বিএনপি নেতা মুজিব অপহরণ মামলা সিআইডিতে
‘মন খুলে’ কথা বলতে পারছেননা বিএনপি নেতারা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ যুদীর্ঘ সাড়ে ৩মাস নিখোঁজের পর ফিরে আসা সুনামগঞ্জ জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসভাপতি মুজিবুর রহমান মুজিব অপহরণ মামলা সোমবার রাতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) তদন্ত আব্দুল হাই চৌধুরী রাত পৌনে ১১টার দিকে সিআইডির সুনামগঞ্জ ক্যাম্পের ইন্সপেক্টর সুরঞ্জিত তালুকদারের কাছে মামলাটি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. হারুণ অর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত ১৩ আগস্ট পুলিশ সদরদপ্তর মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তরের নিদের্শ দেয়। প্রক্রিয়া শেষে রাত পৌনে ১১টায় মামলাটি হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে, ১৮ আগস্ট সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শ্যালক ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেনের গুলশানের বাসায় নিখোঁজ থাকার সাড়ে ৩ মাসপর গিয়ে ওঠেন মুজিব নিজেই। শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে ওইদিন রাতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেদিন মুজিব উদ্ধারের খবর পেয়ে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেমায়েতুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল রাতেই ঢাকায় রওয়ানা হয়। পরে বুধবার রাতে মুজিব ও তার গাড়ি চালক রেজাউল হক সোহেলকে নিয়ে সুনামগঞ্জ এসে পৌঁছেন। পরদিন বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপার মো. হারুণ অর রশীদ মুজিব ও তার গাড়ি চালক সোহেলকে নিয়ে অপহরণস্থল সিলেটের টুকের বাজার পরিদর্শন করেন। এরপর ঢাকা-সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় পুলিশ।
গত ৪ মে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট ফেরার পথে নিখোঁজ হন মুজিব। এ ঘটনার দু’দিনের মাথায় ৬ মে মুজিবের ভাগনি জামাতা অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওই দিন দুপুরে জেলা বিএনপি মুজিবের সন্ধান চেয়ে শহরের লন্ডন প্লাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। ৭ মে মুজিব ও তার গাড়ি চালক সোহেলের সন্ধান দাবিতে সুনামগঞ্জ শহরে মানববন্ধন এবং ৮ মে সুনামগঞ্জ জেলায় আধাবেলা হরতাল পালন করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন।
১০ মে রবিউল ইসলামের সাধারণ ডায়েরিকে অভিযোগ হিসেবে নিয়ে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে আকবর চৌধুরী (৩০), জিহাদ (২৭) ও তারেক (২৭) নামে ৩ যুবককে আটক করে পুলিশ। ২০ মে দিনগত রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কসবা গ্রাম থেকে মাহমুদ নামে অপর এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম খান জানান, মুজিব নিখেঁজের ঘটনায় আটককৃতরা বর্তমানে জামিনে আছেন। ১৩ মে মুজিবের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাকে উদ্ধারের জন্য ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী।
এদিকে মুজিবুর রহমান মুজিবের সঙ্গে ‘মন খুলে’ কথা বলতে পারছেন না দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা। ফলে মুজিব কীভাবে ‘নিখোঁজ’ হয়েছেন এবং সাড়ে তিন মাস ‘নিখোঁজ’ থাকার সময় তিনি কীভাবে ছিলেন, তার ওপর নির্যাতন হয়েছে কি-না, কিছুই জানতে পারছেন না তারা।
মুজিবকে সুনামগঞ্জে নিয়ে আসার পর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী ও প্রথম সদস্য সাবেক সাংসদ কলিম উদ্দিন মিলনসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ তার সঙ্গে দেখা করতে গেলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই তাদের কথা বলতে হয়েছে, এ সময় মুজিবও ‘মন খুলে’ কথা বলতে পারেননি। তারাও কোনো প্রশ্ন করতে পারেননি।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা বিএনপির ষোলঘর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এমন অভিযোগ করেন নাসির উদ্দিন চৌধুরী।
নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমে জেনেছি, মুজিব নিখোঁজ মামলা সিআইডিতে স্থানান্তর হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হলে তার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।’