জকিগঞ্জে শিক্ষক করিম হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্ঠা!

Karim Teacherজকিগঞ্জ সংবাদদাতাঃ জকিগঞ্জের তিরাশীর চাঞ্চল্যকর শিক্ষক করিম হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ষড়যন্ত্রে নেমেছে একটি চক্র। এতে মামলা তদন্তে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বাদীপক্ষ ও সচেতন মহল। জানা যায়, গত ৮ জুলাই মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নিজ গৃহে ঘুমন্ত অবস্থায় জকিগঞ্জের জনপ্রিয় শিক্ষক আব্দুল করিমকে নির্মমভাবে খুন করে আপন ভাইয়েরা। পরে বিষয়টি ধামাচাঁপা দিয়ে হার্টএ্যাটাকে মারা গেছেন বলে প্রচার করে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে হত্যাকান্ডের বিষয়টি প্রচার হলে নিহতের ছোট ভাই ফাহিমের স্ত্রী রোজিনা বেগম গত ১১ জুলাই জকিগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৪। এ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী করা হয় ৫ জনকে। অভিযোগ উঠেছে এজাহারভূক্ত ২নং আসামী নিহতের ছোট ভাই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এসআই আব্দুস শাকুরকে বাঁচাতে একটি চক্র মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্ঠা চালাচ্ছে। এতে করে ঘটনার মূল হুতা পার পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাদীপক্ষের। স্থানীয়দের বক্তব্য থেকে জানা গেছে, ওই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ২ নং আসামী এসআই শাকুর ঘটনার রাতে সে বাড়িতে উপস্থিত থেকে অপর ভাই রহিমকে সাথে নিয়ে শিক্ষক আব্দুল করিমকে হত্যা করে। ঘটনার রাত ৩টা ৩৫ মিনিটের সময় শাকুর নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে তার এক মামা ঘেছুয়া গ্রামের নোমানুর রশীদের মোবাইলে “কধৎরস ফরবফ” লিখে একটি এসএমএস দেয়। এছাড়া ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সকলেই ঘটনার রাতে শাকুর উপস্থিত ছিল বলে জানান। প্রত্যক্ষদর্শী মামলার বাদিনী রোজিনা বেগম তার লিখিত বক্তব্যে রহিম ও শাকুর পিঠিযে হত্যা করেছে বলে দীর্ঘ বর্ণনা দেন। নিহতের ভাই ফাহিমও রহিম ও শাকুরের উপস্থিতি ও মারপিঠের কথা জানায়। ঘটনার রাতে ঐ বাড়িতে থাকা নিহতের ভাগনা আলী তার লিখিত বক্তব্যে রহিম, ফাহিম ও শাকুরের উপস্থিতির কথা জানিয়ে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। নিহতের ভাগনী কলিও একই কথা জানায়। পরদিন ভোরে শিক্ষক করিমের মৃতদেহ দেখতে আসা প্রায় অর্ধশত লোক এসআই শাকুরসহ রহিমকে বাড়িতে দেখতে পান। নিহতের বোনের জামাই শিক্ষক শাহ আলম শাহীন তার এক লেখায় উল্লেখ করেন, হত্যাকান্ডের বিষয়টি জানার পর তিনি অনুসন্ধান করতে শুরু করলে শাকুর এসে তাকে বলেন, শাহীন ভাই আমি এটাকে যেনার শাস্তি হিসেবে মনে করি। এত লোকজন শাকুরের উপস্থিতি নিশ্চিত করলেও সে ঘটনার রাতে উপস্থিত ছিলনা মর্মে তার কর্মস্থল বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন থেকে সিসি (কমন সার্টিফিকের্ট) নিয়ে আসে। যা শুনে এলাকার লোকজন হতবাক হয়েছেন। তবে জকিগঞ্জ থানার ওসি জামশেদ আলম তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরিত এক তদন্ত রিপোর্টে প্রাথমিকভাবে এসআই শাকুরের উপস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরছেন। শিক্ষক করিম হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে আন্দোলনরত প্রতিবাদী মঞ্চের নেতারা বলেন, সম্প্রতি সময়ে মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষে একটি চক্র এসআই শাকুরের চাকুরী রক্ষার দোহাই দিয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের ম্যানেজ করার চেষ্ঠা করছে। ইতিমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবনবন্দি প্রদানকারী নিহতের ভাগনা আলী, কলি ও আসামী শেফা নিজেদের বক্তব্যে শাকুরের বিষয়টি এড়িয়ে যান। বরং মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আসামী শেফা তার জবানবন্দিতে নিহত শিক্ষক আব্দুল করিমের উপর নানা অপবাদ দেয়। প্রকৃতপক্ষে এসআই শাকুরের সাথে শেফার অনৈতিক সর্ম্পক ছিল বলে অনেকে জানান। প্রতিবাদী মঞ্চের নেতৃবৃন্দ বলেন, এজাহারভূক্ত আসামী ১৫ জুলাই বিদেশের চলে গেলেও ২৩ জুলাই কিভাবে সে হাইকোর্টে উপস্থিত হয়ে জামিন নিয়ে আসলো। এ থেকে পরিস্কার প্রতিয়মান হয় আসামীরা যে, কত মিথ্যুক, প্রতারক ও ধুর্ত। এ ব্যাপারে শিক্ষক করিম হত্যার প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি প্রধান শিক্ষক কুতুব উদ্দিন বলেন, পেছনে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে, আগামীদিনে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য এসআই শাকুরের সেলফোনের কললিস্ট ও ভয়েস রেকর্ড (টাওয়ারসহ) জরুরী ভিত্তিতে সংগ্রহের জন্য পুলিশের প্রতি তিনি অনুরোধ করেন।