এক আতংকিত জনপদ নবীগঞ্জের সাকুয়া

সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মঈন উদ্দিনের মৃত্যু : এ পর্যন্ত ১২ টি হত্যাকান্ড ॥ দু’নেতা আত্মগোপনে

Dangerউত্তম কুমার পাল হিমেল: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বহুল আলোচিত গ্রাম সাকোয়া পুরুষোত্তমপুর এলাকায় সংঘটিত সংঘর্ষে গুরুতর আহত মঈন উদ্দিন (৪২) গতকাল শুক্রবার সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। এ খবর এলাকায় পৌছলে নিহতের স্বজনদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে বলে এলাকা সুত্রে জানাগেছে। তবে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এদিকে সিলেট থেকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে নিহতের মৃত দেহটি বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এলাকায় পৌছলে শত শত নারী পুরুষ এক নজর দেখার জন্য ভীড় জমায়। এ সময় ওই এলাকায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনার হয়।

স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকালে জমি জমা ও পুর্ব বিরোধের জের ধরে উপজেলার করগাওঁ ইউনিয়নের সাকোয়া পুরুস্তুমপুর এলাকার আকিকুর রহমানের সাথে ফিরোজ উদ্দিনের সংর্ঘষ হয়। এ সময় আকিকুর রহমানের বোন জামাতা মঈন উদ্দিনসহ উভয় পক্ষে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়। স্থানীয় লোকজন আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশংখ্যাজনক অবস্থায় মঈন উদ্দিন(৪২) ও ফিরোজ উদ্দিনের ছেলে সুলতান আহমদ(৩৮)কে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে ৯ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শুক্রবার সকালে মৃত্যুর খোলে ঢলে পড়ে মঈন উদ্দিন। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার পর পর ফিরোজ উদ্দিন নবীগঞ্জ থানায় এবং মঈন উদ্দিনের পক্ষে আকিকুর রহমান হবিগঞ্জ আদালতে পৃথক মামলা করেন। মামলা দু’টি থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করা হয়। মামলা রুজুর দু’দিন পর আহত মঈন উদ্দিনের মৃত্যু ঘটলো। রাতে স্থানীয় টুকের বাজারে জানাযার নামাজ শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ঘটনাস্থল গেলে এলাকাবাসী জানান, আকিকুর ও ফিরোজ উদ্দিন একে অপরের আত্মীয় এবং পাশাপাশি বাড়ির বাসিন্দা। নিহত মঈন উদ্দিন আকিকুরের বোন জামাতা এবং শশুড় বাড়িতেই তিনি স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন। দীর্ঘদিন ধরে ফিরোজ উদ্দিনের সাথে জমিজমা,বাড়ির চলাচলের রাস্তা ও পুকুর নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। ফিরোজ উদ্দিন ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী। তিনি আকিকুরের পুকুরের অংশ খরিদ করার জন্য নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে আকিকুরের চলাচলের রাস্তায় বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তৎকালীন সময়ে ব্যাপক সংর্ঘষ হয়। ওই সংর্ঘষে আকিকুর রহমানসহ ৫ জন আহত হয়। দীর্ঘদিন সিলেট মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে আকিকুর বাড়িতে ফিরলে বিষয়টি শালিসে শেষ হয়। একপর্যায়ে মুরুব্বীয়ানদের কথায় পুকুরের অংশ বিক্রি করতে সম্মত হন আকিকুর। ঊভয়ের মধ্যে একটি বায়না পত্র সম্পাদন হয়। বায়না পত্রের নির্ধারিত সময়ে আকিকুর দাবী করেন ফিরোজ উদ্দিনের দখলে ধানি জমি না ছাড়লে কোনভাবেই পুকুরের অংশটি রেজিষ্ট্রি করে দিবেন না। এনিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মারমুখী অবস্থানের সৃষ্টি হলে পূণরায় শালিস বসেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে উক্ত শালিসে আকিকুর রহমানকে বায়না অনুযায়ী পুকুরের অংশটি রেজিষ্ট্রারী করে দিতে অনুরুধ করা হয়। এবং কাগজ পত্র যথাযথ ভাবে সংগ্রহ করার পর আকিকুরের ধানি জমির বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। শালিসের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ৩রা সেপ্টেম্বর আকিকুর রহমান বায়না মোতাবেক পুকুরের অংশ রেজিষ্ট্রারী করে দেন। ওই দিনই বিকালে বাড়ি ফিরে প্রভাবশালী ফিরোজ উদ্দিন তার দলবল নিয়ে আকিকুরের চলাচলের রাস্তা কেটে খালের সাথে মিশিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে বাধা দিলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের উপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মাঝে সংর্ঘষ শুরু হয়। সংর্ঘষে ইট,পিকলসহ দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ ঘটনায় আকিকুর,তার বোন জামাতা মঈন উদ্দিনসহ ১৩ জন আহত হয়। উলে¬খ,নবীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে সাকুয়া পুরুস্তুমপুর এলাকা একটি আতংকিত জনপদের নাম। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’ভাগে বিভক্ত। একভাগে বিএনপি নেতা শাহাব উদ্দিন শান্তি অপরভাগে যুবলীগ নেতা আব্দুল কদ্দুছ সাগর। হামলা,সংর্ঘষ,লুটপাট,খুন,চুরি ডাকাতি ঘটছে অহরহ। এ পর্যন্ত দু’পক্ষের দ্বন্ধের বলির শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১২ জন। উভয় পক্ষের এই ১২ জনকে বিভিন্ন ভাবে ও সংর্ঘষে খুন করা হয়েছে। হত্যা মামলাসহ রয়েছে ডজন খানেক মামলা। এ সব মামলা পাল্টা মামলায় দু’নেতা সহ অনেক মানুষ রয়েছে গ্রাম ছাড়া। এছাড়া প্রতিদিন ঘটছে চাদাবাজী,চুরি ও ডাকাতির ঘটনা। প্রতিবাদ করার সাহস কারো নেই। সাধারণ মানুষ আতংকের মাঝে দিনপাত কাটাচ্ছেন। ফলে ওই এলাকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এ ব্যাপারে আইনশৃংখলা বাহিনীর জরুরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে গ্রামবাসী দাবী করেছেন।