আমি ষড়যন্ত্রের শিকার : ন্যান্সি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি বলছেন আত্মহত্যার ভুয়া খবর ছড়িয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকার ল্যাবএইড বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন তিনি। তিনি বলেন, “একটা মহল আমার শিল্পী জীবন ধ্বংস করতে চাইছে। তারা নানা ষড়যন্ত্র করছে আমাকে নিয়ে। যার উদাহারণ আজ সবাই দেখতে পাচ্ছে।”
“আমাকে কোনও একজন শ্রোতা বলুক, আপনার গান আর শুনতে চাই না। আমি গান গাওয়া ছেড়ে দেবো। তবু আমাকে মানসিকভাবে যন্ত্রণা দেবেন না।”
ঘুমের বড়ি খাওয়ার ব্যাখ্যা দেন ন্যান্সি, “কিছুদিন ধরেই আমার র্নিধারিত শো একের পর এক বাতিল হয়ে যাচ্ছিল। আমাকে ডাকা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু শো বাতিলের কারণ হিসেবে আয়োজকদের বক্তব্য, শোয়ের টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। ঈদের সময়ও একই ঘটনার পুরনাবৃত্তি হওয়ায় আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। এ অবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে আমি ঠিক করি বাচ্চাদের নিয়ে কিছুদিন নিজের মতো করে সময় কাটাবো। তাই বড় মেয়েটার স্কুল থেকে ছুটিও নিয়েছি।”
ন্যান্সি আরও বলেন, “ঘটনার দিন আমি ঢাকা থেকে দুই বাচ্চাকে নিয়ে ময়মনসিংহ যাই। সেখান থেকে আমি নেত্রকোণায় যাই। পরে জায়েদ ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোণায় গিয়ে আমাকে বলে নায়লাকে (আট মাস বয়সী ছোট মেয়ে) তার দাদি দেখতে চায়। তাই নায়লাকে নিয়ে জায়েদ ময়মনসিংহ রওনা হয়। তারা বের হলে আমি ৭ থেকে ৮টি জিওনিল খাই। এরপর ঠিক কী কী ঘটেছে আমি তার কিছুই বলতে পারি না।”
ন্যান্সি জানালেন, মায়ের চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি অনিদ্রার কারণে ঘুমের ওষুধ খেতেন।
“একটা পরিপূর্ণ ঘুম দিতে আমার মায়ের জন্য কিনে আনা জিওনিল খেয়েছি। এর পেছনে অন্য আর কোনও কারণ নেই।”
তবে আটটি ঘুমের বড়ি খেয়েই এত অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “ডাক্তাররা বলছেন, ওষুধের মেয়াদ হয়তো শেষ হয়ে গিয়েছিল। এই কারণে ওষুধের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।”
ওষুধগুলো প্রায় দেড় বছর পুরাতন বলে জানান ন্যান্সি।
ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় ন্যান্সি জ্ঞান হারালে তার দুই ভাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রথমে নেত্রকোণা, পরে ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ময়মনসিংহ মেডিকেলের চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে সে রাতেই ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ন্যান্সি বলেন, “নেত্রকোণা হাসপাতালে নেওয়ার পর, কেউ খবর ছড়িয়ে দেয় আমি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছি। এই খবর শুনে জায়েদ আমাকে ময়মনসিংহে নিয়ে আসতে বলে। ময়মনসিংহের চিকিৎসকরা একটি ‘অ্যান্টি-ড্রাগস’ নিতে বলে। কিন্তু সেটা ঢাকায় পাওয়া যায়। আর হাসপাতালে সাংবাদিক ও পুলিশের আনাগোনায় আমাকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেয় তারা।”
নেত্রকোণা হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্স সুফিয়া জেসমিন ১৬ অগাস্ট বলেন, ন্যান্সি দু দফায় ৬০টি ট্যাবলেট খেয়েছেন। কিন্তু ন্যান্সির দাবি তিনি সর্বোচ্চ ৮টি ঘুমের বড়ি খেয়েছেন। তিনি বলেন, “৬০টি ট্যাবলেট খেলে কী আমার পাকস্থলী ‘ওয়াশ’ করতে হতো না?”
ন্যান্সি দাবি করেন তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে মিথ্যা ও বানোয়াট খবর প্রকাশ করা হয়েছে, “আমার ‘আত্মহত্যা’ নিয়ে নানা পত্রিকা নানা কথা বলেছে। কিন্তু আমি যদি বাবার দ্বিতীয় বিয়ের কারণে আত্মহত্যা করতে চাই, সেটা আমার আরও আগে করা উচিৎ ছিল। কারণ আমার বাবা ১৪ বছর আগে বিয়ে করেছেন। সে সময় আমার মা বেঁচে ছিল।”
“দ্বিতীয়ত, আমার সঙ্গে জায়েদের কোনও মনোমালিন্য হয়নি। যদি হয়েই থাকে তবে সেটা কোন সংসারে হয় না বলুন?”
“তৃতীয়ত, আমার উপার্জন ও শিল্পীজীবন নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে শাশুড়ি ও জায়েদের সঙ্গে কোনও প্রকারের ঝামেলা হয়নি।”
“হাসপাতাল থেকে বাসায় এসে ফোনে শাশুড়ির সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, তাকে ও আমাকে জড়িয়ে নানা কথা বলছে পত্রিকাগুলো। আমি শাশুড়িকে বললাম, মা আপনাদের টাকা দেই না? আপনারা সে টাকা নেন না? এটা বলার পেছনে আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে– আমার শাশুড়ি বা জায়েদ আমার উপার্জিত টাকা নিলেও তা আমার দুই মেয়ের জন্যেই থেকে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “যে শাশুড়ি তার ছেলের জন্য তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বেছে নেয় তাকে তো অনেক কিছুই সহ্য করতে হবে। আর আমার মা নেই, তাই তিনিই আমার মা।”
“আর আমি তো মানুষ না সবার আগে আমি হচ্ছি সেলিব্রিটি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি কী আমার প্রথম বিয়ের তালাকের খবর সাংবাদিকদের দেইনি? আমার মেয়ে হওয়ার খবরও কী তাদের নিজে জানাইনি? তাহলে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর আমাকে নিয়ে অসত্য সংবাদ প্রচার করবে কেন?”
ন্যান্সি প্রায় দেড় বছর হলো জায়েদের সঙ্গে সংসার করছেন, তাদের সন্তান নায়লার বয়স ৮ মাস। জায়েদ ময়মনসিংহ পৌরসভায় কর্মরত, ময়মনসিংহেই তাদের নিজস্ব বাড়ি। প্রথম স্বামীর সঙ্গে ন্যান্সির আরেকটি মেয়ে রয়েছে।
ন্যান্সি জানান, আপাতত কিছুদিন বিশ্রামে থাকবেন তিনি। আগামী দুমাসের মধ্যে ঢাকা ছাড়ার পরিকল্পনাও করছেন।