রেনীতে ও মাইশা একই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ছে। তাঁর স্ত্রী মাসুমা খাতুন তাদেরকে নিয়ে রাজধানীর বনশ্রী সি-ব্লকের ৪ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকেন। ওসি মোস্তাফিজের সহকর্মীরা জানান, ওসি মোস্তাফিজুর রহমান কুষ্টিয়া জেলায় ইসলামীয়া বিশ্ববিদ্যালয় থানা, খাগড়াছড়ি সদর থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সর্বশেষ বিয়ানীবাজার থানায় ওসি তদন্ত হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কারণে তাঁকে গত ১৫ অক্টোবর ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব দেয়া হয়।
এদিকে, বেলা পৌনে ৪টায় যখন ওসি মোন্তাফিজের লাশ হৃদরোগ বিভাগ থেকে বের করা হয় তখন হাসপাতালে শোকের ছায়া নেমে আসে। সিলেট জেলা পুলিশ ও মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্যরা তখন ছিলেন বাকরুদ্ধ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি মিজানুর রহমান পিপিএম, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ছবুর মিয়া, সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে ডিসি (উত্তর) ফয়সল মাহমুদ, সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাইমুল হাসান, সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. রহমতুল্লাহ, কোতোয়ালি থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুল হাসান, থানার ওসি আসাদুজ্জামান, বিয়ানীবাজার থানার ওসি জুবের আহমদ, গোলাপগঞ্জ থানার ওসি একেএম ফজলুল হক শিবলী, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি দিলওয়ার হোসেন, সিলেট জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ইউনুস মিয়াসহ পুলিশের বিপুল পরিমান সদস্য। কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা খুব মর্মাহত। এমন মৃত্যু মেনে নেয়ার নয়। তিনি বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বন্ধু ছিলেন। তারা দুজন ব্যাচমেট।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গতকাল রাত ৮টায় ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম জানাযার নামাজ সিলেট পুলিশ লাইনে ও রাত সাড়ে ৯টায় ওসমানীনগর থানায় দ্বিতীয় জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।