খালেদ হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিল ঘাতক কবির

Khaled and Kabirসুরমা টাইমস ডেস্কঃ অবশেষে উদঘাটিত হল চাঞ্চল্যকর সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খালেদুজ্জামান হত্যা মামলার রহস্য। পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২০ আগস্ট কবিরকে পুলিশ একদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেটের সিনিয়র বিচারিক আদালতে হাজির করা হয়। সে আদালতে হত্যা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তার আরো দুই সহযোগীর নাম প্রকাশ করেছে। কবিরকে জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের মাধ্যমে পুলিশ চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে।আদালতে আত্মসমর্পণের পর মামলায় অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে লোমহর্ষক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় ছ্ত্রা খালেদুজ্জামান ওরফে খালেদের সাথে ২০১০ সালে গোলাপগঞ্জের একটি ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানে পরিচয় হয় কবিরের। সেই সুবাদে মাঝে মধ্যে কম্পিউটার ও লেপটপের কাজ করাতে কবিরের দোকানে প্রায়ই আসত খালেদ।
চলতি বছরের ১৭ জুলাই খালেদের বন্ধু জহিরুল মোবাইল ফোনে কবিরকে জানায়, সে একটি ট্যাব বিক্রি করবে। ঠিক ওই মূহুর্তে কবির তার সহযোগীদের নিয়ে পরিকল্পনা করে যে, জহিরুলকে আটকিয়ে মুক্তিপণের জন্য কিছু টাকা আদায় করবে।
পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২০ জুলাই কবিরের সাথে জহিরুলের কথা হয়। পরদিন সকালে কবির সিলেট করিমউল্লাহ মার্কেটের নিচতলায় দাড়িয়ে জহিরুল ইসলামকে ফোন করে তার ট্যাব সঙ্গে করে নিয়ে আসতে বলে। তখন মার্কেটের পঞ্চম তলায় কাজে আসা জহিরুল ও খালেদ মার্কেটের নিচ তলায় এসে কবিরের সাথে দেখা করে ট্যাব দেখায়।
এ সময় কবির জানায়, ট্যাব কেনার কাষ্টমার তার এলাকায় আছে। তার সাথে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে খালেদ ও জহিরুল বিয়ানীবাজার থানাধীন রামধাস্থ উত্তর চন্দগ্রাম কবিরের বাড়িতে যায়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকেই বাড়িতে কবিরের সহযোগী মুকিত ও ফাহিম তার ঘরে ছিল। জহিরুল ও খালেদ কবিরের ঘরে প্রবেশ করা মাত্রই ফাহিমের হাতে থাকা ডেকার দিয়ে জহিরুল ও খালেদকে শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে। অতপর তাদের দু’জনকে দুটি চেয়ারে বসিয়ে রামদা ও খেলনা পিস্তল দিয়ে জীবননাশের ভয়ভীতি দেখায় মুকিত ও ফাইম।
এ সময় তারা কস্টেপ দিয়ে দু’জনের সারা শরীর পেচিয়ে বাঁধে। এক পর্যায়ে কবির মুক্তিপণের জন্য তাদের কাছে ১২ লাখ টাকা দাবি করে। জহিরুল তিন লাখ টাকা দিতে রাজী হয়।
তিন লাখ টাকা দিলে খালেদকে ছেড়ে দেবে বলে খালেদকে আটক রেখে জহিরুল ইসলামকে ছেড়ে দেয়। জহিরুল ইসলাম গোলাপগঞ্জ থানাধীন হেতিমগঞ্জ তার মামা সবুজের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানায়।
জহিরুল কবিরের বাড়ী থেকে যাওয়ার পর মুকিত ও ফাইম খালেদের নাক মুখ কস্টেপ দিয়ে শক্তভাবে পেচিয়ে বেঁধে ফেলায় শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান। তখন খালেদের লাশ কবিরের খাটের পাশে রেখে দেয়।
পরে কবির জহিরুলকে মুক্তিপণের টাকা নিয়া আসার বিষয়ে ফোন করলে জহিরের মামা সবুজ ফোন বলে, তারা টাকা নিয়া আসছে। এরপর ২১ জুলাই কবির, মুকিত ও ফাইম ইফতারের পর পর সড়ক ফাঁকা থাকায় লাশ প্রাইভেটকারে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়।
বিয়ানীবাজার থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, কবির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করায় চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন হলো। বাকী আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।