৭০০ বছরের জালালী ঐতিহ্য ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব সম্পন্ন
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ লালে লাল- শাহজালাল, শাহজালাল বাবা কি- জয়, ৩৬০ আউলিয়া কি- জয়, ওলি আউলিয়া কি- জয়, হাজার হাজার ভক্তের এ রকম নানা শ্লোগানে শ্লোগানে মূখরিত ছিল হযরত শাহজালাল (রহঃ)র মাজার এলাকা। তবে এ শ্লোগান শুধু মাজার এলাকায় বিদ্ধমান ছিলনা, দরগাহ থেকে শুরু করে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট, চৌকিদেখি হয়ে সোজা লাক্কাতোড়া চা বাগান পর্যন্ত। রাস্থা জোড়ে প্রথমে ভক্তদের লাল রংঙ্গে মেলা দেখা গেলেও পরে পাল্টে যায় এ দৃশ্য। হয়ে যায় লাল আর সবুজের মেলা।
এ অবস্থার কারণ হলো শনিবার ছিলো হযরত শাহজালাল ইয়ামনী (রহঃ)’র “লাকড়ি তোড়া” (ভাঙ্গা) উরুস শরীফ। আবার অনেকের কাছে এই দিনটি লাকড়ি তোড়া উৎসব হিসেবে পরিচিত। দেশের প্রত্যেন্ত জেলা-উপজেলা থেকে হাজার হাজার ভক্ত আশেকানরা আসেন লাকড়ি তোড়া এ উরুস শরীফে। সবচেয়ে বড় কথা হলো হযরত শাহজালাল (রহঃ) নিজেই এই দিনে দরগাহ থেকে পায়ে হেটে লাক্কাতোড়ায় গিয়ে লাকড়ি কেটে ছিলেন। এই জন্য লাকড়ি তোড়ার ফয়েজ ও আকর্ষণ ভক্ত অনুসারীদের কাছে অনেক বেশি।
হযরত শাহজালাল (রহঃ)’র জীবদ্দশায় তাঁর মুর্শিদ হযরত সৈয়দ আহমদ কবীর সোহরাওয়ার্দ্দী (র.) ৭২৫ হিজরীর ২৬শে শাওয়াল ইন্তেকাল করেন। পরবর্তীতে বছর থেকে এই দিন থেকে সিলেট বিজয় উৎসব ও লাকড়ি তোড়া উরুস শরীফ প্রতিপালিত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। ৭০৩ হিজরীর এই দিনে হযরত শাহজালালের (রঃহঃ) তার সঙ্গীগণসহ জোহরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে তিনি কুড়াল হাতে করে পাহার-টিলা ব্যষ্টিতো (বর্তমান লাক্কাতোড়া চা বাগানের নির্ধারিত টিলা) উত্তর প্রান্তের গভীর জঙ্গলের দিকে যেতে থাকেন। সঙ্গিরা তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। এক জায়গায় এসে তিনি নিজ হাতে লাকড়ি সংগ্রহ করতে লাগলেন। সেই জায়গার পরবর্তীতে নাম হয় লাকড়ি তোড়া (ভাঙ্গা)। যা বর্তমানে লাক্কাতোড়া চা বাগান নামেই প্রসিদ্ধ। তখন ঢোল-ডঙ্কা নাচগাণ কিছুই ছিলোনা।
শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে হযরত শাহজালাল বাবার ভক্তবৃন্দ ও আশেকানরা মিছিল সহকারে দরগাহ শরীফে সমবেত হন। যোহরের নামাজ আদায় করে লাকড়ি তোড়া উরুসের স্থানের উদ্দেশ্যে মিছিল সহকারে যাত্রা করেন। সেখানে মিলাদ শরীফ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। লাকড়ি তোড়া শেষে সবাই পায়ে হেটে আবারো দরগাহ শরীফে আসেন লাকড়ি নিয়ে। তবে লকড়ি নিয়ে আসার সময় শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজে প্রথমে লাকড়ি দরগাহের পুকুরে ধুয়ে নির্ধারিত স্থানে রাখেন আশেকরা।
বাক্ষমবাড়িয়া কেল্লাশাহ’র মাজার থেকে আসা বৃদ্ধ মোঃ বাহার বলেন আমি প্রতি বছর আসি দরগাহে লাকড়ি ভাঙ্গার জন্য। লক্ষ শুধু বাবা শাহজালালের ফয়েজ পেতে। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আমি ধন্য হয়ে যাবো। মযমনসিংহ থেকে আসা হাওয়ারুন্নেছা জানান, এবার আমি সফল হয়েছি। কারণ লাকড়ি ভেঙ্গে আসার সময় বৃষ্টি এসেছিলো। তাই বৃষ্টিতে ভিজে লাকড়ি নিয়ে বাবার দরবারে এসে জমা দিয়েছি। প্রার্থনা করেছি মহান আল্লাহর কাছে, সবার মঙ্গলের জন্য। হযরত শাহজালাল (রহঃ)’র মাজারের অন্যতম খাদেম চেয়ারম্যান শেখ মকন মিয়া জানান ঐতিহ্যবাহী লাকড়ি তোড়া উরুস শরীফ সুষ্ট ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ভক্তরা এসেছিলেন। আমরা তাদের মাঝে সাধ্যমত তাবারোক বিতরণ করেছি।